ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

মানবতার ফেরিওয়ালা ইদ্রিস

মানবতার ফেরিওয়ালা ইদ্রিস

এক উপকারভোগীর সঙ্গে ইদ্রিস আলী (ডানে)

রুবেল মিয়া নাহিদ

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২২ | ২২:৩৭ | আপডেট: ২১ আগস্ট ২০২২ | ০০:২৮

ইদ্রিস আলী। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক। চাকরির ফাঁকে ছোটেন অসহায় মানুষের দ্বারে। বৃদ্ধাশ্রমে খাবার ও নতুন পোশাক পৌঁছে দেন। অভাবীদের চিকিৎসা খরচ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেন। স্বল্প আয়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি গৃহহীনদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করেন। আবার কখনও অভাবী শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচও জুগিয়ে দেন। এ ছাড়াও যে কোনো মানবিক বিপর্যয়ে ছুটে যান ইদ্রিস আলী। তাই স্থানীয়দের কাছে তিনি কেবল শিক্ষকই নন, মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবেও পরিচিত।

মানবিক এই প্রভাষকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সুভদ্রাকাঠী গ্রামে। দিনমজুর বাবার ৯ সদস্যের পরিবারে অভাব-অনটনে বেড়ে ওঠা ইদ্রিস আলী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন বাড়ির গাভি বিক্রি করে। এরপর শুরু হয় তাঁর জীবন সংগ্রামের নতুন অধ্যায়। নিজেকে অভাবী মানুষের পাশে দাঁড় করানোর স্বপ্ন দেখতে থাকেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শুরু করেন টিউশনি। ৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে। চাকরিতে যোগদান করে সবাই যখন আরাম-আয়েশে দিন কাটাতে ব্যস্ত, তখন তিনি মানবতার সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেন।

উপকূলীয় এলাকায় বাড়ি হওয়ায় ছোট থেকেই দেখেছেন প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে মানুষের বেঁচে থাকার দৃশ্য। বন্যা, আইলা, বুলবুলসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাছে মানুষের নিরুপায় চেয়ে থাকা ও অসহায় আর্তনাদ। এসব অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে ২০১৮ সালে চাকরিতে যোগদানের পরই গড়ে তোলেন সামাজিক সেবা সংগঠন- হিউম্যানিটি ফার্স্ট। এ সংগঠনের মাধ্যমে শুরু করেন অসহায়দের সহায়তা কার্যক্রম। সাতক্ষীরা থেকে এর কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে খুলনা, ফেনী, মাগুরা, লালমনিরহাট, ঢাকা, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে সংগঠনটির কার্যক্রম। 

প্রতিবন্ধী, বিধবা, পঙ্গু, স্বামী পরিত্যক্ত ৯৫টি পরিবারকে কর্মসংস্থান করে দিয়েছে ইদ্রিসের হিউম্যানিটি ফার্স্ট। ৩৫ পরিবারের মধ্যে টিউবওয়েল স্থাপন করে দিয়েছেন তিনি। তিনটি লঞ্চ পাঠাগারের পাশাপাশি ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলও গড়ে তুলেছেন। ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন ৬৫ গৃহহীন পরিবারকে। এ ছাড়াও ফ্রি মেডিসিন ব্যাংক দুটি, প্লাবিত ৬০০ পরিবারের মধ্যে চুলা বিতরণের পাশাপাশি প্রতিবন্ধীদের মধ্যে হুইলচেয়ার বিতরণ করেছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সতর্কতা, সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া ও দুর্যোগ-পরবর্তী পুনর্বাসনেও কাজ করে হিউম্যানিটি ফার্স্ট।

ইদ্রিস আলী বলেন, 'মানুষের জন্য কিছু করতে পারার মাঝে আনন্দ খুঁজে পাই। যখন কোনো অসহায়, দুস্থ মানুষকে সাহায্যের মাধ্যমে তাঁর মুখে হাসি ফোটাতে পারি তখন হৃদয় যে প্রশান্তিতে ভরে যায় তা বলে বোঝানো যাবে না।'হ

আরও পড়ুন

×