অভিশপ্ত লখিন্দর থেকে নায়ক রাজ্জাকের দ্যুতিময় উত্থান

২০১৭ সালের ২১ আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন নায়করাজ রাজ্জাক
অনুপম হায়াৎ
প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২২ | ০১:০৭ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২ | ০১:১৩
আজ নায়করাজ রাজ্জাকের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৭ সালের আজকের এই দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি। বরেণ্য এই নায়কের জীবদ্দশায় তাঁকে নিয়ে চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব অনুপম হায়াতের তথ্যবহুল একটি লেখা সমকালে প্রকাশিত হয়। আজকের দিনে সেই লেখাটি আবারও প্রকাশ করা হলো।
দেশ বিভাগের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই ১৯৬৪ সালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এ দাঙ্গার সময় উন্মুল উদ্বাস্তু হয়ে স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে নিয়ে ঢাকায় আসেন কলকাতার নাটক ও চিত্রজগতের এক ব্যর্থ তরুণ। সেদিনকার উদ্বাস্তু-কপর্দকহীন তরুণই পরে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের চিত্রজগতের কিংবদন্তির নায়ক, সুপারস্টার রাজ্জাক। তারকালোকে রাজ্জাকের দ্যুতিময় উত্থান এক্সট্রা থেকে সুপারস্টার হওয়া, প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বে পরিণত হওয়ার পেছনে রয়েছে তার উচ্চাকাক্সক্ষা, সংগ্রাম, ধৈর্য ও কর্মনিষ্ঠা।
‘আমার জীবনটাই একটা নভেল ...’ অভিনেতা-প্রযোজক-পরিবেশক-পরিচালক রাজ্জাক নিজের জীবন সম্পর্কে বলতে গিয়ে এ মন্তব্য করেছিলেন ১৯৮২ সালের একদিন। তাকে নিয়ে একটি বিশেষ রচনা প্রস্তুত করার দায়িত্ব পেয়েছিলাম আমি ওই সময়টায়। সেই সূত্রেই ওই বছরের এপ্রিল-আগস্টে রাজ্জাকের সঙ্গে ৭-৮ বার দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে মিলিত হই। ওই সাক্ষাৎকারের সময় রাজ্জাক প্রকাশ করেছিলেন তার ঘটনাবহুল জীবনের অনেক তথ্য : কলকাতায় শৈশব-কৈশোর, নাটক-ছবিতে অভিনয় থেকে ’৬৪ সালের দাঙ্গার সময় ঢাকায় আগমন এবং প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম পর্যন্ত অনেক কাহিনী। তিনি তখন আরও জানিয়েছিলেন ভবিষ্যতে আত্মজীবনী লিখবেন বলে।
নাগতলা রোডের এতিম : ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়। কলকাতার ৮ নম্বর নাগতলা রোডের বাড়িতে জন্ম নিল একটি শিশু। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম এ শিশুটিই পরে বাংলাদেশের চিত্রজগতে প্রথম পুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান।
দাদা চিমাই মোল্লা দুই বিয়ে করেছিলেন। তার অবস্থা ছিল সচ্ছল। চিমাই মোল্লার ছেলে আকবর হোসেন, তার স্ত্রীর নাম মেহেরুন্নেসা। আকবর মেহেরের কোল আলো করে আসা নতুন শিশু রাজ্জাক দিনে দিনে বড় হতে থাকে যুদ্ধের ধ্বংসলীলা মন্বন্তরের ধ্বংসস্তূপ, দেশ বিভাগের উন্মাদনার মধ্যে।
বাবা আকবর হোসেন একজন আধা জমিদার। কলকাতা শহরে অনেক জমি তার। ২৪ পরগনার বোরাল গ্রামে ছিল একটি বাড়ি। ওই গ্রামে আকবর হোসেন প্রায়ই যেতেন বিনোদনের জন্য, প্রজাদের মাঝে মিলিত হওয়ার জন্য। ওখানে বছরে তিনবার যাত্রার আসর বসত তার উদযোগে। রাজ্জাকের বড় ভাই আবদুস শুকুর ভালো গান গাইতেন। এক মামাও গাইতেন ভালো গজল। এভাবেই রাজ্জাক শৈশবে একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশ পান।
‘আমি প্রথম ছবি দেখি মা-বাবার সঙ্গে। তবে ছবির নামটা মনে নেই। দ্বিতয়বারও ছবি দেখি তাদের সঙ্গেই। ওই ছবির নামটা মনে আছে- ‘মানে না মানা’। মনে আছে ছবির একটি গানও- ‘ভুল করে তুই ঝাঁপ দিলিরে প্রেম যমুনায়...’। জানান রাজ্জাক।
রাজ্জাক খানপুর হাইস্কুলে ভর্তি হন চতুর্থ শ্রেণীতে। এর আগে তিনি বাড়িতেই শিক্ষকের কাছে সাধারণ শিক্ষা নেন। সেই সঙ্গে রোজা-নামাজও শেখেন।
এভাবেই এগোচ্ছিল কিশোর রাজ্জাকের জীবনের পথ। কিন্তু হরিষে বিষাদ। ১৯৫০-’৫১ সাল হবে। একদিন হঠাৎ মারা গেলেন পিতা আকবর হোসেন। ৮-৯ বছরের কিশোর রাজ্জাক এ শোক সামলাতে না সামলাতেই মাত্র ৮ মাস পর মাকেও হারান। এতিম কিশোর রাজ্জাকের আশ্রয় তখন বড় দুই ভাই ও এক বোনের কাছে।
রাজ্জাক বললেন, ‘এত অল্প বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে খুবই দুঃখ পেলাম। মা-বাবার শাসন নেই, আদর-সোহাগ নেই, কাজেই উচ্ছৃংখল হয়ে উঠলাম কিছুটা। অভিনয় খেলাধুলা নিয়ে মেতে উঠলাম।’
মঞ্চে ‘বিদ্রোহী’ কিশোর : খানপুর হাই স্কুলের বার্ষিক নাটক হবে। স্কুলের ছাত্ররাই এতে অভিনয় করবে। এগিয়ে আসে দুরন্ত কিশোর রাজ্জাকও অভিনয়ের জন্য। নাটকের নাম ‘বিদ্রোহী’। পরিচালক রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জি। ওই নাটকের গ্রামের সমাজকর্মী ছেলের চিরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক। তখন তিনি ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। সেটা ১৯৫২ কি ’৫৩ সালের কথা। ওই নাটক মঞ্চায়নের দিন প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন বিশিষ্ট অভিনেতা ছবি বিশ্বাস।
স্কুলের পাশেই ছিল ছবি বিশ্বাস, মঞ্জু দে, অভি ভট্টাচার্য, অপরেশ লাহিড়ী প্রমুখ অভিনেতা-অভিনেত্রী, সঙ্গীতশিল্পীদের বাসা। অপরেশ ও বাঁশরী লাহিড়ীর ছেলে বাম্পী লাহিড়ী ওই স্কুলেই পড়তেন। এরপর একে একে আরও অনেক নাটকে অভিনয় করেন কিশোর রাজ্জাক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমলের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি অনেক প্রশংসা পান। ওই নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন রণজিৎ কুমার চৌধুরী (খুলনার শিমুলিয়া গ্রামের জমিদার পুত্র)। শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পের নাট্যরূপে আমিনার চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয় করে রাজ্জাক আরেক ধাপ এগিয়ে যান। নাট্যকার পীযূষ বসু কিশোর রাজ্জাককে উৎসাহ দেন নানাভাবে। তার পরিচালিত ‘রূপকথা’ নাটকে রাজ্জাক অভিনয় করে সকলের নজরে পড়নে। শুধু অভিনয় নয়, আবৃত্তি চর্চাও করতেন কিশোর রাজ্জাক। আর গান? গান শোনা ছিল তার খুব শখের বিষয়। খেলা, বিশেষ করে ফুটবল ছিল তার অতিপ্রিয়। তিনি ছিলেন দক্ষিণ কলকাতা আন্তঃস্কুল ফুটবল দলের সেরা খেলোয়াড়। ফুটবল খেলতে গিয়ে একবার তিনি বুকে প্রচণ্ড আঘাতও পেয়েছিলেন।
দিন আসে দিন যায়। বয়স বাড়ে কিশোর রাজ্জাকের। সেই সঙ্গে বাড়ে স্বপ্ন এবং প্রতিভাও। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি নাটক পরিচালনা করেন। স্ত্রী ভূমিকাবর্জিত ‘বিদ্রোহী’ নাটক পরিচালনাসহ অভিনয়ও করেন তিনি এতে।
নাট্যকার পীষূষ বসু ডাকেন তাকে রঙ্গসভা নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেয়ার জন্য। ওই গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ছবি বিশ্বাস, সন্ধ্যারায়, বলাই সেন, দিলীপ চক্রবর্তী, রসরাজ চক্রবর্তী প্রমুখ। গ্রুপের নাটক ‘মৌচোর’-এ রাজ্জাক অভিনয় করেন (সলিল সেন রচিত এই নাটকটি পরে রাজ্জাক চিত্রায়িত করেন ঢাকায়। ‘মিনার্ভা’ থিয়েটারে অভিনীত ‘মৌচোর’ নাটকে রাজ্জাকের অভিনয় অকুণ্ঠ প্রশংসা পায়। এ প্রশংসা ও স্বীকৃতি রাজ্জাককে উচ্চাকাক্সক্ষী করে তোলে চিত্রজগতে প্রবেশের। তিনি সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
নার্গিসের প্রেমিক, উত্তমের নকল : ছবিতে অভিনয়ের আগে কিশোর-তরুণ বয়সে রাজ্জাকও ছিলেন অনেক নায়ক-নায়িকার ফ্যান।
তিনি বলেন, “আমি জীবনে অনেক ছবি দেখেছি। এর মধ্যে দিলীপ কুমারের ‘দাগ’ দেখে অভিভূত হই। ওই ছবি দেখার পর আমি তার ফ্যান হয়ে যাই। তার ট্র্যাজিক অভিনয় আমার খুব ভালো লাগত। আমার অভিনয়ের বেলায়ও (পরবর্তী জীবনে) এটা ‘ফিল’ করছি। আর নার্গিসকে সব সময় ভাবতাম মানসী প্রেমিকা হিসেবে। তার অভিনীত ‘আওয়ারা’ আমি ওই সময় তিনবার দেখেছি। ওই ছবিতে ভিলেন যখন রাজকাপুরকে হত্যা করতে যায় তখন আমার সহ্য হতো না। আমি হল ছেড়ে বেরিয়ে যেতাম। উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত ‘বসু পরিবার’ আমার মনে দাগ কাটে। ওই ছবি দেখার পর আমি উত্তম কুমারের ভক্ত হয়ে যাই। উত্তমের সব কিছু- অভিনয়, কথা বলার ঢঙ, চলাফেরার স্টাইল এমনকি চুলের ছাঁটটি পর্যন্ত নকল করতে শুরু করি। এ ছাড়া অভিনেত্রীদের মধ্যে ভালো লাগত সন্ধ্যা রায়কে।”
রুপালি পর্দার ‘পকেটমার’ : রাজ্জাক যখন কলেজের ছাত্র তখন চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পান। ‘রতন লাল বাঙালী’ নামে একটি ছবি হচ্ছিল তখন (১৯৫৮-’৫৯) অজিত ব্যানার্জির পরিচালনায়। ওই ছবির নায়ক আশীষ কুমার ও নায়িকা সন্ধ্যা রায়। রাজ্জাক ওই ছবিতে এক পকেটমারের চরিত্রে অভিনয় করেন। ‘রতনলাল বাঙালী’ মুক্তি পায় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর। রাজ্জাকের দ্বিতীয় ছবি ‘পংক তিলক’ (পরিচালনা মঙ্গল চক্রবর্তী)। ওই ছবিতে তিনি একজন ছাত্র হিসেবে অভিনয় করেন। তৃতীয় ছবি ‘শিলালিপি’তে তিনি অভিনয় করেন গানের দৃশ্যে একস্ট্রা হিসেবে। ওই ছবিতে অভিনয় করে রাজ্জাক পেয়েছিলেন বিশ টাকা সম্মানী।
ছবিতে অভিনয়ের নেশা তাকে দারুণভাবে পেয়ে বসে। তার প্রত্যাশা অনেক। কিন্তু কলকাতার চিত্রপুরী তাকে একস্ট্রার চেয়ে ভালো কোনো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেয় না। তিনি অভিনয় শেখার জন্য বোম্বে যান ১৯৫৯ সালে। সেখানে গিয়ে ভর্তি হন অভিনয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ফিল্মালয়’-এ। ওখানে এক বছরের কোর্স, কিন্তু রাজ্জাক হাঁপিয়ে ওঠেন মাস দু’য়েকের মধ্যেই। তখন ওখানে ক্লাস নিতেন দিলীপ কুমার, শশধর মুখার্জি প্রমুখ। পদ্ধতিগত শিক্ষার প্রতি রাজ্জাকের মন বিষিয়ে ওঠে। তিনি বোম্বের চিত্রজগতে ঢোকার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কিন্তু কাজ হয় না। কাজেই কলকাতার ছেলে রাজ্জাককে ঘরেই ফিরতে হয়।
বোম্বে থেকে ফেরার পর রাজ্জাক আবার মঞ্চ নাটক নিয়ে মেতে ওঠেন। পীযূষ বসু বললেন, ‘নাটক না করলে অভিনয়ের কিছু জানা যাবে না।’ নাটক নিয়ে মেতে থাকলেও রাজ্জাকের স্বপ্ন চিত্রজগতের নায়ক হওয়া। কিন্তু সুযোগ আসে না সহজে। ওই সময় তিনি অজিত চ্যাটার্জি পরিচালিত ‘এতটুকু আশা’ ছবিতে একস্ট্রা হিসেবে আবার অভিনয় করেন।
রাঁচির জঙ্গলে : রাজ্জাকের শৈশব-কৈশোর কেটেছে প্রবল অস্থিরতার মধ্যে। মা-বাবাকে তিনি হারান শৈশবে। এ অবস্থায় অভিনয় আর বাউন্ডুলেপনা হয়ে দাঁড়ায় রাজ্জাকের কাজ। তিনি তিনবার বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে জানান। একবার ১৪ বছর বয়সে, দ্বিতীয়বার ১৭ বছর বযসে ও শেষবার ১৯ বছর বয়সে। এর মধ্যে রাঁচির দুর্গম জঙ্গলে কাটান ৬ মাস।
কিছুদিন তিনি ব্যবসাও করেছেন। কর্মচারী হিসেবে কাজ করেছেন ঊষা কোম্পানিতে, মডেলিংও করেছেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই মন ঠেকাতে পারেননি, অভিনয় ছাড়া।
লক্ষ্মীর আবির্ভাব : কিশোর ও তরুণ বয়সে রাজ্জাক অনেক মেয়েদের কাছেই ছিলেন আকর্ষণীয়। কিন্তু রাজ্জাক হৃদয় দিয়েছিলেন লক্ষ্মী নামের এক মেয়েকে। ১৯ বছর বয়সের সময় লক্ষ্মী আসে রাজ্জাকের জীবনে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ নিয়ে। প্রেমের পরিণতিতে দু’জনের বিয়ে হয় ১৯৬১ সালে। রাজ্জাক বলেন, ‘লক্ষ্মী আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আমি স্থির হতে বাধ্য হই, লক্ষ্মী আমার উচ্ছৃংখল জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটায়। কলকাতার মঞ্চ ও চিত্রজগতে অভিনেতা রাজ্জাক ততটা সুবিধা করতে পারছিলেন না। ঢাকায় ইতিমধ্যেই চিত্রশিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অনেকেই রাজ্জাককে উপদেশ দিলেন ঢাকায় ভাগ্যান্বেষণ করতে। উপদেশদাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পীযূষ বসু। তিনি রাজ্জাক সম্পর্কে একটি প্রশংসাপত্র লিখে দেন। রাজ্জাক ওই প্রশংসাপত্র নিয়ে জন্মস্থান কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ওই সময় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে চলছে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা। পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, আসাম, ত্রিপুরা, থেকে দলে-দলে মুসলমান পাড়ি দিচ্ছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে। রাজ্জাকও স্ত্রী লক্ষ্মী এবং শিশুপুত্র বাপ্পাকে নিয়ে ওই দাঙ্গার সময় ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৬৪ সালের ২৬ এপ্রিল রাজ্জাক ঢাকা পৌঁছেন। বলতে গেলে কপর্দকহীন অবস্থায়। ঢাকায় তার চেনাজানাও কেউ নেই। তিনি শুধু সঙ্গে নিয়ে এসেছেন পীযূষ বসুর চিঠি এবং পরিচালক আবদুল জব্বার খান ও শব্দযন্ত্রী মনিবোসের ঠিকানা। স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে স্টেডিয়ামে শত-শত উদ্ধাস্তুদের ভিড়ে রেখে রাজ্জাক গিয়ে দেখা করেন পরিচালক আবদুল জব্বার খানের সঙ্গে। তিনি রাজ্জাককে আশ্বাস দেন। রাজ্জাক পরে কমলাপুর এলাকায় মাসিক আশি টাকা ভাড়ায় বাসা ঠিক করে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে ওঠেন। উদ্বাস্তু রাজ্জাকের আশ্রয় মিলল ঠিকই কিন্তু জীবিকা অর্জনের কোনো পথ নেই। তিনি দেখা করেন শব্দযন্ত্রী মনিবোসের সঙ্গে। ঘুরে বেড়ান চিত্রপুরীর অফিসে-অফিসে কাজের তাগিদে। দেখা করেন এহতেশাম, মোস্তাফিজ, সুভাষ দত্ত, সৈয়দ আওয়াল প্রমুখের সঙ্গে। কিন্তু ততটা পাত্তা পান না। কিন্তু জীবন থেমে থাকে না। পরিচালক আবদুল জব্বার খান তাকে কাজের সুযোগ করে দেন ‘ইকবাল ফিল্মস’ প্রতিষ্ঠানে। এ প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘উজালা’য় তিনি হন পরিচালক কামাল আহমেদের সহকারী। সহকারী হিসেবে দ্বিতীয় ছবি ‘পরওয়ানায়’ কাজ শুরু করেন। কিন্তু ছবির কাজ শতকরা আশি ভাগ হওয়ার পরই তিনি সহকারীর কাজ ছেড়ে দেন। কাজ ছেড়ে দেয়ার কারণ, তিনি ছবিতে অভিনয় করবেন। এ জন্য শুরু হয় রাজ্জাকের আবার নতুন সংগ্রাম।
ট্যাক্সি ড্রাইভার, বাইজি পাড়ার মাতাল : আপনারা যারা ‘আখেরী স্টেশন’ (১৯৬৫) ছবিটি দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ওই ছবির সহকারী স্টেশন মাস্টারটির কথা। ওই ছোট চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক। ঢাকার ছবিতে ওইটিই রাজ্জাকের প্রথম অভিনয়। এর পর তিনি আরও বেশ ক’টি ছবিতে ছোট-খাটো চরিত্রে অভিনয় করেন। এ সবের মধ্যে রয়েছে ‘কার বউ’-এ বেবিটেক্সি ড্রাইভার, ‘১৩ নম্বর ফেকু ওস্তাগার লেন’-এ পাড়ার ছেলে মিন্টু, ‘ডাকবাবু’-তে কোর্টের কর্মচারী, ‘কাগজের নৌকা’য় বাইজি বাড়ির মাতাল মক্কেল।
রাজ্জাকের স্বপ্ন নায়ক হওয়ার, কিন্তু নির্মাতারা তাকে একস্ট্রা হিসেবে ছবিতে নিতে চান।
ঠিক ওই সময় একদিন পরিচয় হয় পরিচালক জহির রায়হানের সঙ্গে। তিনি তখন ‘বাহানা’ বানাচ্ছিলেন। জহির রায়হান তাকে নির্মিতব্য ‘হাজার বছর ধরে’ ছবির নায়ক নির্বাচন করেন। কিন্তু আশা ভঙ্গ হয় রাজ্জাকের, ছবিটির কাজ আর শুরু হয় না নানা কারণে।
ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি রাজ্জাক মঞ্চনাটকেও অভিনয় করেন। ঢাকায় তার অভিনীত প্রথম নাটক হচ্ছে আবদুস সাত্তারের ‘পাত্রী হরণ’ (১৯৬৫)। ওই সময় তিনি ঢাকা ও কুমিল্লা প্রভৃতি স্থানে প্রায় গোটা পঞ্চাশেক নাটকে অভিনয় করেন বলে রাজ্জাক জানান।
ফার্মগেট থেকে ডি আইটি : রাজ্জাক জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে নিয়ে। কিন্তু ভাগ্য তাকে ফেলে দেয় চরম আর্থিক সংকটে। একদিকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসারের খরচ জোগানো আরেক দিকে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ঢাকায় রাজ্জাকের প্রাথমিক জীবনটাকে বড় দুঃখের আার কষ্টের করে তোলে। সে দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে রাজ্জাক হয়ে যান আপ্লুত, ফেলেন দীর্ঘ নিঃশ্বাস, চোখ পানিতে হয়ে ওঠে ছল-ছল।
তিনি বলেন, ‘আমি তখন ফার্মগেট এলাকায় থাকি। সঙ্গে দুই বাচ্চা। টিভিতে সংবাদ পাঠক হিসেবে কণ্ঠস্বর পরীক্ষা দেয়ার জন্য গেলাম। তখন প্রযোজক জামান আলী খান (অভিনেত্রী রেশমার স্বামী) আমাকে টিভি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দেন। আমি ‘ঘরোয়া’ অনুষ্ঠানে অভিনয় করি। ‘ঘরোয়া’ খুব জনপ্রিয় হয়। আমি পরিচিতি পাই টিভি-দর্শকদের কাছে। সত্যি বলতে কি টিভি আমার ইমেজ গড়ে তোলে। টিভি নাটকে অভিনয় করে সপ্তায় পেতাম ৬০-৬৫ টাকা। আমার মাসিক খরচ তখন ৬০০ টাকা। এ সময়টা আমার জীবনের চরম স্মরণীয় অধ্যায়। অল্প আয়ে সংসারের খরচ চলে না। বাচ্চাদের দুধ জোগাড় করতেই সব টাকা ব্যয় হয়ে যেত। ওই সময় স্বামী-স্ত্রী দু’জন মাঝে-মধ্যে উপোষও করতাম। পয়সার অভাবে ফার্মগেট থেকে ডি আইটি টিভি কেন্দ্রে হেঁটে যাতায়াত করতাম। কিন্তু চিরদিন কারো সমান যায় না। তাই দুঃখের রাতও পোহায়। একদিন ডাক এলো সুদিনের- জহির রায়হানের কাছ থেকে।
অভিশপ্ত লখিন্দর, তারকার উত্থান : ১৯৬৬ সালের ২৮ অক্টোবর জহির রায়হান পরিচালিত পৌরাণিক ছবি ‘বেহুলা’ মুক্তি পায়। ওই ছবি মুক্তির পর দর্শকরা পরিচিত হলেন নতুন নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে। দেখতে অনেকটা উত্তম কুমার ও বিশ্বজিতের মতো, হাসিখুশি, বয়সে তরুণ এ নবাগত নায়ককে দর্শকরা লুফে নেন বেহুলারূপী সুচন্দার বিপরীতে।
‘বেহুলা’ ছবিতে অভিনয় সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে রাজ্জাক বলেন, “জহির রায়হান আমাকে ‘বেহুলা’র নায়ক নির্বাচন করেন। আমার বিপরীতে নায়িকা সুচন্দা। সুচন্দার সঙ্গে আগে আমি অভিনয় করেছি কাজী খালেকের একটি প্রচারচিত্রে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে। আমি ওই ছবিতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে রাজি হলেও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান স্টার ফিল্মসের কর্মকর্তারা ততটা খুশি হননি। কারণ, তখন আমার পরিচয় একস্ট্রা শিল্পী। কিন্তু জহির রায়হান আমাকে রাখার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প ছিলেন। তিনি বলেন, প্রয়োজন হলে ছবি ছেড়ে দেবেন। তবু নায়ক বদলাবেন না। ওই সময়টা আমার জীবনের চরম স্মরণীয়। যাক, শেষ পর্যন্ত ছবির শুটিং শুরু হল সদরঘাট এলাকায়। আমি মেকআপ নিয়ে তিন দিন অপেক্ষা করলাম, কিন্তু আমার আর শুটিং হয় না। জহির রায়হান আমার মেকআপ দেয়া চেহারা পর্যবেক্ষণ করেন। এদিকে আমার মনের অবস্থা খারাপ, এই বুঝি বাদ হয়ে গেলাম! অবশেষে শুটিংয়ের ডাক এলো, প্রথম দিন শুটিং করলাম সুচন্দার সঙ্গে। গানের সিকোয়েন্স : ‘নাচে মন ধিনা ধিনা ধিনা প্রাণেতে বাজে বীণা বাজেরে...।’ (সুর আলতাফ মাহমুদ, কণ্ঠ শাহনাজ বেগম) ওই সিকোয়েন্সের স্থিরচিত্র তোলা হল। জহির ভাই সবগুলোই লুকিয়ে ফেললেন। আমি মনে মনে ভয় পেয়ে গেলাম; বোধহয় পারিনি তার মনের মতো অভিনয় করতে। এরপর স্টার ফিল্মসের কর্মকর্তারা এসে আমাকে অভিনন্দন জানান। কেউ-কেউ আমাকে উত্তম কুমার বিশ্বজিৎ বলেও আখ্যা দেন। জহির ভাই তখন মিটিমিটি হাসছিলেন। দু’দিন লাগল গানের টেক করতে। সিকোয়েন্সটি খুব দ্রুত প্রসেস করা হল। পর্দায় দেখা গেল আমি ভালোই করেছি। ছবিটা শেষ পর্যন্ত মুক্তি পেল, এক হলে রজতজয়ন্তী পালন করল।”
এভাবেই অভিশপ্ত লখিন্দর থেকে দ্যুতিময় উত্থান ঘটল তারকা রাজ্জাকের। এরপর জহির রায়হানের স্ত্রী সুমিতা দেবী শুরু করেন ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবির কাজ। প্রযোজিকা সুমিতা চান ছবির নায়ক হবেন সৈয়দ হাসান ইমাম। এ নিয়ে সুমিতা ও জহির রায়হানের মধ্যে তর্ক হয়। রাজ্জাকের মনের অবস্থা তখন খুব খারাপ। জহির রায়হান পরে রাজ্জাককে নায়ক করে শুরু করেন ‘আনোয়ারা’র কাজ। ইতোমধ্যে রাজ্জাক দামি তারকা হয়ে উঠছেন। স্টার ফিল্ম তার নামে ব্ল্যাংক চেক দিতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত রাজ্জাক ‘আগুন নিয়ে খেলায়’ অভিনয় করেন। এরপর অন্য প্রতিষ্ঠানের ছবি ‘নিশি হলো ভোর’, ‘আবির্ভাব’ ও ‘বাঁশরী’তে রোজ্জাক অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।
তারকা রাজ্জাকের উত্থানের বছর হচ্ছে ১৯৬৬ ‘বেহুলা’র মাধ্যমে। পরের বছর মুক্তি পায় ‘আনোয়ারা’। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে রাজ্জাক অভিনয় করে প্রশংসা পান। ওই বছর মুক্তিপ্রাপ্ত তার ‘আগুন নিয়ে খেলা’ হিট হয়। ১৯৬৮ সালে রাজ্জাকের বিকাশ ঘটে। ওই সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘এতটুকু আশা’ সুপারহিট হয়। দর্শকরা ওই বছরই প্রথম রাজ্জাক-কবরী জুটিকে দেখেন ‘নিশি হলো ভোর’ ও ‘বাঁশরী’ ছবিতে। রাজ্জাক-কবরী জুটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে ১৯৬৯ সালে কাজী জহিরের ‘ময়নামতি’ মুক্তির পর। অনেকে ওই সালকে ‘ময়নামতি’র বছর হিসেবে আখ্যা দেন। রাজ্জাক অভিনীত ‘মনের মতো বউ’, ‘নীল আকাশের নীচে’ ওই বছর হিট হয়।
১৯৭০ রাজ্জাকের জীবনে স্বর্ণ ফসলের বছর। ওই বছর মুক্তি পায় তার রেকর্ডসংখ্যক ছবি- ২৯টি। এর মধ্যে জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ তার জন্য আলাদা পরিচয় এনে দেয়।
রাজ্জাকের নায়িকারা : রাজ্জাক যখন ঢাকার ছবিতে নায়ক হন তখন তার বয়স ছিল ২৮। ‘বেহুলা’ ছবিতে তিনি প্রথম জুটি বাঁধেন সুচন্দার সঙ্গে। এ জুটির ‘আনোয়ারা’, ‘জুলেখা’, ‘দুই ভাই’, ‘মনের মতো বউ’, ‘জীবন থেকে নেয়া’ হিট হয়। রাজ্জাক পরে জুটি বাঁধেন সুজাতার সঙ্গে। সুজাতা-রাজ্জাক জুটির হিট ছবির মধ্যে রয়েছে ‘আগুন নিয়ে খেলা’, ‘এতটুকু আশা’ প্রভৃতি। পরে তিনি কবরী, শাবানা, ববিতার সঙ্গেও জুটি বাঁধেন। কিন্তু এর মধ্যে রাজ্জাক-কবরী জুটি কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছে। পর্দালোকের এ জনপ্রিয় জুটি হয়ে ওঠেন অনেক তরুণ-তরুণীর স্বপ্ললোকের দেব-দেবী। এ জুটি অভিনীত ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরী’, ‘ময়নামতি’, ‘আঁকাবাঁকা’ ‘ক খ গ ঘ’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘আগন্তুক’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘কাঁচকাটা হীরে’, ‘রং বাজ’, ‘অনির্বাণ’, ‘মতি মহল’, ‘গুন্ডা’, ‘বেঈমান’ হিট হয়। কিন্তু ’৭৫-’৭৬ সাল থেকে এ জুটির মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়।
রাজ্জাক-কবরী জুটির প্রেম কাহিনী পর্দার বাইরে গুজব গুঞ্জন যথেষ্ট উচ্চারিত হয়। এ নিয়ে অনেক স্ক্যান্ডাল রটে চিত্রপুরীতে।
এ প্রসঙ্গ তুলতেই রাজ্জাক নীরব হয়ে গেলেন কিছুটা। ভাবলেন কিছুক্ষণ।
: কবরীর সঙ্গে আপনার প্রথম দেখা কীভাবে?
যোগাযোগ : ছবির শুটিংয়ের সময় কবরীকে প্রথম দেখি। তখন ওই ছবির শুটিং হচ্ছিল গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বাসায়।
একসঙ্গে প্রথম অভিনয় করেন কোন ছবিতে?
- আব্দুল জব্বার খান পরিচালিত ‘বাঁশরী’ ছবিতে প্রথম কবরীর সঙ্গে অভিনয় করি।
এরপর রাজ্জাক আর কবরী প্রসঙ্গে কোনো প্রশ্নের তিনি জবাব দিতে চাননি।
আলোচিত সমালোচিত রাজ্জাক : ঢাকার ছবিতে রাজ্জাক প্রশংসা পেয়ে থাকেন একটি বড় কারণে। সেটি হল তার সামাজিক ছবির পৃষ্ঠপোষকতা। এ ব্যাপারে তার মন্তব্য ‘সামাজিক ছবি ছাড়া আমি চিন্তাই করতে পারি না।’
সামাজিক ছবির অভিনেতা-পরিচালক-প্রযোজক-পরিবেশক হিসেবে স্বীকৃতি, প্রশংসা সামাজিক ছবিকে ঘিরেই এ কারণেই রাজ্জাক সাফল্য ও শক্তির মূল কারণ এটি।
পর্দার বাইরেও রাজ্জাকের একটি আলাদা উমেজ গড়ে উঠেছে। এ ইমেজ তার ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক কাজের। তিনি দু’বার হজ করেছেন। পানীয় দ্রব্যের ব্যবহারও ছেড়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের প্রতি রাজ্জাকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?
স্মিত হাস্যে তার জবাব ছিল, যে সম্মান পেয়েছি সেটা নিয়েই যেন পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে পারি।
রাজ্জাকের চলচ্চিত্র : রাজ্জাক বাংলাদেশে বাংলা ও উর্দুভাষা মিলিয়ে ৩০২টি (প্রায়) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এ সবের মধ্যে সামাজিক ছবির সংখ্যা বেশি। তিনি কিছু ফ্যান্টাসি ও মারদাঙ্গা ছবিতেও অভিনয় করেন। তিনি চিত্র প্রযোজক হন ‘রংবাজ’ (১৯৭৩) ছবিতে। ১৯৭৩ সালে তিনি স্ত্রীর নামে ‘রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন্স’ প্রযোজনা সংস্থা গড়ে তোলেন। তার প্রযোজিত ছবির সংখ্যা ২০টি।
রাজ্জাক ১৭-১৮টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। এ সবের মধ্যে রয়েছে ‘অনন্ত প্রেম’, ‘মৌ-চোর’, ‘অভিযান’, ‘বদনাম’, ‘বেঈমান’, ‘সৎভাই’, ‘প্রফেসর’, ‘চাঁপাডাঙ্গার বউ’, ‘বাবা কেন চাকর’, ‘মরণ নিয়ে খেলা’, ‘আমি বাঁচতে চাই’ প্রভৃতি।
রাজ্জাক ইদানীংকালে কলকাতার বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন।
চিত্রশিল্পে অভিনয়ের জন্য রাজ্জাক রাষ্ট্রীয় পুরস্কারসহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। অমরের মধ্যে রয়েছে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আজীবন সম্মাননা, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুস্কার প্রভৃতি।
রাজ্জাকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব যে তিনি তার পুত্র বাপ্পারাজ ও সম্রাটকেও চিত্রজগতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘নায়ক’ হিসেবে।
২০১৭ সালের ২৩ জানুয়ারি রাজ্জাকের ৭৬তম জন্মদিন পালিত হয়েছে। জয়তু শিল্পী রাজ্জাক।
লেখক : কলামিস্ট, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব