রিমাল

‘ঝড়ে গাছ ভাইঙ্গা মোর ঘরে পড়ে। স্যারে গো ধারে ভাঙ্গা ঘরের ছবি দিছি। মনে করছিলাম, তারা ঘর দেবে। কিন্তু ঘর আর পাই নাই। এখন বউ-পোলাপান নিয়া পাশেই ভাইয়ের ভাঙ্গা ঘরে থাকি।’ কথাগুলো বলেন ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ইন্দুরকানী উপজেলার ইন্দুরকানী গ্রামের দিনমজুর জামাল হোসেন।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ৯৫২টি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩৪৩ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে আর্থিক ক্ষতি ২২৮ কোটি ১২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।

বরগুনার আমতলী উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বরাদ্দের ঘোষণা দিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান এমপি। গতকাল বুধবার উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ আয়োজিত দুটি মতবিনিময় সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি।

স্বামী নেই। দুই নাতি-নাতনি নিয়ে দোতলা টিনের ঘরে থাকেন। পরিবারে অভাব-অনটন লেগেই আছে। ছেলেরা ঢাকায় কাজ করে যা পাঠায় তা দিয়ে কোনোরকমে দুই বেলা খাবার জোটে। এখন সেটিও জোটাতে কষ্ট হচ্ছে। সেখানে নতুন করে ঘর তৈরি করা একেবারেই অসম্ভব

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর যেসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ভোলার মনপুরা দ্বীপ। জলোচ্ছ্বাসে মনপুরায় ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, সবজির ক্ষেত ও পাকা-কাঁচা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভেসে যায় শত শত পুকুর ও ঘেরের মাছ। রিমাল তাণ্ডবের পর ১০ দিন কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি নতুন করে দাঁড় করাতে পারেনি মনপুরার দুর্গম চরাঞ্চলের শতাধিক পরিবার। ফলে এখনও অনেক পরিবারের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে।

‘ঘরডা উড়াইয়া লইয়া গেছে, রান্নার চুলাও ভাইস্যা গেছে। আল্লায় মোগো জানডা বাঁচাইয়া রাখছে। ঘরডা বানাইতে না পারলে স্বামী-পোলাপান লইয়া কোথায় থাকমু? ঘরে নাই কোনো খাওন। পাঁচ দিন ধইরা খাইয়া-না খাইয়া থাকলেও মেম্বর-চেয়ারম্যান, সরকারি স্যাররা ধারেও আয় নাই।’ আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন মধ্য ইন্দুরকানী গ্রামের দিনমজুর আনসারের স্ত্রী রওশনারা বেগম।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে দেশের ২০টি জেলার খসড়া হিসাবে ৬ হাজার ৮৮০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বাগেরহাটের মোংলাসহ সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহের মানুষের অসহায়ত্ব সম্পর্কে শনিবার সমকালে যে চিত্র উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। সেখানে বলা হইয়াছে, রিমাল উপকূলীয় মোংলার সুন্দরবনের আশপাশের গ্রামের পরতে পরতে রাখিয়া গিয়াছে ভয়াল চিহ্ন; বাড়িতে বাড়িতে ধ্বংসযজ্ঞ।

খুলনার কয়রার দশহালিয়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ অবশেষে মেরামত করা হয়েছে। শনিবার সকালে এলাকার তিন শতাধিক মানুষ বাঁধটি মেরামতে অংশ নেন।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবনের বিভিন্ন চর থেকে আরও ৩১টি হরিণের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (৩১ মে) মরদেহগুলো উদ্ধার করে মাটিচাপা দিয়েছেন বনরক্ষীরা।