ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ইউক্রেনের নারীদের অন্য যুদ্ধ

ইউক্রেনের নারীদের অন্য যুদ্ধ

আব্দুল্লাহ আল মামুন

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২২ | ২৩:৪৮

যে কোনো যুদ্ধে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় নারী ও শিশুরা। বর্তমান সময়ের আলোচিত রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণেও নারীরা ক্ষতির সম্মুখীন যেমন হচ্ছেন, তেমনি যুদ্ধে ইউক্রেনের নারীদের রয়েছে বিস্তর প্রভাব। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশই নারী। ইউএন ওমেনের এক তথ্য মতে, চলমান যুদ্ধে ইউক্রেনের ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ পাশের কয়েকটি দেশে উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে, যার অধিকাংশই নারী ও শিশু।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থেকে প্রতিরোধও গড়ে তুলছেন দেশটির নারীরা। ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে বর্তমানে ৩২ হাজারেরও বেশি সশস্ত্র নারী যোদ্ধা রয়েছেন। ইউক্রেনের সরকারের ঘোষণা মতে, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী কোনো পুরুষ দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না। বাবা, ভাই, প্রেমিক বা স্বামী যখন যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন অশ্রুসজল চোখে তাদের বিদায় দিচ্ছেন নারীরা। অনেকে আবার সৈনিকদের সেবায় বা হাসপাতালগুলোয় স্বেচ্ছাসেবক হিসেবেও যোগ দিচ্ছেন। পাশাপাশি নিজেদের স্মার্টফোন ব্যবহার করে রাশিয়ান সহিংস হামলার ভিডিও ধারণ করে সেগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বিশ্বব্যাপী।

যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা এক রুশ সৈনিকের সামনে দাঁড়িয়ে এক বয়স্ক ইউক্রেনীয় নারীর সাহসী প্রতিবাদের ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ছাড়াও বেসামরিক পুরুষদের যুদ্ধ প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রায় সব বয়সী নারীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের হাজারো ছবি ঘুরছে ইন্টারনেট দুনিয়ায়। ইউক্রেনের নারী সংসদ সদস্য কিরা রুদিক দেশ রক্ষায় নিজের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। অস্ত্র হাতে নিজের একটি ছবি টুইটারে প্রকাশ করে লিখেছিলেন, 'আমাদের পুরুষরা যেভাবে মাটিকে রক্ষার জন্য কাজ করছেন, আমাদের নারীরাও ঠিক একইভাবে কাজ করবেন।' রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে দেশটির রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, সুশীল সমাজের বিশেষজ্ঞ, গৃহিণী থেকে বিশ্বসুন্দরী, সাধারণ নারী থেকে শিল্পী সব স্তরের নারী দেশকে রক্ষায় হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন।
ঐতিহ্যগতভাবেই ইউক্রেনের নারীরা দেশের প্রয়োজনে প্রতিবাদ মুখর থেকেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তিতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ইউরোপের অংশ হওয়ার দৃঢ় ইচ্ছা প্রকাশ করে কয়েক হাজার ইউক্রেনীয় শুরু করেছিল 'মর্যাদার লড়াই'। এ লড়াইয়ের মূলে ছিলেন নারী এবং এতে অংশগ্রহণকারীর ৫০ শতাংশই ছিলেন নারী। ২০১৯ সালের নির্বাচনের পর পার্লামেন্টে নারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে ২০ শতাংশে উন্নীত হয়।

ইউক্রেন সরকারের এক তথ্য মতে, দেশটিতে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার নারী সন্তান জন্ম দানের পর্যায়ে রয়েছেন। যাদের মধ্যে ১২ হাজার নারীর জীবন রক্ষাকারী জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন হতে পারে। এ অবস্থায় যুদ্ধের সহিংসতায় বিপন্ন হতে পারে তাদের ও অনাগত সন্তানদের জীবন। এই নারীর অনেকেই পাশের রাষ্ট্রগুলোয় যেমন পালিয়ে গেছেন, অনেকে আবার দেশেই অবস্থান করছেন। ইউক্রেনের অনেক নারী রাশিয়ার সৈনিকদের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, এমন খবরও প্রকাশিত হচ্ছে বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমগুলোয়। যে কোনো যুদ্ধের ভয়াবহতায় নারীরা যেমন বিপন্নতার শিকার হন, তেমনি দেশের প্রয়োজনে তারাও থাকেন সামনের কাতারে।

আরও পড়ুন

×