সরকারি ওয়েবসাইটে জুয়ার বিজ্ঞাপন!

প্রতীকী ছবি
সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪ | ০০:৪৬ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ | ১১:৫০
সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়া প্রচারের বিষয়টি বিস্ময়কর ও হতাশাজনক। গত বৎসরের জুলাইয়ে হাইকোর্ট যথায় জুয়ার বিজ্ঞাপন দৃশ্যমান এমন সকল ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশ দিয়াছেন, তথায় খোদ সরকারি ওয়েবসাইটেই এহেন বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হইতেছে! বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসির প্রতি এইরূপ নির্দেশনা দেওয়া হইলেও সংস্থাটি উহা করিতে যে ব্যর্থ– এই ঘটনাই তাহার প্রমাণ। আমরা জানি, দেশে জুয়া নিষিদ্ধ হইলেও সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার হইতেছে কোনো বিঘ্ন ব্যতিরেকে। এমনকি জুয়ার অর্থের লেনদেন হইতেছে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলির পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে। যদিও আদালত বাংলাদেশ ব্যাংককে এই সকল লেনদেন বন্ধের জন্যও নির্দেশনা দিয়াছিলেন। এই সকল নির্দেশনা কতটা উপেক্ষিত– সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার প্রচারই উহার প্রমাণ।
সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে খুব সামান্য প্রচার হইয়াছে, এমন নহে। সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, গবেষণা সংস্থা ‘ডিসমিসল্যাব’ সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কয়েক সহস্র জুয়ার পেজের সন্ধান পাইয়াছে। এত দিন বিপুল সংখ্যক ওয়েবসাইটে এমন প্রচারণা চলিলেও সংশ্লিষ্টরা কি নিদ্রামগ্ন ছিলেন? স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ওয়েবসাইট এমনকি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষক বাতায়নের ওয়েবসাইটেও জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার হইল কীরূপে?
সমকালকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব বলিয়াছেন, কোনো স্প্যামার বা হ্যাকাররা এটি করিতে পারে; সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রোগ্রামার বা অন্যদের করিবার কথা নহে। উহারা ইহার সঙ্গে যুক্ত না থাকিলেও ওয়েবসাইট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে যাহারা ন্যস্ত, তাহাদের অবহেলার বিষয় কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাইবে না। এই আশঙ্কাও অমূলক হইতে পারে না– ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থে কেহ সরকারি ওয়েবসাইটে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ করিয়া দিয়াছেন। যাহাই হউক, দায়িত্বপ্রাপ্তদের জবাবদিহি করিতেই হইবে। হইতে পারে, অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইটগুলিকে অধিক মানুষের নিকট পৌঁছাইবার কৌশলরূপে সংশ্লিষ্টরা সরকারি ওয়েবসাইটগুলিকে নিশানা করিয়াছে। কিন্তু তাহাদের বিপরীতে সরকারি ব্যবস্থাপনা কতটা ভঙ্গুর– এই ঘটনাই উহার প্রমাণ। এমনকি সরকারি ওয়েবসাইটগুলির নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা নাজুক, গত বৎসর বিপুল সংখ্যক নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হইবার মধ্য দিয়া উহা প্রমাণ হইয়াছিল।
আমরা মনে করি, সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তর তো বটেই, বিটিআরসি দায়িত্ব উপেক্ষা করিতে পারে না। সমকালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে আমরা দেখিয়াছি, সারাদেশে অনলাইন জুয়া ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত এবং হুন্ডির মাধ্যমে উহার অর্থ বিদেশে পাচার হইতেছে। তজ্জন্য আমরা চাহি, সরকারি ওয়েবসাইটে ঐ সকল বিজ্ঞাপন কীভাবে প্রচার হইল, তদন্ত কমিটি গঠন করিয়া অপরাধী কিংবা দায়িত্বে অবহেলাকারীদের শাস্তি দেওয়া হউক। স্মরণ রাখিতে হইবে, সরকারি ওয়েবসাইটের এহেন দুর্বলতা দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকিস্বরূপ। ঐগুলি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্তরা কি উল্লিখিত ব্যাপারে সচেতন?