ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

শতভাগ বিদ্যুতায়ন

এখন প্রয়োজন সদ্ব্যবহার ও সাশ্রয়

এখন প্রয়োজন সদ্ব্যবহার ও সাশ্রয়

সম্পাদকীয়

প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১২:০০

বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত মোট ৭৭৯ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে উদযাপনযোগ্য। আমাদের মনে আছে, চলতি মাসের শুরুতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন, এরই মধ্যে দেশের ৯৯ দশমিক ৫ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হয়েছে। আমরাও দেখেছি, ইতোমধ্যে প্রমত্ত নদীর মধ্য দিয়ে চরাঞ্চলে যেমন, তেমনই সাগরের তলদেশে সাবমেরিন কেবল স্থাপন করে দ্বীপাঞ্চলেও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। রোববার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন পাঁচটি বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন সেই ধারাবাহিকতারই অংশ। বস্তুত আগেও প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছিলেন- মুজিববর্ষ ঘিরেই দেশের সব এলাকা বিদ্যুতায়নের আওতায় আনা হবে।

গত বছর মার্চ মাসেই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারক এবং বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রীও সম্প্রতি সংসদে জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতের চাহিদা বিবেচনা করে ২০২১ সালের মধ্যে নির্ধারিত ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন এরই মধ্যে ক্যাপটিভ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এও জানি, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার টানা তিন মেয়াদের প্রথম থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে এসেছে। অথচ 'ফাইভ ডিজিট' উৎপাদনে পৌঁছার কথা মাত্র এক দশক আগেও ভাবা যেত না। বিশেষত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার মেগাওয়াটও ছুঁতে পারেনি। বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে আবাসন ব্যবসা এবং শিল্প স্থাপনেও এসেছিল স্থবিরতা। গ্রামীণ জনপদেও বিদ্যুতের অভাবে চাষাবাদ বিঘ্নিত হতে দেখা গেছে। কিছু সমালোচনা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ খাতে সম্পূর্ণতা অর্জনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বর্তমান সরকার 'কুইক রেন্টাল' ও প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির মতো উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি।

আমরা এসব উদ্যোগ ও উদ্ভাবনকে নিশ্চয়ই স্বাগত জানাই। কারণ, বিদ্যুতায়নের সঙ্গে উন্নয়ন ও উৎপাদনের সম্পর্ক চিরন্তন। বিদ্যুৎ উৎপাদন যত বাড়তে থাকে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাব তত বাড়তে থাকে। এও মনে রাখতে হবে, আমরা উন্নত দেশে উত্তরণের যে স্বপ্ন দেখছি, তা বাস্তবায়নে শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বিদ্যুতের সদ্ব্যবহার ও সাশ্রয়েও মনোযোগী হতে হবে। রোববার নতুন পাঁচ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করতে গিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীও একটি তাগিদ দিয়েছেন বলে সমকাল অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনসূত্রে জানা যাচ্ছে। তিনি যথার্থই বলেছেন, সাশ্রয়ী হলে আরও অনেক বেশি গ্রাহক আরও বেশি মাত্রায় বিদ্যুৎ পাবে। আমরা বলতে চাই, বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও উন্নয়নেও যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে। এ দুই ক্ষেত্রে যতখানি মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল, সংশ্নিষ্টরা সম্ভবত তা দিতে পারেনি।

আমরা আশার মধ্যেও হতাশার সঙ্গে দেখেছি, বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক হারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হলেও সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের সক্ষমতা না বাড়ায় গ্রাহকদের কাছে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌঁছানো যাচ্ছে না। আমরা দেখতে চাইব, শতভাগ বিদ্যুতায়নের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতায়নেও নিতে হবে জোর পদক্ষেপ। এতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কেবল নয়, এই উন্নয়ন পরিবেশবান্ধব ও টেকসই হয়ে উঠবে। মনে রাখতে হবে, বর্তমানে প্রত্যন্ত এলাকাতে সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারিত হলেও বায়ু ও জলবিদ্যুতের ক্ষেত্রে আমরা রয়েছি অনেক পিছিয়ে। আগামী দিনগুলোতে এদিকে জোর দেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির যে লক্ষ্যমাত্রা আমরা নির্ধারণ করেছিলাম, ২০১৫ সালের মধ্যে তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এটাকে ১০ শতাংশে নিতে হলে যেতে হবে আরও অনেকটা পথ। সব পক্ষ আন্তরিক হলে তা দূরের বাদ্য বলে বিবেচিত হতে পারে না।

আরও পড়ুন

×