মিথিলার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হয়, সৃজিতও আমার খুব প্রিয়: তাহসান

তাহসান খান, ফাইল ছবি
বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২১ | ০৮:০৭ | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২১ | ০২:৫৪
দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা ও গায়ক তাহসান খান। বাংলাদেশে যেমন তুমুল জনপ্রিয় তেমনি পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে তার অসংখ্য ভক্ত। সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকাকে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি সৃজিতকে নিয়েও কথা বলেছেন তাহসান খান।
সমকালের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি...
ভারতের সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বলার কারণ কী?
আসলে আমি একটু কম সোশ্যাল। তাই সাংবাদিক বন্ধুদের সঙ্গে সে রকম যোগাযোগ রাখতে পারি না। এছাড়া এখনও পর্যন্ত ভারতে গিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। ফলে সেখানকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলেও ইন্ডাস্ট্রির কারও সঙ্গে আলাপ নেই। তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ আসেনি।
ভারতে আপনার এত অনুরাগী, কাজের সুযোগও এসেছে নিশ্চয়..
আসলে আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, সে ধরনের কাজের জন্য এখনও ডাক পাইনি। তাই কনসার্ট বা অভিনয়ের জন্যও যাওয়া হয়নি কখনও। তবে এখন কলকাতায় যাওয়ার একটা বড় কারণ পেয়েছি। আমার মেয়ে আয়রা সেখানে তার মায়ের সঙ্গে থাকে। তাই কলকাতা আসার জন্য আমার মন এখন উড়ছে! জীবনের এমন একটা জায়গায় আছি, কলকাতায় যে কাজই পাব, লুফে নিয়ে চলে যাব।
প্রশ্ন: কাজ ছাড়া কলকাতায় আসা যায় না?
আমার জীবনটা এতটাই কাজের মধ্যে দিয়ে কাটে যে বাইরে ঘুরতে যাওয়াটাও কাজের মাধ্যমেই হয়। গান, অভিনয়, ব্র্যান্ড এন্ডরসমেন্ট, এসব কিছু নিয়ে এমনভাবে সময় কেটে যায় যে কাজ ছাড়া ঘুরতে যাওয়া হয় না।
প্রশ্ন: এত কাজ নিয়ে থাকেন, কিন্তু প্রচারে তো খুব একটা দেখা যায় না?
অনেকেই আমাকে বলেন ‘স্টারডম’ ধরে রাখার জন্য আমার প্রচারে থাকা উচিত, মিডিয়ার সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কিন্তু আমি মনে করি, কাজের মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি কানেক্ট করা যায়। শুধু খবরে থাকার জন্য কোনো কাজ করতে বা কথা বলতে আমি বিশ্বাসী নই। এছাড়াও বিগত কয়েক বছরে বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম আমাকে নিয়ে এমন কিছু কথা লিখেছে, যেগুলো হয় তো আদৌ সত্যি নয়। সে কারণে আমি আরও একটু প্রচারবিমুখ হয়ে পড়েছি।
প্রশ্ন: ‘নো ল্যান্ডস ম্যান’-এ নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির সঙ্গে কাজ করে কেমন লাগল?
গত বছরই পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মনে হয়েছিল বর্তমানে পৃথিবীর যা অবস্থা, এই গল্পটা বলার শ্রেষ্ঠ সময় এখনই। ছবিটিকে সব প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ইংরেজি ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম হিসেবে রিলিজ করানো হচ্ছে। নওয়াজউদ্দিনের সঙ্গে কাজ করেও খুব ভালো লেগেছে। আমাদের সৌভাগ্য, এ আর রহমান এই ছবির মিউজিক করেছেন। কিন্তু অতিমারির জন্য সব হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা আপাতত অপেক্ষা করছি। পরিস্থিতি একটু ঠিক হলে সারা পৃথিবীতে যখন হলগুলো খুলবে, তখনই ছবি রিলিজ করা হবে। আশা করি, ২০২১-এই তা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: চেনা পরিসরের বাইরে গিয়ে তো এই প্রথম কাজ?
ফারুকীর সঙ্গে সেই কবে থেকে পরিচয়! বহু দিন ধরে তার কাজেরও ভক্ত। এই ছবিতে অবশেষে তার সঙ্গে কাজের সুযোগ আসে। আর নওয়াজউদ্দিন একজন অসামান্য অভিনেতা। ছবিতে আমার বেশিরভাগ দৃশ্যই তার সঙ্গে। কিন্তু ছবির গল্পটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করেছে।
প্রশ্ন: ভারতের আর কোন অভিনেতাকে ভালো লাগে?
ছোটবেলা থেকে সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়কে দেখে বড় হয়েছি। এছাড়াও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের কাজ দেখেছি। খুব ভালো লাগে।
প্রশ্ন: আর পরিচালক?
আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই সত্যজিৎ রায়ের ভক্ত। আমিও ছোটবেলা থেকে তার ছবি দেখে বড় হয়েছি। আমি একটু বেশিই ভক্ত তাই। তার মতো আমিও ‘পলিম্যাথ’ কনসেপ্টে বিশ্বাসী এবং নিজেও সেটাই হওয়ার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন: আপনি সুযোগ পেলে ভারতের কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাইবেন?
আমি এ রকম রিজিড চিন্তাভাবনা করি না। আগে দেখি গল্পটা কেমন। তবে এখন সৃজিত আমার খুবই প্রিয়, কারণ আমার মেয়েরও খুব ভালো লাগে তাকে। যদিও আগে থেকেই তার কাজ বেশ পছন্দ করতাম। এছাড়াও রাজ চক্রবর্তীর কাজ দেখে বেশ ভালো লেগেছে।
প্রশ্ন: আপনার প্রথম ছবি ‘যদি একদিন’ কিন্তু ভারতীয় নায়িকার সঙ্গেই…
হ্যাঁ। শ্রাবন্তী খুব মিষ্টি মেয়ে। শুটিংয়ের প্রথম দিক থেকেই খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল তার সঙ্গে। এখন হয়তো যোগাযোগ রাখা হয় না। কিন্তু খুব ভালো কাজ করছে সে।
প্রশ্ন: তাকে নিয়ে বা অন্য তারকাদের নিয়েও তো সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ট্রলিং হয়, আপনার ক্ষেত্রে তো উল্টো?
না না, আমিও মানুষ। আমার সব কাজ সবার ভালো লাগে না। সেটা নিয়ে নিশ্চয় সমালোচনা হয়। কিন্তু আমি আমার ভক্তদের ভাল লাগা-মন্দ লাগা মাথায় রেখে চলি। চেষ্টা করি তাদের পছন্দমতো কাজ উপহার দেওয়ার। এছাড়াও অনেকে বিতর্ক সৃষ্টি করে প্রচারে থাকতে ভালবাসেন। কিন্তু বিনোদন জগতের কর্মী হিসেবে মানুষকে আনন্দ দেওয়াই আমার মূল লক্ষ্য। তাই হয়তো এত বছর পরেও ‘দূরে তুমি দাঁড়িয়ে’, ‘আলো’-কে মানুষ মনে রেখেছে এবং আমি এত ভালবাসা পাচ্ছি।
প্রশ্ন: নাটকের সংখ্যা ১০০ পেরোলেও ছবি মাত্র একটা!
বড় পর্দার চুলচেরা বিশ্লেষণটা এমন হয় যে পারফেক্ট টিম না পেলে কাজ করতে চাই না। আমি আসলে এখনও কমার্শিয়াল ফিল্মের জন্য নিজেকে পুরোপুরি তৈরি বলে মনে করি না। তবে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বদলাচ্ছে। আশা করি, আগামী দিনে কাজের পরিধি আরও বাড়বে।
প্রশ্ন: গায়ক তাহসান না অভিনেতা তাহসান?
আমি কাউকেই এগিয়ে রাখব না। সেটা মানুষ ঠিক করবে। আমি তাদের এন্টারটেন করার চেষ্টা করি। এই যেমন ধরুন লকডাউনে কাজ ছিল না সে রকম, তাই বাড়িতে বসে নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখে ফেললাম। আমার অভিজ্ঞতার কথা পড়ে হয়তো আমার সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আরও দৃঢ় হবে।
প্রশ্ন: মিথিলার সঙ্গে বন্ধুত্বটা কীভাবে বজায় রেখেছেন?
এটা আসলে খুব কঠিন একটা প্রশ্ন। আমাদের প্রত্যেকেরই তো কিছু দোষ-গুণ আছে। আমাদের একটা সম্পর্ক ফেল করেছে মানে এই নয় যে বন্ধুত্ব থাকবে না। আমাদের মেয়েকে আমরা দু’জনেই খুব ভালোবাসি। আমার মেয়ের মায়ের নামে তাই একটি শব্দও খারাপ বলব না। আমি মনে করি, আমরা দু’জন আলাদা থেকেও আয়রাকে সুন্দরভাবে বড় হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারি। এছাড়াও বিচ্ছেদের তিন বছর পেরিয়ে গেছে। তখন আমার জীবনের কঠিন সময় ছিল। কিন্তু আমরা কেউই বাইরের মানুষের কথায় আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করিনি। তাই বোধ হয় আমাদের সম্পর্কটা এতটা সহজ।
প্রশ্ন: কথা হয় মিথিলার সঙ্গে?
আমাদের প্রতিনিয়ত যোগাযোগ আছে। ওরা তো এখন সিকিমে। আয়রা বরফ দেখে ওখান থেকেই আমাকে ভিডিও কল করেছিল।
প্রশ্ন: ভিডিও কল তো হলো, এবার মেয়েকে দেখতে নিজে যাবেন তো?
হ্যাঁ। এই অতিমারির জন্য ভিসার সমস্যা কাটলেই যাব। এছাড়া আমি নতুন বছরে কলকাতায় গিয়ে কাজ করার রেজোলিউশন নিয়েছি।
প্রশ্ন: বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু রেজোলিউশন রাখতে পারেন না…
না না। আমি রাখব। ২০২১ কলকাতার সঙ্গে আমার প্রেমের বছর!