ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

জীবনের গল্প

অদৃশ্য কাঁটাতার

অদৃশ্য কাঁটাতার

সাদিয়া সৌমিতা

প্রকাশ: ২২ আগস্ট ২০২২ | ১২:০০

প্রবহমান জীবন শত বাধা পেরিয়ে ছুটে চলে গন্তব্যে। রেখে যায় স্মৃতি, সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা। সুহৃদদের লেখা অনুগল্প নিয়ে আয়োজন...
খুব সকালে বাবার চেঁচামেচিতে ঘুম ভাঙল ফারহার। ৮টাই তো বাজে, তবুও বাবা তাকে একরকম জোর করেই ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। ইদানীং বাবার ব্যবহার যে বদলে যাচ্ছে, তা সে ভালোই বুঝতে পারছে। ঘুম থেকে ওঠার পর বই খুলে বসতেই সায়নের কথা মনে পড়ল ফারহার। হ্যাঁ ঠিকই, বিষয়টা তারা সেদিনও একসঙ্গে আলাপ করছিল। আজকে সায়ান তার থেকে কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। আর দূরত্বটা কাঁটাতারের মতো। কিছুদিন আগেও জীবনটা সুন্দর ছিল। সহজ ছিল। সব জটিলতার কারণ হয়তো তারা নিজেরাই। একে অন্যের ওপর মুগ্ধ হওয়ার আগে তারা ভেবে দেখেনি যে তাদের এত মিলের মাঝে একটি অমিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফারহাকে মেয়ের মতো আদর করা, প্রসাদের ভাগ দেওয়া সায়ানের মা আজ তাকে মেনে নিতে নারাজ। নিজের পছন্দেই বিয়ে করিস বলতে থাকা ফারহার বাবা এখন আর তার সঙ্গে নেই। নিজেদের পছন্দের কথা বলার পরই সব এভাবে বদলে গেল। ফারহা শুধু ভাবছে- এই কি তার সেই বাবা, যিনি নিজেকে অসাম্প্রদায়িক মনে করেন? বাবা হয়তো নিজের পছন্দে বিয়ে করা বলতে মুসলিম অভিজাত পরিবারের বিসিএস ক্যাডার সুদর্শন যুবককে বুঝিয়েছিলেন, তাই অন্য ধর্মের বিবিএ-এমবিএ পাস ছেলে তাঁর চলবে না। কিন্তু ফারহা ও সায়ান একে অন্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে গেছে। তবে সে বাবার বেঁধে দেওয়া ছেলেদের দলে পড়ে না। কেন তাকে আগেই বলা হলো না, তার মতের কোনো দাম নেই- এটাই তার ক্ষোভের কারণ।
বাবা রাজি না হওয়ায় চাচার কাছে শেষ মিনতি করেছিল ফারহা। চাচা ধর্মের রেফারেন্স দিয়ে তার বাকি আশাটুকু শেষ করে দিলেন। আর সামাজিকতার পাঠ পড়ানো মা উত্তরে একদম বলেনি- তার সমাজ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। যখন সে নিজের পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়নি, তখন কেউ আসেনি। হতাশা থেকে বাঁচিয়ে তার পাশে দাঁড়িয়েছিল সায়ান। সমাজের গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে গেলে কী অদ্ভুতভাবে ধার্মিক হয়ে ওঠে কিছু মানুষ!
সায়ান অসাধারণ। অন্যের উপকারেই তার শান্তি। একে অন্যকে এতটা ভালোবেসেও তারা অসহায়। তবুও তারা আলাদা। হঠাৎ মায়ের ডাকে ফারহার ঘোর কাটল। বাবার মনমতো ছেলে এসেছে তাকে দেখতে। তাদের গল্পের ইতি ঘটাতে পুরো দুনিয়া যেন ব্যস্ত। বিষণ্ণ মনে নিরুপায় ফারহা বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার দুটো লাইন লিখে উঠে যায়, 'দুটো মানুষ, দুটো মন মিলেমিশে একাকার, তার মাঝে ইতি টেনে দেয় সাম্প্রদায়িকতার অদৃশ্য কাঁটাতার।'
সুহৃদ দিনাজপুর

আরও পড়ুন

×