সহায়তা পায়নি রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো পরিবার

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরের পাশে ইন্দুরকানী উপজেলার ইন্দুরকানী গ্রামের দিনমজুর জামাল হোসেন
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ জুলাই ২০২৪ | ২০:২৫
‘ঝড়ে গাছ ভাইঙ্গা মোর ঘরে পড়ে। স্যারে গো ধারে ভাঙ্গা ঘরের ছবি দিছি। মনে করছিলাম, তারা ঘর দেবে। কিন্তু ঘর আর পাই নাই। এখন বউ-পোলাপান নিয়া পাশেই ভাইয়ের ভাঙ্গা ঘরে থাকি।’ কথাগুলো বলেন ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ইন্দুরকানী উপজেলার ইন্দুরকানী গ্রামের দিনমজুর জামাল হোসেন।
একইভাবে আক্ষেপ করেন দক্ষিণ ইন্দুরকানী গ্রামের এনায়েত গাজী। ঝড়ে ঘর ভেঙে যাওয়ার পর স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে পাশেই পলিথিনের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। এনায়েত গাজীও তাঁর ভাঙা ঘরের ছবিসহ আবেদন জমা দিয়েছেন। ঘর জোটেনি তাঁর কপালেও।
শুধু জামাল হোসেন বা এনায়েত গাজী নন, রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার দেড় হাজারের বেশি বাসিন্দা ঘর নির্মাণের জন্য কোনো সহায়তা পাননি। বসতবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়া মানুষের পাশে জনপ্রতিনিধিরা তেমনভাবে দাঁড়াননি বলে আক্ষেপ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবার। আর্থিক সহায়তা চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করলেও তেমন সাড়া মেলেনি। তবে রিমালের দেড় মাস পর মাত্র ১০০ জনকে এক বান টিন আর পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন, যা দিয়ে পুরো ঘর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন অনেকে।
উপজেলার উমেদপুর গ্রামের বিধবা জোহরা বেগম (৭৫) বলেন, ‘মোর ঘরডা বইন্যা লইয়া গেছে। মেলা দিন পর খালি এক বান টিন আর পাঁচ হাজার টাহা পাইছি। তা দিয়া কীভাবে ঘর বানামু।’
ইন্দুরকানী গ্রামের আবদুর রহিমের স্ত্রী শেফালী বেগম জানান, মোর স্বামী খোঁজ রাহে না। ঝড়ে ঘরডাও ভাইঙ্গা গেছে। কয়েক দিন আগে এক বান টিন আর পাঁচ হাজার টাকা পাইছি। এ টাকা দিয়ে ঘর হইবে না।’
বালিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন বয়াতি বলেন, রিমালে আমার ইউনিয়নসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ ও বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে তুলনায় সহায়তা একেবারে নগণ্য। বেশির ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সহায়তা পায়নি। তাদের জন্য বরাদ্দের দাবি জানান তিনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে একশ পরিবারকে ঘর মেরামতের জন্য এক বান টিন ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। পরে বরাদ্দ পেলে সবাইকে দেওয়া হবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল আহসান গাজী জানান, রিমালে উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঘরভাঙা পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে একশ পরিবারকে ঘর মেরামতের জন্য এক বান টিন ও পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ এলে পর্যায়ক্রমে অন্যদেরও দেওয়া হবে।
- বিষয় :
- ঘূর্ণিঝড়
- রিমাল
- পিরোজপুর
- ইন্দুরকানী