১০ দিনেও বিধ্বস্ত ঘর তুলতে পারেনি শতাধিক পরিবার
মনপুরায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব

ছবি: ফাইল
নাসির লিটন, মনপুরা (ভোলা) থেকে
প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৪ | ০২:৫৭
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর যেসব এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ভোলার মনপুরা দ্বীপ। জলোচ্ছ্বাসে মনপুরায় ঘরবাড়ি, বেড়িবাঁধ, সবজির ক্ষেত ও পাকা-কাঁচা রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়। ভেসে যায় শত শত পুকুর ও ঘেরের মাছ। রিমাল তাণ্ডবের পর ১০ দিন কেটে গেলেও এখন পর্যন্ত বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি নতুন করে দাঁড় করাতে পারেনি মনপুরার দুর্গম চরাঞ্চলের শতাধিক পরিবার। ফলে এখনও অনেক পরিবারের দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে।
মনপুরার কলাতলীর চরের গোলখাল এলাকার আনোয়ারা বেগম জানান, গবাদি পশু লালন পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তাঁর স্বামী মো. ইসলাম। গত ২৭ মে মেঘনার ঢলে গরু-ছাগল, ঘরবাড়ি সব হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব। এর পর ১০ দিন পার হলেও প্রশাসন বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কেউ তাদের খোঁজ নেননি।
আনোয়ারার প্রতিবেশী মো. তৌহিদের টিনের ঘর ভেঙেচুরে পড়ে আছে গত ১০ দিন ধরে। ভেসে গেছে ভিটের মাটিসহ আসবাব। ফলে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিধ্বস্ত ঘরেই দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তৌহিদ জানান, মেঘনায় মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ নতুন করে ঘর তোলার সামর্থ্য নেই তাঁর। গত ১০ দিনের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাঁড়ি-পাতিলের অভাবে রান্না করতে পারেননি। ঝড়ে তাঁর চারটি গরু ও তিনটি ছাগল মারা গেছে, যা ছিল তাঁর পরিবারের বিপদের শেষ ভরসা।
একই অবস্থা পাশেই বসবাসকারী আরেক মৎস্যজীবী মো. মাইনুদ্দিনের। ঘর চাপা পড়ে তাঁর চারটি গরু মারা গেছে। ২৭ মের পর থেকে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাঁর পাঁচ সদস্যের পরিবারের। মাইনুদ্দিন অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারসহ প্রশাসনের সবাই উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। তাদের মতো সর্বহারাদের খবর নেওয়ার সময় নেই কারও।
জানা গেছে, ঝড়ের পর ১০ দিনেও মনপুরার বিভিন্ন চরাঞ্চলের শতাধিক পরিবার তাদের ঘরবাড়ি ঠিক করতে পারেনি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দিলেও অনেকেই হাঁড়ি-পাতিলের অভাবে রান্না করতে পারছেন না।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে না থাকার বিষয়টি এড়িয়ে যান কলাতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন হাওলাদার। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে গৃহ নির্মাণসামগ্রী দেওয়ার দাবি জানান প্রশাসনের কাছে।