ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

'রাত জাগা ফুল' কতটা জেগে উঠল?

'রাত জাগা ফুল' কতটা জেগে উঠল?

অরুণ চৌধুরী

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২২ | ০২:২৪ | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২২ | ০৩:২৭

মীর সাব্বিরের পরিচিতি অভিনয় শিল্পীর। সেই পরিচয়ের মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হলো সুযোগ্য নির্মাতার। ৩১ ডিসেম্বর মুক্তি পায় তার নির্মিত প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র 'রাত জাগা ফুল'। সম্প্রতি স্টার সিনেপ্লেক্সে ছবিটি দেখলাম। সেদিন প্রেক্ষাগৃহ ছিল লোকারণ্য। আমি একজন নির্মাতাও। তাই দর্শক প্রতিক্রিয়াও আমার লক্ষ্য। সিনেমার প্রথমার্ধ ছিল পিনপতন নীরবতা। বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি, এ সিনেমার মূল আকর্ষণ হবে দ্বিতীয় ভাগে।

২০২১ সালের শেষ ছবি 'রাত জাগা ফুল'। তাই দর্শক মনোযোগের কেন্দ্র ছিল এই ছবিটি। হতাশ করেনি। শুরুতেই সেটাও বলে নেওয়া ভালো।

'ফোটে ফুল ফোটে/রাত জাগা ফুল ফোটে' আখ্যানভাগে এ শ্রুতিমধুর গানটা দর্শককে সিটে বসিয়ে রাখে। গ্রামের যুবক রইস পাগলা। এক নামে সবাই চেনে তাকে। শ্মশ্রুমণ্ডিত। ঝাঁকড়া চুলধারী। এই যুবক পশু-পাখির ভাষা বোঝে। গ্রামের মানুষ, শহরের মানুষ। তবুও তার মূল্যায়ন নেই। আছে তাচ্ছিল্য। এই রইস যেন এক আগাছা। একাত্তরের যুদ্ধে এ শিশু জন্ম নেয়। তারপর বনে-বনে ঘুরে বেড়ায় এই ছেলে। কিন্তু তার অদ্ভুত ক্ষমতা। আকর্ষণ করে সবাইকে। গ্রামে ঘুরতে আসা এক সুদর্শন তরুণীকেও আকর্ষণ করে। গ্রামের মামাবাড়িতে, আবুল হায়াতের কাছে এসেছিল মেয়েটি। রইস পাগলার অলৌকিক ক্ষমতায় মুগ্ধ হয় ঐশী নামের তরুণী। ঐশী তার প্রেমিকের সাহায্য নিয়ে শহরের এক পাঁচ তারকা হোটেলে ওঠায় রইস পাগলাকে। উদ্দেশ্য, যোগব্যায়ামের ট্রেইনার নাজনীন চুমকির সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবে। কারণ চুমকিও অনেক ক্ষমতা রাখে। চুমকি অবধারিতভাবেই রইসের আচরণে আলোড়িত হয়। শহরের সব আলোকিত মানুষের কাছে উপস্থাপন ছিল ওর পরিকল্পনা। রইসের মন তাতে নেই। বিখ্যাত হবে। হবে নামডাক। হবে টাকাকড়ি। রইস পাগলা কুকুর নিয়ে ঘুরতে চলে যায় চিডিয়াখানায়। সেখানে বাঘ, ভালুক, হরিণ, পাখ-পাখালি দেখে মুগ্ধ হয়। মনও খারাপ হয়। পশু-পাখিদের আটকে রাখাতে তার খারাপ লাগে। সেখানে দুই বয়স্ক মহিলা দিলারা জামান ও শর্মিলী আহমেদের আলোচনা দেখে। সিনিয়র সিটিজনরা কত অসহায়। তা দেখেও আহত বোধ করে রইস। ভাবে, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য কিছু করা যেত যদি! প্রতিবাদচিন্তাটা মনে পুষে রাখে।

সেটা ভেবে যখন রইস আবারও একই হোটেলে ফিরে আসে, রইসের জন্য অপেক্ষা করে নতুন বিস্ময়। গল্পের ফাইনাল টার্নিং। নতুন ঘটনা। আমূল পাল্টে যায় কাহিনি। এখানেই 'রাত জাগা ফুল' ছবির সার্থকতা।

দর্শক পেল নতুন নাজনীন চুমকিকে। যোগব্যায়াম খ্যাত শিক্ষক চুমকি আবিস্কৃত হয় ভিন্ন অবয়বে। গল্পটা বললে দর্শকস্পৃহা কমে যেতেই পারে। দর্শক ছবিঘরে গিয়ে সাব্বিরের প্রথম কাজ দেখুক- সেটাই প্রত্যাশা।

গল্পের এই টার্নিং পয়েন্ট নিশ্চয়ই দর্শক আকর্ষণের কারণ হবে। হলমুখী করবে। বাংলা ছবির দুঃসময় কাটুক। আমরাও চাই। বলতে পারি, রাত জাগা ফুল-এর কনসেপ্ট অনেক সিনেমার চেয়ে আলাদা। সিনেম্যাটোগ্রাফার মাসুম নিষ্ঠাবান। পরিশ্রমী। সৃজনশীল। ছবিটিতে নতুন পরিচয় মিলবে তার। সম্পাদনাও ভালো। চিত্রনাট্যে ঘাটতি আছে কোথাও কোথাও। আরও একটু হয়তো মুন্সিয়ানার দরকার ছিল। মেলার আয়োজন সুন্দর। সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড। গানগুলোও চমৎকার। পরিচালকের বার্তা পুরস্কার পাওয়ার দাবি রাখে। পাশাপাশি ছবির অভিনয়শিল্পীদের অভিনয় দুর্দান্ত। বিশেষ করে ছোট ছোট চরিত্রগুলোয় যারা অভিনয় করেছেন তারাও দর্শক মনোযোগ কেড়েছেন। ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত, ফজলুর রহমান বাবু, মীর সাব্বির, নাজনীন হাসান চুমকি ও জান্নাতুল ঐশী। সবাই সবার জায়গাতেই স্ব-স্ব মহিমায় ঊজ্জ্বল। এই ছবিতে নতুন মাত্রায় পাওয়া যায় অভিনেতা-পরিচালক মীর সাব্বিরকে।

আরও পড়ুন

×