অভিনয় আমার উপাসনা: ফেরদৌসী মজুমদার

ফেরদৌসী মজুমদার
সমু সাহা
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | ০১:৪৮ | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ | ০২:০৮
ফেরদৌসী মজুমদার। বরেণ্য অভিনয়শিল্পী। গত ১৬ ডিসেম্বর শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে 'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' নাটকের ২০০তম মঞ্চায়ন হয়। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা নাটকটিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কথা হলো তার সঙ্গে-
'পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়' নাটকের প্রত্যেক প্রদর্শনীতে অভিনয় করেছেন। এতগুলো প্রদর্শনীতে অভিনয়ের স্পৃহা কীভাবে পেলেন?
আমি অভিনয় ভালোবাসি। এর জন্যই বেঁচে থাকার সাহস পাই। অভিনয় আমার উপাসনা। মঞ্চের প্রতি ভালোবাসাই সবগুলো প্রদর্শনীতে অভিনয়ের জন্য আমাকে সাহস জুগিয়েছে। আসলে যে কোনো কাজেই নিষ্ঠা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। মঞ্চের ক্ষেত্রে তা আরও বেশি সত্য। কারণ এ মাধ্যমে কাজ করে সেভাবে আর্থিক কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না। বরং ব্যক্তিগত অনেক বিষয় মঞ্চের স্বার্থে ত্যাগ করতে হয়। আর সেজন্য মঞ্চকে যে ভালোবাসতে পারে তার মধ্যে কৃত্রিমতা থাকে না। এই অকৃত্রিম ভালোবাসার জোরেই প্রতিটি প্রদর্শনীতে অভিনয় সম্ভব হয়েছে।
২০০তম প্রদর্শনীতে বিশেষভাবে কোনো প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল?
না, আমার কাছে প্রতিটি শোই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম প্রদর্শনীতে যেভাবে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা ছিল, এ প্রদর্শনীতেও তেমনটাই হয়েছে। এই নাটকে মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের সৌভাগ্য হয়েছে। নাটকটি যেহেতু দীর্ঘদিন ধরে প্রদর্শিত হয়ে আসছে, আমার অভিনয়ের হয়তো কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। কারণ চরিত্রাভিনয়ে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি নতুন কিছু সংযোজন করার। তবে নিষ্ঠার জায়গায় একই রকমই আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
অভিনয়ের জন্য ব্যক্তিগত স্বার্থ ত্যাগের কথা বলছিলেন...
অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু টিভি নাটক ও সিনেমায় অভিনয় করেছি। এসব মাধ্যমে কাজ করলে অর্থ পাওয়া যায়। কিন্তু সেটি আমাকে গ্রাস করতে পারেনি। মঞ্চের শিডিউল ঠিক রেখেই অন্য জায়গায় সময় দিয়েছি। ভালোবাসার সঙ্গে কখনও আপস করতে পারি না।
কিন্তু বর্তমানে অনেক মঞ্চশিল্পী টিভি নাটকে সফল হওয়ার পর এ মাধ্যমে সেভাবে দেখা যায় না
এর অনেক কারণ আছে। আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত আছি। তখনকার সময় এত অভিনেত্রী কিংবা টিভি চ্যানেল ছিল না। অর্থনৈতিকভাবে তখনকার শিল্পীদেরও এতটা চাহিদা ছিল না। কিন্তু এখন জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। মঞ্চ তো এখনও পেশাদারিত্বের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। সে জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে মঞ্চকর্মীরা কাজ করছে।
'ফ্রম বাংলাদেশ' শিরোনামে একটি ছবিতে অভিনয় করছেন। কাজ কতদূর এগোল?
ছবির দৃশ্যায়ন শেষ হয়েছে। ডাবিং বাকি আছে। মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে এটি নির্মিত হচ্ছে। একাত্তরের যুদ্ধকালীন এক হিন্দু পরিবারের বাড়ির ভেতরের অবস্থা তুলে ধরা হবে এখানে। চলচ্চিত্রে ৮০ বছর বয়সের বৃদ্ধা 'কাকনবালা'র ভূমিকায় আমাকে দেখা যাবে। যে নিম্নবর্ণের হিন্দু কিংবা অন্য ধর্মের কাউকে সহ্য করতে পারেন না। একসময় তার ছেলে পরিবারের অন্যদের নিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। কিন্তু বৃদ্ধা যাননি। তিনি এই বাড়িকেই তার শেষ আশ্রয় মনে করেন।
অভিনয়ের ক্যারিয়ারে আপনি কতটা তৃপ্ত?
আমি শতভাগ সন্তুষ্ট। বিয়ের আগে ভেবেছিলাম স্বামী [রামেন্দু মজুমদার] আমাকে থিয়েটার চর্চা করতে দেবেন কি-না। কিন্তু তার কাছে যথেষ্ট উৎসাহ পেয়েছি। তেমনি আমার মেয়েও আমাকে অভিনয়ের জন্য উৎসাহ জোগায়। একবার মঞ্চে শোয়ের আগে জ্বর হয়েছিল। আমার মেয়ে [ত্রপা মজুমদার] বলেছিল, তুমি এ অবস্থায় স্টেজে গিয়ে শো করো, ঠিক হয়ে যাবে। সত্যি সত্যি মঞ্চে পা দেওয়া মাত্রই সুস্থ বোধ করলাম। আসলে অভিনয়ের বাইরে আর কিছু চাওয়ার নেই।
- বিষয় :
- ফেরদৌসী মজুমদার
- বিনোদন