ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

প্রিয় হুমায়ুন ফরীদি

প্রিয় হুমায়ুন ফরীদি

হুমায়ুন ফরীদি [২৯ মে, ১৯৫২-১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১২]

--

প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ২২:৫২

আজ ১৩ ফেব্রুয়ারি, বরেণ্য অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদির দশম মৃত্যুবার্ষিকী। অবিস্মরণীয় এই অভিনেতাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন শিমূল ইউসুফ

হুমায়ুন ফরীদি যেন এক দীর্ঘশ্বাসের নাম। কেবল সহকর্মী নই, একে অপরের ভালো বন্ধু ছিলাম আমরা। ব্যক্তি ফরীদিকে আমি ভাই হিসেবে, বন্ধু হিসেবে আপন করে নিয়েছিলাম। সৃষ্টি নিয়ে একই রকম ভাবনা, একসঙ্গে দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া, হাসি-গান-গল্প-আড্ডার মধ্য দিয়ে রক্তের সম্পর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে আত্মার সম্পর্কে পৌঁছেছিলাম আমরা। মনে হতো, তিনি যেন আমার ঘরেরই একজন। মন চাইলে যে কোনো সময় বাসায় চলে আসতেন ফরীদি। এসেই বলতেন- 'কী রেঁধেছিস? ভাত দে, খিদা লাগছে।' এই কথাগুলো এখনও কানে বাজে।

ফরীদি কেবল অভিনয় করতেন না; অভিনয়ের সঙ্গে মেধা ও বুদ্ধির সমন্বয়ও ঘটাতেন। অভিনয় যেন তার রক্তেই ছিল। তাই অভিনয়ের জন্য কোনো কষ্ট করতে হয়নি। ঢাকা থিয়েটারে তার প্রথম নাটক ছিল 'শকুন্তলা'। সেখানে তক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেন ফরীদি। প্রথম নাটকেই সবার নজরে পড়েন। নাটকের রিহার্সেল হয়েছিল টিএসসিতে। সেখানেই ফরীদির সঙ্গে আমার প্রথম দেখা হয়। এখনও চোখে জ্বলজ্বল করছে সেদিনের স্মৃতি। ফরীদিকে নিয়ে এসে বাচ্চু [নাসির উদ্দীন ইউসুফ] বলল, 'ছেলেটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে। আজকে তার রিডিং হবে।' কী রিডিং করে তা শোনার জন্য মনোযোগী হয়ে বসে পড়লাম। জাহাঙ্গীরনগর থেকে এসে কী এমন করবে! মনে মনে এটাই ভাবছি। কিন্তু রিডিং শুরুর পর চমকে গেলাম, তার অভিব্যক্তি মন্ত্রমুগ্ধ করে দিল সবাইকে।

একজন হুমায়ুন ফরীদির যা দেওয়ার ছিল, যা করতে পারত- তার অনেক কিছুই করতে পারেনি। এটি আমার জন্য অনেক কষ্টের। তার মতো অভিনেতাকে আমরা ব্যবহার করতে পারলাম না। ফরীদি অসম্ভব রুচিশীল ও উদার মনের মানুষ ছিল। যাকে ভালোবাসত, তাকে মন দিয়েই ভালোবাসত। কোনো ভনিতা তার মধ্যে দেখিনি। রবীন্দ্রসংগীত, পুরোনো দিনের আধুনিক গানে অন্য রকম দখল ছিল।

নাটকের শো শেষ করে আমরা গলা ছেড়ে গাইতাম। ফরীদির প্রাণবন্ত গলা আসর মাতিয়ে রাখত। তার হাসিমাখা মুখটা বারবার মনে পড়ে। কোথাও ঘুরতে গেলে খুব মজা করত। মাঝেমধ্যে অদ্ভুত সব ঘটনা ঘটাত। আসলে ফরীদি ছিল এমনই- মানুষ হিসেবে সাধারণ আর শিল্পী হিসেবে অসাধারণ। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী এই শিল্পীর মৃত্যু নেই। সৃষ্টি দিয়ে আজীবনই থাকবে স্মৃতিতে অমলিন।

আরও পড়ুন

×