ভাবনা একই, তবে ভাবুন অন্যভাবে

জেমস ক্যামেরন [১৬ আগস্ট ১৯৫৪; ক্যাপুস্কাসিং, কানাডা]
আলাউদ্দিন আলাদিন
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৪:২১
জেমস ক্যামেরন। অস্কারজয়ী কানাডিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা। টাইটানিক, টার্মিনেটর, অ্যাভাটারের মতো সাড়াজাগানো এই চলচ্চিত্র নির্মাতার আমেরিকান একাডেমি অব অ্যাচিভমেন্ট এবং টেড শোকে দেওয়া সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন আলাউদ্দিন আলাদিন
সায়েন্স ফিকশন বা কল্পকাহিনিনির্ভর বইয়ের আবির্ভাবের সময় আমি পড়তাম মাধ্যমিকে। স্কুলবাসে বসে নিয়মিত সায়েন্স ফিকশন পড়তাম। বিভিন্ন লেখকের। বিজ্ঞান আমাকে খুব আকৃষ্ট করত। ভাবতাম এসব কল্পকাহিনির কীভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ঘটানো যায়। ষাটের দশকের শেষের দিকে আমরা যখন চাঁদে গেলাম, মহাসাগরে অন্ব্বেষণ শুরু করলাম, তখন আশ্চর্যজনক বিশেষ প্রাণী বা স্থানের সঙ্গে পরিচিত হতে থাকলাম; যা আগে কখনও ভাবতেও পারিনি। মনে পড়ে আমি ছোটবেলায় কল্পনানির্ভর বিভিন্ন ছবি আঁকতাম। বিজ্ঞানের কল্পকাহিনির একটি চিত্র আমার মাথায় ঘুরতে থাকে সেই এইটুকুন বয়স থেকে। পরে ভিনগ্রহের প্রাণী, এলিয়েন, রোবট ও স্পেসশিপের ছবিও এঁকেছি অনেক। সায়েন্স ফিকশন পড়ে অবাক হয়ে ভাবতাম আর কল্পনার পিঠে চড়ে বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখতাম।
সাগরতলে স্বপ্ন ভাসে
১৫ বছর বয়সে সিদ্ধান্ত নিলাম সার্টিফায়েড স্কুবা ডাইভার হওয়ার। তবে সমস্যা হয়ে দাঁড়াল দূরত্ব। আমার বাড়ি ছিল কানাডার প্রত্যন্ত এক গ্রামে, যেখান থেকে সমুদ্রের দূরত্ব প্রায় ৬০০ মাইল। কিন্তু আমি হাল ছেড়ে দিইনি। ভালো স্কুবা স্কুলের সন্ধান করছিলাম। অবশেষে নিউইয়র্কের বাফেলোতে বাজেটের মধ্যে এক স্কুবা স্কুলে ভর্তি হয়ে যাই। জীবনের প্রায় তিন হাজার ঘণ্টা ব্যয় করেছি সাগরতলে; জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে পরিচিত হতে। আশ্চর্যজনক এক জগৎ, যা আমাদের কল্পনার চেয়েও সুন্দর!
অ্যাভাটার ও আমার ভাবনারা!
১৯৭৬ সালের দিকে ভিন্ন ধারার চলচ্চিত্র দিয়ে যাত্রা শুরু করি, যা আগের সব নিয়ম ভেঙে দেয়! আমি বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে গিয়ে ছবি বানাতে শুরু করি। যেহেতু আমি ছবি আঁকতে ভালোবাসতাম, তাই বিভিন্ন সময়ে আমার ভাবনায় আসা চরিত্রগুলো এঁকে রেখে দিতাম। পরবর্তী সময়ে সেই আঁকা ছবিগুলোর বাস্তবে রূপ দিই ২০০৯ সালে অ্যাভাটার সিনেমায়। প্রায় ৩০ বছর আগে আঁকা আমার স্বপ্নের চরিত্র নিয়ে নির্মিত সিনেমাটি ব্যবসায়িক সফলতাও পায়। সেই ধারাবাহিকতায় আবারও পথে নামি এর সিক্যুয়াল নির্মাণে। যদিও এর জন্য করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম।
নেমে পড়ূন কাজে
কেবল চলচ্চিত্রই নয়; যে কোনো কাজ করার ইচ্ছে থাকলে অতিরিক্ত না ভেবে কাজে নেমে পড়ূন। কারও জন্য অপেক্ষা করবেন না। অনেকে শুরু থেকেই প্রতিটি কাজ যথাযথভাবে করার পরিকল্পনা করেন। এই পরিকল্পনাতেই সময় চলে যায়। একসময় কাজ শুরুই করা হয় না। তাই কাজ নিখুঁতভাবে শুরুর অপেক্ষা না করে এখনই শুরু করে দিন।
ভালো কাজ মানেই ঝুঁকি...
প্রতিটি বড় কাজ এবং সফল কাজের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করে ঝুঁকি নামের এক দানব। যাকে কোনোভাবেই ভয় পাওয়া যাবে না। অনেকেই আমার কাছে পরামর্শ চান। আমি তাঁদের বলি- নিজেকে কোনো সীমাবদ্ধতার বেড়াজালে আটকে রাখবেন না। ঝুঁকি নিন। যে কোনো নতুন আবিস্কার ঝুঁকি ছাড়া আসে না। এই ঝুঁকির মাধ্যমেই সফল ও সেরা হওয়ার চেষ্টা করুন। আমি অ্যাভাটারের চেয়ে টার্মিনেটরকে সেরা ফিল্মের তালিকায় রাখি; কেননা আমার অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নির্মাণ করেছি এই চলচ্চিত্র।
আমি সবসময় চেষ্টা করি দর্শকদের সেরা কাজ উপহার দেওয়ার। আপনার ব্যক্তিগত প্রতিটি প্রচেষ্টাই হোক ভিন্ন ও সেরার পথে এগিয়ে থাকার!