ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

অনুকরণে মুন্সিয়ানা থাকলেও গান স্রষ্টাকে আড়ালেই রাখল সোলস

অনুকরণে মুন্সিয়ানা থাকলেও গান স্রষ্টাকে আড়ালেই রাখল সোলস

রাসেল আজাদ বিদ্যুৎ

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১২:০৪

 নব্বই দশকের ব্যান্ড ভক্তদের কাছে বহুল পরিচিত একটি গান সোলসে‌র ‘সাগরের এই প্রান্তরে’। গানটি ১৯৯৩ সালে সোলসের দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত ‘এ এমন পরিচয়’ অ্যালবামে স্থান পেয়েছিল। নতুন খবর হলো, গানটি রিমেক করেছে সোলস। ব্যান্ডের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে এটি প্রকাশ করেছে ভিডিও আকারে। শিরোনামে ‘এই’ শব্দটি বাদ দিয়ে রেখেছে ‘সাগরের প্রান্তরে’।

দ্বিতীয় পরিবর্তন হলো, প্রথমবার গানে বাংলার পাশাপাশি খানিকটা ইংরেজি অংশ রেখে দেওয়া হয়েছিল। এবার যেটি রিমেক আকারে প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে ইংরেজি অংশটি রাখা হয়নি। গানে কোরাস যুক্ত করে ভিন্নতা আনা হয়েছে। নতুন সংগীতায়োজনে প্রকাশিত গানটি অনেকের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। তবে সমালোচনাও হচ্ছে প্রকাশিত ভিডিওতে গানের সুরস্রষ্টার নাম উল্লেখ না থাকায়। কারণ গানটির সুরকার সোলসে‌র কোনো সদস্য নন; আমেরিকান কণ্ঠশিল্পী হ্যারি বেলাফঁতের ‘জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল’-এর কথা-সুর অনুকরণে ‘সাগরের এই প্রান্তরে’ গানটি তৈরি করেছিলেন তারা। ১৯৫৬ সালে এই শিল্পীর একক অ্যালবাম ‘ক্যালিপসো’-তে স্থান পেয়েছিল ‘জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল’ গানটি।

অন্যদিকে ‘সাগরের এই প্রান্তরে’ গানটি সোলস রেখেছিল তাদের পঞ্চম অ্যালবাম ‘এ এমন পরিচয়’-এ। এই অ্যালবামের প্রচ্ছদে গীতিকার হিসেবে নাসিম আলী খানের নাম থাকলেও গানের বিষয়ে আর কোনো তথ্য তুলে ধরা হয়নি। শুধু সোলস নয়; মাইলস, ফিডব্যাকসহ সে সময়ের জনপ্রিয় অনেক ব্যান্ড বিদেশি গানের বাংলা রূপান্তর কিংবা অনুকরণে নতুন গান তৈরি ও প্রকাশ করেছে। সেসব তথ্য অ্যালবামের প্রচ্ছদে উল্লেখ করেনি। এ নিয়ে বিভিন্ন ব্যান্ড সদস্যের বক্তব্য ছিল– সে সময় অ্যালবাম প্রচ্ছদগুলো হতো ছোট আকারের। সেখানে কোনো গানের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা সম্ভব হতো না। সোলসের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।

প্রশ্ন হলো, সে সময়ের প্রেক্ষাপটে যা সম্ভব হয়নি, এখন তা জানাতে সমস্যা কোথায়? কারণ অনলাইনে প্রতিটি গানেরই বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা সম্ভব। তারপরও সোলস সদস্যরা গানের তথ্য প্রকাশে অনীহা দেখিয়েছেন। তাহলে কি ‘সাগরের প্রান্তরে’ গানটি নিজেদের পূর্ণাঙ্গ সৃষ্টি বলে দাবি করতে চান? এ প্রশ্নে সোলস সদস্যদের বক্তব্য, ‘জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল’ বহুল জনপ্রিয় একটি গান; যার বাংলা রূপান্তর ‘সাগরের এই প্রান্তরে’। এ তথ্য অনেকেরই জানা। তাই নতুন করে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি।

 এর আগেও ২০১৭ সালে ‘সাগরের এই প্রান্তরে’ গানটি শ্রোতাদের মাঝে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছিল। ‘এ এমন পরিচয়’ অ্যালবাম প্রকাশের দুই যুগ পর এক অনুষ্ঠানে গানটি নতুন সংগীতায়োজনে গেয়েছিলেন মডেল নোবেল। সংগীতায়োজন করেছিলেন সন্ধি। সেই অনুষ্ঠানের সূত্র ধরেই অনেকে জানতে পারেন এটি মূলত হ্যারি বেলাফঁতের ‘জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল’ গানের বাংলা রূপান্তর। সেই গানে হ্যারি তুলে ধরেছেন জ্যামাইকা ভ্রমণে গিয়ে কিংস্টন টাউনের একটি মেয়ের প্রেমে পড়া এবং তাঁকে ছেড়ে আসার বিষাদী বয়ান। এই গানের অনুকরণে সোলস মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু যাঁর সৃষ্টিকে ঘিরে তাদের আয়োজন, তাঁর পরিচয়টাই রাখা হয়েছে আড়ালে।

আরও পড়ুন

×