এই গরমে ডায়রিয়া

ডা. নাফিসা আবেদীন
প্রকাশ: ০৮ এপ্রিল ২০২২ | ১২:০০ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২২ | ০১:৫৮
চলছে সিয়াম সাধনার মাস, পাশাপাশি চারদিকে ভ্যাপসা গরম। এ রকম গরম আবহাওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া-আক্রান্ত নানা বয়সের রোগীর ভিড়। অসহ্য গরমে গলা যখন শুকিয়ে যায়, তখন চোখের সামনে যে ধরনের পানীয় থাকুক না কেন, তা দিয়ে গলা ভেজাতেই মন ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পানীয় দূষিত না বিশুদ্ধ সেদিকে কারও আর নজর থাকে না। এভাবে খাদ্য ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকে। আর ডায়রিয়াকে বলে সামার ডায়রিয়া। পানিবাহিত ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের পানিকে জীবাণুমুক্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্য-সংক্রান্ত ক্ষেত্রে খাদ্যের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে গ্রীষ্ফ্মের এই রমজানে ডায়রিয়া আক্রান্তসহ সাধারণ মানুষেরও সেহরি ও ইফতারে সতর্ক থাকা উচিত।
ডায়রিয়ার জীবাণু
সাধারণত পরিপাকতন্ত্রে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণেই ডায়রিয়া হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এ সময় ব্যাপক হারে ডায়রিয়ার প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস, কখনও কখনও নোরো ভাইরাস। তবে পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে বা প্রবল জ্বর দেখা দিলে তা ভাইরাস নয়, বরং ব্যাকটেরিয়া বা পরজীবী সংক্রমণের কারণে হয়েছে বলে ধরে নিতে হবে। এ সময় একটু সচেতন হলেই সুস্থ থাকা সম্ভব। এই গরমে আমাদের দৈনিক পানির চাহিদা অন্তত দুই থেকে তিন লিটার। তবে সেই পানি হতে হবে অবশ্যই বিশুদ্ধ। পানি ফুটিয়ে তারপর ঠান্ডা করে পরিস্কার পাত্রে সংরক্ষণ করে পান করা সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী। অনেকে ফিল্টার ব্যবহার করেন, তবে ফোটালে সব ধরনের জীবাণু স্পোরসহ ধ্বংস হয়। ঘরের বাইরে, বিশেষ করে রাস্তায় বিক্রি করা শরবত বা অন্য কোনো পানীয় পান করা যাবে না।
যে কারণে হয়
অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন জীবনযাপন, যেখানে-সেখানে ও পানির উৎসের কাছে মলত্যাগ, সঠিকভাবে হাত না ধোয়া, অপরিচ্ছন্ন উপায়ে খাদ্য সংরক্ষণ দোকান, রেস্তোরাঁ বা বাসায় ফ্রিজের খাবারে পচন ধরা খাবার গ্রহণের ফলে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
যা করণীয়
ডায়রিয়া হলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়ে যায় এবং রক্তে লবণের তারতম্য দেখা দেয়। এ দুটোকে রোধ করাই ডায়রিয়ার মূল চিকিৎসা।
প্রাথমিক পরিচর্যা
- প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর বয়স অনুযায়ী পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন পান করাতে হবে।
- খাবার স্যালাইন ছাড়াও ডাবের পানি, ঘরে তৈরি তরল খাবার যেমন ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, তাজা ফলের রস ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। তবে ফলের রসের কারণে ফ্রুক্টোজের প্রভাবে রোগীর পেট ফেঁপে বিপত্তির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- স্বাভাবিক খাবারও পাশাপাশি চালিয়ে যেতে হবে।
- বুকের দুধ খাওয়া শিশুরা খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি বুকের দুধও খাবে।
জটিলতা
এ ছাড়া পাতলা পায়খানার সঙ্গে রক্ত, জ্বর, প্রচণ্ড পেটব্যথা বা কামড়ানো, পিচ্ছিল মল, মলত্যাগে ব্যথা ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, চোখ গর্তে ঢুকে যাওয়া বা জিভ ও ত্বক শুস্ক হয়ে যাওয়া, রোগীর মাঝে অশান্তি বা নিস্তেজ ভাব পানিশূন্যতার লক্ষণ। এসব লক্ষণ দেখা দিলে বা বমির কারণে পর্যাপ্ত স্যালাইন না খেতে পারলে রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে করণীয়
- ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে বা সুস্থ হয়ে ওঠার পর যারা রোজা রাখছেন, তাদের অবশ্যই তরলজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। যেমন ডাবের পানি, স্যালাইন ইত্যাদি বেশি বেশি পান করতে হবে। রোজাদাররা ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করবেন। এতে পানিশূন্যতা দূর হবে।
- রাস্তাঘাটের শরবত, পানি, খাবার ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
- যতই লোভনীয় হোক, পচা-বাসি খাবার খাওয়া যাবে না।
-হাত ভালোভাবে পরিস্কার করে খাবার খেতে হবে।
- ছয় মাসের কম বয়সী শিশুকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে।
-যদি সম্ভব হয় তবে শিশুকে অসুস্থ লোক বা রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে।
- খাবার তৈরি ও শিশুকে খাওয়ানোর আগে এবং মলত্যাগের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
-সবসময় সিদ্ধ করে পানি ব্যবহার করতে হবে।
- বোতলের দুধ পান করানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ছোট বাচ্চাদের হাত দিয়ে যতটা সম্ভব কম খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে।
-পাকা পায়খানা বা স্যানিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করতে হবে।
- কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হতে পারে। তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে। নিজের ইচ্ছেমতো ওষুধ খাওয়া যাবে না। এতে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
-যদি চোখ বসে যায়, রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে, অচেতন হয়ে পড়ে, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় বা বারবার বমির কারণে পানি বা স্যালাইন বেরিয়ে গেলে হাসপাতালে নিতে হবে।
- বিষয় :
- ডায়রিয়া
- ডায়রিয়া-আক্রান্ত
- ব্যাকটেরিয়া