ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

রিমাল যে ক্ষত পুনরুন্মোচিত করিল

রিমাল যে ক্ষত পুনরুন্মোচিত করিল

প্রতীকী ছবি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৪ | ০০:১৮

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাগেরহাটের মোংলাসহ সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের মানুষের অসহায়ত্ব সম্পর্কে শনিবার সমকালে যে চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সেখানে বলা হইয়াছে, রিমাল উপকূলীয় মোংলার সুন্দরবনের আশপাশের গ্রামের পরতে পরতে রাখিয়া গিয়াছে ভয়াল চিহ্ন; বাড়িতে বাড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ। সমুদ্র ঘিরিয়া যাহাদের জীবন-জীবিকা, তাহাদের কাহারও গিয়াছে জাল, কাহারও নৌকা। আম্পান, ইয়াস ও আইলার ন্যায় পূর্ববর্তী ঘূর্ণিঝড়সমূহে মৎস্য ঘের ভাসিয়া যাওয়ায় বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে যাহারা পড়িয়াছিলেন, এবারও পানিতে ভাসিয়া গিয়াছে তাহাদের মাছ। চিংড়ির ঘেরগুলিতে থইথই পানি, যেন প্রবহমান বিশাল নদী। তবে অধিকতর উদ্বেগজনক হইল, রিমালের উথালপাতাল থাবায় যাহাদের জীবিকা লন্ডভন্ড, সাগরে হারাইয়া যাওয়া সাম্পানের মতোই তাহাদের জীবনে নামিয়া আসিয়াছে ঘোর অমানিশা–দাদনের খড়্গ। ঋণ চুকাইয়া ক্ষতির খতিয়ান কতটা দীর্ঘ হইবে, তাহা লইয়াই পেরেশান জেলে ও কৃষকেরা। সুন্দরবনে মৎস্য ধরিবারকালে ঘূর্ণিঝড়ে আটকে পড়া মোংলা পৌরসভার ডোবা বস্তির বাসিন্দা মানিক চন্দ্র দাসের ভাষায়, ‘ভাত খাইতে পারছি না। মহাজন বলে, ট্যাকা দেও, ট্যাকা দেও।’ বলাবাহুল্য, প্রতিবেদনে মোংলা অঞ্চলের কথা বলা হইলেও এই বাস্তবতা গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়িয়া–যে অঞ্চলে গত রবিবার বিকেল হইতে বিশেষত সোমবার অবধি রিমাল তাণ্ডব চালাইয়াছে।

জীবিকা হারানোর চাইতেও দাদনের জাল ছিন্ন করিবার কৌশল খুঁজিয়া পেরেশান বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলের বনজীবী কিংবা মৎস্যজীবীদের জন্য এক নির্মম বাস্তবতা। তাহাদের উপার্জনের সিংহভাগ যে স্বাভাবিক সময়েই নিছক সুদ হিসেবে মহাজনের পকেটে যায়, উহা আমরা জানি। কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও হিংস্র প্রাণীর ভয় উপেক্ষা করিতে সক্ষম হইলেও মহাজনের জাল ছিন্ন করা তাহাদের অনেকের পক্ষে অসম্ভব। মহাজনি ঋণের চক্রবৃদ্ধির দুষ্টচক্র সম্পর্কেও আমরা অবগত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হইল, বৎসরের পর বৎসর, দুর্যোগের দুর্যোগে এই ক্ষত বারংবার স্পষ্ট হইলেও উহার প্রতিকার অদ্যাবধি সোনার হরিণ। অথচ দেশে এই প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকারি-বেসরকারি স্কিমের অভাব নাই। কোনো এক জাদুবলে রাজার ভান্ডারে যেমন কাঙালের ধন চলিয়া যায়, তেমনি ব্যবস্থার দুর্বলতার পাশাপাশি উপযুক্ত তদারকির অভাবও প্রান্তিক মানুষদের আর্থিক মুক্তির প্রকল্পের উপকারভোগী হয় সচ্ছল মানুষেরা।

এইদিকে, এমন পরিস্থিতিতেই, গোদের উপর বিষফোড়ার ন্যায় গতকাল হইতে নদী-খালে মাছ এবং বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাসের জন্য বন্ধ হইতেছে সুন্দরবনের দুয়ার। আমাদের প্রত্যাশা, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলে রিমালে বিপর্যস্ত প্রান্তিক মানুষদের এই দুর্গতি অনুধাবন করিবেন। পরিবারগুলির ভরণপোষণ তো বটেই, প্রয়োজনে ঋণ মওকুফেরও উদ্যোগ নিবেন। একই সঙ্গে উপকূলীয় বনজীবী ও মৎস্যজীবী পরিবারগুলিকে দাদনের জাল হইতে স্থায়ী মুক্তিরও ব্যবস্থা করিবেন। 

আরও পড়ুন

×