ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

শিশু অ্যালার্জির চার ধাপ

শিশু অ্যালার্জির চার ধাপ

ডা. আহাদ আদনান

প্রকাশ: ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৫:৪৬

অ্যালার্জি বা কোনো বস্তুর প্রতি অতিসংবেদনশীলতার কিছু লক্ষণ খুব ছোটবেলা থেকেই দেখা যায়। এক ধরনের লক্ষণ থেকে দিনে দিনে আরেক অ্যালার্জির প্রকাশ পায়। দীর্ঘদিন খেয়াল করলে মনে হয় যেন লক্ষণগুলো একটির পর আরেকটি মিছিল করে এগিয়ে আসছে। এই বিরক্তিকর উপসর্গগুলোকে আমরা বলি, অ্যালার্জিক বা অ্যাটপিক মার্চ ।

প্রথম ধাপ
জন্মের প্রথম কয়েক মাসে অনেক শিশুর গাল, কনুই, হাঁটুর পেছনসহ শরীরের অনেক অংশে লাল লাল ছোপ হয়। চামড়া চুলকালে মোটা হয়ে যায়। মাথার তালুতে চটলা পড়ে আঁশে ভরে টুপির (ঈজঅউখঊ ঈঅচ) মতো মনে হয়। আবার চুলকাতে চুলকাতে এসব স্থানে ঘা হতে পারে। এগুলোকে আমরা বলি অ্যাটপিক ডার্মাটাইটিস বা অ্যাকজিমা। আক্রান্ত চামড়া ময়েশ্চারাইজার (তেল, লোশন) দিয়ে আর্দ্র রাখা, চুলকানি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার করতে বলা হয়।

দ্বিতীয় ধাপ
এই শিশুরাই প্রথম বছর পার করতে না করতে আসে নাকে-চোখে পানি ঝরার সমস্যা নিয়ে। একটু ধুলাবালি, বিশেষ খাবার, এমনকি কিছু ওষুধেও এদের নাকে পানির সঙ্গে হাঁচি, কাশি, চোখ লাল হয়ে পানি পড়তে দেখা যায়। এই সমস্যাকে আমরা বলি, অ্যালার্জিক রেনাইটিস। সঙ্গে চোখ উঠলে বলি, অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস। উপরি হিসেবে অনেক শিশুর নাকে পলিপ, সাইনোসাইটিস দেখা যায়। এদের চিকিৎসায়ও অ্যান্টিহিস্টামিন ওষুধ এবং বিশেষ কিছু নাকের ড্রপ বা স্প্রে লাগে।

তৃতীয় ধাপ
এই শিশুরা পরের ধাপে বিশেষ বিশেষ খাবারে অ্যালার্জির সমস্যা অনুভব করে। একই খাবারে সবার সমস্যা নাও হতে পারে। আমাদের দেশের অভিজ্ঞতায় গরু-ছাগলের দুধ, গরুর মাংস, ইলিশ, চিংড়ি, বেগুন, পুঁইশাক, কুমড়া প্রভৃতি খাবারে সমস্যা বেশি হতে দেখি। আবার সবজিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারও ক্ষতির কারণ। এরা অনেকেই চামড়ায় চাকা, চুলকানি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে আমাদের কাছে আসে।

চতুর্থ ধাপ
প্রথম তিনটি ধাপ পার হয়ে আক্রান্ত শিশুরা ভোগে হাঁপানি বা অ্যাজমায়। ঘন ঘন কাশি লেগে থাকা, ঘুমের সময় কাশি হয়ে ঘুম ভেঙে যাওয়া, নেবুলাইজেশন কিংবা মুখে খাওয়ার কাশির ওষুধে (বিশেষ করে সালবিউটামল) দ্রুত উপশম হওয়া হাঁপানির ইঙ্গিত করে। অ্যালার্জির এ ধাপগুলো জানা থাকলে অসুখ নির্ণয়, চিকিৎসা পদ্ধতি বাছাই এবং ভবিষ্যৎ পরিণতি ধারণা করতে সুবিধা হয়। প্রথম ধাপেই যদি আমরা একে প্রতিরোধ করতে পারি, তাহলে পরের ধাপগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়। আমরা রোগীদের বেশ কিছু নিয়ম মানতে বলি। খুব সংক্ষেপ করে বললে নিয়মগুলো নিম্নরূপ।

১। জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ এবং দুই বছর পর্যন্ত বাড়তি খাবারের সঙ্গে বুকের দুধ চালিয়ে নিলে সারাজীবনের জন্য অ্যালার্জির প্রকোপ অনেক কমে যাবে।
২। আঁশযুক্ত খেলনা, কার্পেট, কুশন পরিহার করা, ঘর ঝাড়ু দেওয়ার সময় শিশুকে সরিয়ে রাখা, ঘরে-বাইরে পরোক্ষ ধূমপান এড়ানো, কয়েলের ধোঁয়া থেকে বেঁচে চলা, মুখোশ পরে চলাফেরা করা।
৩। কোনো বিশেষ খাবারে অ্যালার্জি আছে কিনা বের করতে হবে। একই খাবারে সবার সমস্যা নাও হতে পারে। প্রমাণিত অ্যালার্জিযুক্ত খাবার যে কোনো একটি খুব অল্প পরিমাণে দিয়ে দেখতে হবে সমস্যা হচ্ছে কিনা। সমস্যা হলে ওই বিশেষ খাবার বাদ দিতে হবে। একাধিক অ্যালার্জিযুক্ত খাবার একই দিন না দেওয়াই ভালো। রক্ত পরীক্ষা করেও কোনো কোনো খাবারে অ্যালার্জি হতে পারে, সেটি বের করা যায়।
৪। কৃত্রিম রংযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, ক্ষতিকর রাসায়নিকযুক্ত (ফরমালিন, কার্বাইড ইত্যাদি) ফল, সবজি পরিহার করবেন। টাটকা দেশি মৌসুমি ফল বেশি করে খাওয়ার অভ্যাস করুন। আগে কোনো ওষুধে প্রতিক্রিয়া হলে নোট করে রাখুন ও চিকিৎসককে জানান।
৫। টিভি, মোবাইল, ট্যাব দেখা কমিয়ে ঘরের বাইরে খেলাধুলা, হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করুন।
৬। নিয়মমতো টিকা দিন। শিশুদের বাড়তি ফ্লুর টিকা লাগতে পারে।

প্রতিরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা (যেমন ইমিউনোথেরাপি) অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে কাজে দেয়। এই ধাপগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে অতিরিক্ত এবং অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এড়ানো। নিয়ম মেনে চলা আর প্রাথমিক চিকিৎসায় অনেক সময় বড় সমস্যা এড়ানো যায়।া

রেজিস্ট্রার (শিশু বিভাগ), আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।

আরও পড়ুন

×