ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

আমি মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরীর কাজের বড় ভক্ত: পরমব্রত

আমি মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরীর কাজের বড় ভক্ত: পরমব্রত

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়

বুলবুল ফাহিম

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪ | ১৬:৪২ | আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ | ১৭:১৩

পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। ভারতীয় অভিনেতা হলেও এ দেশেও জনপ্রিয়তা তার কম নয়। বাংলাদেশের  শবনম ফেরদৌসী পরিচালিত পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘আজব কারখানা’ ছবিতে অভিনয় করেছিন তিনি।  এই ছবি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতেই সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। নতুন সিনেমায় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতাসহ নানা প্রসঙ্গ তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।

বাংলাদেশে আপনাকে স্বাগতম, এবারের সফর কেমন লাগছে?
আপনাকে অসখ্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশে এলে এটাকে সফর বলে আমার মনে হয় না। এর আগে এখানকার যতগুলো ছবি আমি করেছি সে সময় সুযোগ হয়েছে পুরো বাংলাদেশকে চেনার। আমি আজকে একটা জায়গার বাসিন্দা, যেটি হল ভারত নামের একটি স্বাধীন দেশের অঙ্গরাজ্য। নাম পশ্চিমবঙ্গ। আর আমি যেখানে বসে আছি, এটি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী। আমি চেষ্টা করি বাংলাদেশকে বিদেশ হিসেবে না দেখতে। আমি প্রত্যাশা করি বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যেন বিদেশি হিসেবে না দেখেন।

‘আজব কারখানা’ ছবিতে যুক্ত হলেন কীভাবে?
বাংলা লোকায়ত গান-বাজনার মধ্যে আমার বেড়ে ওঠা। আমার মা-বাবা দীর্ঘ সময় বাউল, ফকির ও দরবেশসঙ্গ করেছেন। এমনকি আমার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় একটি বাউল মেলা থেকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ভাষার সংস্কৃতি, গানের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে আমার। তবে একটা বয়সের পর ছোটবেলার সেই সংস্কৃতির প্রতি টানটা আবার বেড়েছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় কালিকাপ্রসাদের সঙ্গে অনেকটা সময় সঙ্গ করেছি। গানের গবেষণায় বাউলদের সঙ্গে থেকেছি। সে কারণে ‘আজব কারখানা’র চিত্রনাট্য পড়ার সময় আমার আগ্রহ জন্মায়। এখনো যখন আমরা শিকড়ের গানগুলো শুনি, তখন ওই ডাকটা শুনতে পাই। সেই ডাকটা আমাদের ভেতরে আলোড়ন সৃষ্টি করে, রিং রিং করে আওয়াজ দেয়। যেই আওয়াজ শুনে বুঝতে পারি, আমরা কতটা কাঙাল। এ কারণেই এই সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হওয়া।

প্রথমবার ঢাকায় জন্মদিন পালন করলেন, কেমন লাগলো?
জন্মদিনেই এবার ঢাকা আসা হবে, এটা আগে থেকে ঠিক করা ছিল না। জন্মদিনে কলকাতা ছাড়া অন্য কোথাও যদি থাকতে ভালো লাগতে পারে, সেটা ঢাকা। তার কারণ, এই শহরের সঙ্গে আমার আত্মিক যোগাযোগ। উষ্ণভাবে এত মানুষ আমায় জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, সেটা গায়ে মেখে খুব ভালো লাগছে। সব সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ শুভেচ্ছা পাই, সেটা অভূতপূর্ব, ভাবা যায় না।

বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমার মধ্যে কী কী পার্থক্য চোখে পড়ে?
দেখুন, আমি বরাবরই বলে আসছি- দুই বাংলাং কাজের প্রচুর ‍মিল আছে। আবার কিছু কিছু অমিলও আছে। মিলের জায়গাগুলো আমরা মোটামোটি সবাই জানি। অমিলের জায়গাগুলো হল- পশ্চিমবঙ্গের ইন্ডাস্ট্রি আনেকটাই আটোশাটো ও কিছুটা গোছানো। তবে ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রি গত ৫-৬ বছর ধরে যে সিনেমা নির্মাণ করছে মৌলিকতার জায়গা থেকে প্রবলভাবে তারিফ করতে হয়।

এ ক্ষেত্রে কি দর্শকের কোন ভূমিকা আছে বলে আপনি মনে করেন?
অবশ্যই। নতুন করে এদেশের দর্শক যেভাবে বাংলা সিনেমাকে সমর্থন করছেন, সেটা অকল্পনীয়। এদেশের দর্শকের মধ্যে যে উদ্দিপনা কাজ করে তার জন্য প্রত্যেক নির্মতাকে দর্শকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিৎ। আমি সেটাই করছি।

যে সময় শাকিব খানের ‘তুফান’ চলছে, সে সময়ে ‘আজব কারখানা’ কতখানি দর্শক টানবে?
‘তুফান’ একদম সুপার হিট! তুফানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে অভিনন্দন জানাই। যারা তুফান বানিয়েছেন তারা সবাই আমার খুবই বন্ধু, অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন। ওই বাংলার এসভিএফ আছে, যাদের সঙ্গে আমি নিয়মিত কাজ করি, ইনফ্যাক্ট এইতো কিছুদিন আগে যে সিনেমাটির শুটিং করেছি সেটা ওদেরই ছবি। রেদওয়ান রনি, আলফা আইয়ের শাহরিয়ার শাকিল অনেকদিনের পরিচিত। তারপর মিমি আমার বন্ধু-সহকর্মী বলি। এছাড়া চঞ্চল ভাই আছেন, নাবিলাকে আমি চিনি। আর শাকিবকে আমি চিনি বাট অতটা চিনি না। আমাদের দুই-তিনবার আলাপ হয়েছে, কথা হয়েছে ওইটুকুই আর কি! কিন্তু প্রথমত হচ্ছে যে, পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক বাংলা ছবি না চললে কিন্তু আমরা যে ধরনের ছবি বানানোর চেষ্টা করি সেটা সফল হবে না। কারণ বাণিজ্যিক বাংলা ছবি হচ্ছে একটা দেশের ইকোনমিটাকে ধরে রাখে। তাই আমার থেকে খুশি কেউ নয় তুফান এরকম চলার ফলে।

শোনা যায় বলিউড ছবির কাছে কলকাতার ছবি সব সময়ই কোণঠাসা। এ বিষয়ে কি বলবেন?
হিন্দি ও দক্ষিণ ভারতের সিনেমার সঙ্গে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ছবিকে ক্রমাগত লড়াই করতে হয়। তাদের মতো আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পয়সা নেই। দর্শকের ক্ষেত্রে বাংলা ছবি ছাড়াও তাদের বিকল্প ছবি দেখার উপায় থাকে। বিশেষ করে হিন্দি বড় তারকাদের ছবি যখন পরিবেশিত হয় প্রত্যেকটা অঞ্চলে তারা কিন্তু শর্ত দিয়ে দেন। একেকটা মাল্টিপ্লেক্সে সারাদিনে ৫০টি শো থাকে তাহলে তার মধ্যে ৪৫টি তাদের দিতে হবে। ৪৫টি তাদের দিলে বাকী ৫টিতে চলে অন্য সব ছবি। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা শো’র সংখ্যা পায় একটা বা দুইটা। অর্থাৎ এখানে হিন্দি ছবি বনাম পশ্চিমবঙ্গের ছবির অসম-প্রতিযোগিতা চলে। তা সর্তেও আমাদের সিনেমা সার্ভাইভ করছে। সেটা নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা। এটা কিন্তু ছোট কথা না।

বাংলাদেশের কোন কোন শিল্পীর অভিনয় ভালো লাগে?
আমি মোশাররফ করিম ও চঞ্চল চৌধুরীর কাজের বড় ভক্ত। আমার সমসাময়িকদের মধ্যে নিশো ও অপূর্বকে ভালো লাগে। জয়ার সঙ্গে আমার ভীষণ ভালো সম্পর্ক। নতুন করে ফারিণের কাজ দেখা হয়েছে। খুব অল্প বয়সেই নিজেকে শক্তিশালী অভিনেত্রী হিসেবে প্রমাণ করেছে। এ ছাড়া পরীমণিকে আমার মনে হয় পাওয়ার হাউস অব ট্যালেন্ট। তাকে যদি আরও একটু ভালোভাবে ব্যবহার করা যায়, তিনি খুব ভালো করবেন। তার যেটুকু কাজ দেখেছি, দুর্দান্ত মনে হয়েছে।

বাংলাদেশে নতুন কাজের পরিকল্পনা?
পরিকল্পনা তো অনেক কিছুই আছে। সেই প্ল্যানের সবটা আমি বলতেও পারব না এখন। তবে নিশ্চয়ই ভাবনা-চিন্তা তো আছেই কিছু।

আরও পড়ুন

×