দর্শক আমাকে এশা নামে ডাকছে, এখানেই কাজের সার্থকতা: পূজা

পূজা ক্রুজ
আনন্দ প্রতিদিন প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫ | ১৪:৫৮ | আপডেট: ২১ জুন ২০২৫ | ১৫:২১
শুধু একটি চরিত্র নয়, এশা যেন হয়ে উঠেছে তার দ্বিতীয় সত্তা। সানী সানোয়ার পরিচালিত ‘এশা মার্ডার: কর্মফল’ ছবির কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অভিনয় করে অভিনেত্রী পূজা ক্রুজ শুধু সিনেমায় নয়, দর্শকের মনেও গেঁথে দিয়েছেন নিজের নাম।
ঈদুল আজহায় সিনেমাটি মুক্তির পর থেকে হলে হলে ঘুরছেন তিনি। নিজের চরিত্রটি দর্শকরা কতটা গ্রহণ করেন সেটি দেখতে এই ঘোরাঘুরি তাঁর। পূজা বলেন, ‘‘সিনেমাটি নিয়ে নিয়মিতই হল ভিজিটে গিয়েছি। দারুণ দারুণ সব অভিজ্ঞতা হয়েছে। অনেক মেয়ে অডিয়েন্স আমার কাছে এসে বলে, এশা আপু আমার নাম এশা। তাই ‘এশা মার্ডার’ দেখতে এসেছি।’’
পূজা আরও বলেন, ‘সিনেমায় আমার চরিত্রের নাম এশা। আমার মনে হয়েছিল এশা নামের মেয়েদের ছবিটি টানবে। এ রকম যে ঘটবে ভাবিনি। যখন আমাকে এসে কয়েকজন বললেন তখনকার অনুভূতিটা নিঃসন্দেহে ভালো লাগার। আমাকেও অনেকে এশা নামে ডাকছেন। এখানেই কাজের সার্থকতা বলে আমি মনে করি।’
ছোটবেলা থেকে তাঁর মধ্যে ছিল এক ধরনের ‘নায়িকা নায়িকা’ অনুভূতি। সেটি নাচে, গানে, চলনে, বলনে–সবখানেই। মঞ্চে নাচছেন আর দর্শকেরা অপেক্ষা করছেন কখন তিনি আসবেন, আবার কখন নাচ শেষ হবে–এ যেন তাঁর জীবনের প্রথম স্টারডম। কখনও স্কুলের অনুষ্ঠানে, কখনও নজরুল একাডেমির সাপ্তাহিক আয়োজনে একটি গানে নাচলে পরদিন রাস্তায় সেই গান গাইতে গাইতে পাড়ার মানুষ পেছনে পেছনে হাঁটত। শিশুকণ্ঠে তখনই যেন উচ্চারিত হতো, ‘তুই একদিন নায়িকা হবি!’
সে স্বপ্নকে হৃদয়ে বেঁধে নিয়েই এগিয়ে গেছেন পূজা। লাক্স-চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় সেরা দশে থাকা, মোস্ট কনফিডেন্ট খেতাব জয়, র্যাম্প মডেলিংয়ে নিজেকে গড়ে তোলা–সব ছিল তাঁর প্রস্তুতির পর্ব। তবে নাটকে নাম লেখাননি, কারণ শুরু থেকেই তাঁর লক্ষ্য ছিল রুপালি পর্দা। ‘সিনেমা করতেই চাইছিলাম’, বলেন তিনি অকপটে।
তাঁর এই জেদ এবং প্রস্তুতির ফলাফল আজ দর্শক দেখছেন ‘এশা মার্ডার’-এ। পূজা জানালেন, ছবিটির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং-এ নিয়েছেন ছয় মাসের প্রশিক্ষণ। অভিনয় করেছেন থিয়েটারে ‘মলুয়া’ চরিত্রে। পরিচালক সানী সানোয়ারের তত্ত্বাবধানে নিয়েছেন দু-তিন মাসের কর্মশালা।
‘এশা’ চরিত্রটি নিয়ে পূজা বললেন, ‘চরিত্রটি পুরোপুরি আমার বিপরীত। আমি চঞ্চল, আড্ডাবাজ, প্রাণবন্ত। কিন্তু এশা একেবারে শান্ত, চুপচাপ, সহজ-সরল। তবে একটা দিক মিলেছে, আমরা দুজনেই স্পষ্টবাদী।’
‘শীতের রাত, রক্তমাখা দৃশ্য, কস্টিউমের অস্বস্তি। সবকিছুকে পেছনে রেখে তিনি যে নিষ্ঠা আর আত্মনিবেদন নিয়ে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন, তা বোঝা যায় সিনেমা হলে ঢুকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া দেখলে। ‘অনেক মেয়ে দর্শক আমার কাছে এসে বলেছেন, তাদের নামও এশা। তাই তারা ছবিটি দেখতে এসেছেন। কেউ কেউ এখন আমাকে এশা বলে ডাকছেন। এই অনুভবটাই তো শিল্পের সার্থকতা,’ বলেন তিনি হাসতে হাসতে।
ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন। পূজার কণ্ঠে বাঁধনের প্রতি শ্রদ্ধা স্পষ্ট– ‘তিনি শুধু সিনিয়র নন, দারুণ আন্তরিকও। আমরা শুটিংয়ে যেমন পাশে পেয়েছি, ইন্টারভিউতেও তিনি আমাকে প্রশংসা করেছেন। এতে আত্মবিশ্বাস আরও বেড়েছে।’
পড়াশোনায়ও পূজা ছিলেন নিবেদিত। টঙ্গীর নোয়াগাঁও স্কুল, এরপর হলি ক্রস কলেজ, শেষে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া থেকে গ্র্যাজুয়েশন। পরিবারের একমাত্র বড় সন্তান হিসেবে দায়িত্ব ছিল। তাঁর বাবা-মায়ের ভালোবাসা এবং ছোট দুই বোনের সাপোর্ট তাঁকে এগিয়ে যেতে সাহস জুগিয়েছে।
চলচ্চিত্রে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা স্পষ্ট, পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক সিনেমায় কাজ করতে চান তিনি। নাচ, গান, মারপিট-সবই থাকবে সে সিনেমায়।
পূজার শখের তালিকাও খুব সুন্দর। তিনি ভালোবাসেন ভ্রমণ, রান্না আর খাওয়ানো। গরুর মাংস আর ডিমের দোপেঁয়াজার প্রতি তাঁর বিশেষ দক্ষতা রয়েছে। বন্ধুদের কাছেও তিনি ‘রাঁধুনি’ নামে পরিচিত।
সবশেষে, যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, অভিনেত্রী না হলে কী হতেন–তিনি বলেন, ‘আর কিছু ভাবিনি কোনোদিন। এটিই তো স্বপ্ন ছিল।’
এ স্বপ্ন যে ধীরে ধীরে পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে, তার প্রমাণ ‘এশা মার্ডার’। সেই ছোট্ট মেয়েটি, যে স্কুলে নাচত আর সবাই অপেক্ষা করত তাঁর জন্য, সে এখন সিনেমা হলে নিজের নামের ডাক শুনছেন দর্শকের কণ্ঠে। সময়ের গল্পে পূজা ক্রুজ যেন হয়ে উঠেছেন নিজের সৃষ্ট স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি।