ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সংগঠন নিয়ে অভিনয়শিল্পীদের দ্বন্দ্ব চরমে

সংগঠন নিয়ে অভিনয়শিল্পীদের দ্বন্দ্ব চরমে

ছবি: সমকাল

এমদাদুল হক মিল্টন

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৪:০৯ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৪:৪৪

দেশের প্রতিনিধিত্বশীল অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ। টিভি মাধ্যমের অভিনয়শিল্পীদের এ সংগঠনের অ্যাক্টরস ইকুইটি নামেও পরিচিতি রয়েছে। সাম্প্রতিক বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের সূত্র ধরে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে সংগঠনটির নেতৃস্থানীয়রা। 

অভিনয়শিল্পীদের পক্ষে-বিপক্ষে ক্ষোভ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। নানা ইস্যুতে অভিনয়শিল্পী সংঘ থেকে পদত্যাগ করছেন অনেক অভিনয়শিল্পী। সব মিলিয়ে অভিনয়শিল্পীদের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর নিকেতনের ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে একটি জরুরি বৈঠকে অভিনয়শিল্পী সংঘের সংস্কারের দাবি তোলেন ‘দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পী সমাজ’-এর ব্যানারে এক দল অভিনয়শিল্পী। ওই বৈঠকে ইন্তেখাব দিনার, আজমেরী হক বাঁধন, শ্যামল মাওলা, এফ এস নাঈম, সুষমা সরকার, এহসানুর রহমান, কাজী নওশাবা আহমেদ, খায়রুল বাসার, মনোজ প্রামাণিক, আহমেদ সাব্বির, নাদিয়া আহমেদ, নীলা ইস্রাফিল, মৌসুমি হামিদ, সোহেল মণ্ডল, নাজিয়া হক অর্ষা, মোস্তাফিজুর নূর ইমরানসহ ৪৭ জন অভিনয়শিল্পী উপস্থিত হয়েছিলেন। 

সেখানে পারস্পরিক আলোচনা ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই মধ্যে তারা সামাজিকমাধ্যমে সিদ্ধান্তগুলো প্রকাশ করেছেন। সেখানে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটিকে দুঃখ প্রকাশ ও জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। অন্যথায় ১০ সেপ্টেম্বর অভিনয়শিল্পী সংঘের কমিটি বিলুপ্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। 
ওই বৈঠকের আগেও তারা চিঠি চালাচালির মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বর্তমান অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতৃবৃন্দের কাছে। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এ কারণে বৈঠক থেকে কড়া আলটিমেটাম ছুড়ে দেওয়া হয়েছে সংগঠন কর্তাদের প্রতি। 

অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন আলাদাভাবে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমটির প্রতি ২১টি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে তাদের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। রোববার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে প্রশ্নগুলো তুলে ধরেন এ অভিনেত্রী। 

এ অচলাবস্থা নিরসনে শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সাধারণ শিল্পীরা। পুরো বিষয়টিকে বিব্রতকর বলে মনে করছেন অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিম। তিনি বলেন, ‘সদস্যরা এসে যদি আমাদের বলে কমিটি বাতিল করতে হবে। সাধারণ সভা ডেকে বাতিল করে দেব। সেটার তো প্রক্রিয়া আছে। ধরুন আমি পদত্যাগ করব কিংবা করতে চাই, সেটা তো একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমি পদত্যাগ করব কার কাছে? শিল্পীদের মধ্যে যা হচ্ছে, এ বিষয়গুলো তো আনন্দদায়ক না। এরই মধ্যে আমার সঙ্গে যারা বসেছিলেন, তারাই তো শুধু অভিনয়শিল্পীদের প্রতিনিধি নন। আরও প্রতিনিধি আছেন। সবার সঙ্গে কথা বলে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের যদি পদত্যাগ করতে হয়, করব। একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সব বিষয়ে আলোচনা করলে খুব সুন্দর হতো।’ 

ইন্তেখাব দিনার বলেন, ‘শিল্পীদের দীর্ঘদিনের না পাওয়ার বঞ্চনা থেকেই এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সব শিল্পীকেই মর্যাদা দিতে হবে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে অটল।’ 

অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বলেন, ‘অভিনয়শিল্পী সংঘের সদস্যদের নিয়ে শিগগিরই একটি সাধারণ সভা হবে। সংস্কার বিষয়েও সেখানে কথা হবে। ওই সভায় সাধারণ সদস্যরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা মাথা পেতে নেব। আমরা গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই আছি। ’

নাট্য মামুনুর রশীদ শিল্পীরা দুই পক্ষ হওয়া উচিত নয় জানিয়ে বলেন, শিল্পীরা দুই পক্ষ হয়ে গেছে। এটি নিয়ে আমি বিব্রত। এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। আমি দুই পক্ষের কথাই শুনেছি। অভিনয়শিল্পী সংঘের নেতারা একটি বিশেষ সাধারণ সভা ডেকেছে। সভায় বিষয়গুলো আলোচনা হবে। প্রত্যাশা করছি, সেই মিটিংয়ের মাধ্যমে এই বিষয়টির মীমাংসা হবে। আমি সেই মীমাংসার অপেক্ষায় আছি। 

এ রকম একটি পরিস্থিতিতে শিল্পীদের বিভাজন ভালো লাগছে না তারিক আনাম খানের। তিনি বলেন, কয়েক মাস ধরে শিল্পীদের কাজকর্ম নেই। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে শিল্পীদের বিভাজন ভালো লাগছে না। বিভেদ-বিভাজন কখনই কাম্য নয়। আমি শুনব না, কথা না শুনলে থাকব না ভেঙে দেব– এসব থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামনে কীভাবে আমরা শুরু করতে পারব, এটি ভাবার বিষয়। আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আগে বাঁচানো দরকার। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারব। ’ 

আরও পড়ুন

×