ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মৃত্যুর আগে দুর্বিষহ এক জীবন কাটিয়েছেন তিনি

মৃত্যুর আগে দুর্বিষহ এক জীবন কাটিয়েছেন তিনি

বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২১ | ০১:২৪ | আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২১ | ০৭:০৭

সংগীতজ্ঞ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল নেই দুই বছর হয়ে গেলো । আজ (২২ জানুয়ারি) বাংলা সংগীতের উজ্জ্বল এই নক্ষত্রের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। গুণী গীতিকবি, সুরকার-সংগীত পরিচালক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের চলে যাওয়ার এ দিনটিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন অনেকেই।

বাংলা গানের লিজেন্ড এ সুরস্রষ্টা মৃত্যুর আগে কয়েকটা বছর নিরবে নিভৃতে কাটিয়েছেন। ছিলেন গৃহবন্দি। সে সময় জীবন তার কাছে হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ এক যন্ত্রণার। কেন এমন একজন মানুষের গৃহবন্দি থাকতে হয়েছিলো? এমন কী ঘটেছিলো? অনেকের মনে এই প্রশ্ন জাগে এখনও।

যুদ্ধাপরাধ মামলায় সাক্ষী ছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। অনেকেই যেখানে টাকা আর জীবনের হুমকিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে সাক্ষী দিতে চাননি, সেখানে বুলবুল চুপ থাকতে পারেননি। বীরত্বই দেখিয়েছেন তিনি। তিনি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বলেছেন সত্যের কথা বলতে, ন্যায়ের পক্ষে রাষ্ট্রের হয়ে। মৃত্যু তাকে ভয় দেখাতে পারেনি।

কিন্তু এই সাক্ষ্য দেয়ার বিনিময়ে অনেক চড়া মূল্যই দিতে হয়েছে তাকে। ছোট ভাইকে হারিয়েছেন। রাস্তার পাশ থেকে গলাকাটা লাশ উদ্বার হয়েছে তার। ভাইয়ের শোক নিয়ে ঘর থেকেই বের হতেন না গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। নিরবে নিভৃতে কাটিয়েছেন জীবনের শেষ দিনগুলো।

এর মধ্যে নানা সময়ে আসে তার মৃত্যুর হুমকি। সরকারি নিরাপত্তার বলয়ে বাঁধা পড়েন তিনি। বাসায় থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে ভুগছিলেন কিংবদন্তি সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব। সে বছরই বুলবুলের হার্টে আটটি ব্লক ধরা পড়েছিল। সে সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া প্রথিতযশা এই শিল্পীর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে পেরে তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর বুলবুলকে ভর্তি করা হয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা তাকে বাইপাস সার্জারি না করে রিং পরানোর সিদ্ধান্ত নেন।

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. অধ্যাপক আফজালুর রহমানের অধীনে বুলবুলকে ভর্তি করা হয়েছিল। ডা. আফজাল আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের হার্টে দুটি স্টেন্ট (রিং) স্থাপন করেন। রিং পরানো শেষে সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরেন বুলবুল।

গণমাধ্যমে বুলবুল হতাশ হয়ে বলেছিলেন, ‘আমার গৃহবন্দি জীবন অভ্যস্ত হয়ে গেছে। বন্দিত্ব এখন আর বাধা দেয় না। আমি জানি হার্টের চিকিৎসার পর আবার কিন্তু এই চার দেয়ালের মধ্যেই আসতে হবে। এটা কিন্তু সমাধান না। তাই না? আপনারা হার্টটা ঠিক করে আবার এই জায়গাটায় পাঠিয়ে দেবেন, হার্টটা আবার নষ্ট হবে। আপনারা মুক্ত করে দেন। আমি তাহলে বেঁচে যাই।’

এরপর থেকে তিনি বাসাতেই বেশি সময় কাটাতেন। গানে আর তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। তার জীবনযাপনেও বেশ পরিবর্তন আসে। পরিবার পরিজন ও ভক্ত-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে আড্ডা আর গল্পেই সময় কাটতো তার।

প্রায় ছয় বছরের গৃহবন্দি জীবন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠছিলেন এই কিংবদন্তি। তার সঙ্গী বলতে ছিল একমাত্র পুত্র সামির ও একান্ত সহকারী রোজেন। গানটাও নিয়মিত করতে পারতেন না বন্দি থাকা অবস্থায়। গানের মানুষদের সাথেও আড্ডা বা মেলামেশা কমে গিয়েছিল।

হার্টের অসুখই কাল হল বুলবুলের। রিং পড়ানোর পর জীবনযাপন বদলালেও বাঁচতে পারেননি বুলবুল।  

আরও পড়ুন

×