ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

২০০ বছরের সাক্ষী ঘড়ি

২০০ বছরের সাক্ষী ঘড়ি

নবীউর রহমান পিপলু, নাটোর

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০

নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজপ্রাসাদের প্রবেশ পথে ঢুকতেই চোখে পড়ে প্রকাণ্ড এক লোহার দরজা। সেই দরজার ওপর শোভা পাচ্ছে বিশাল এক ঘড়ি। যুগের সাক্ষী হয়ে এ ঘড়ি প্রায় ২০০ বছর ধরে নির্ঘুম সময় দিয়ে যাচ্ছে।

মহারাজা রামজীবন ও রানী ভবানীর দেওয়ান দয়ারাম রায় এই দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। দয়ারাম রায় ছিলেন তিলি সম্প্রদায়ের। রানী ভবানী বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে তাঁকে দয়ারামপুর এস্টেট ও দিঘাপতিয়া তালুক দান করেন।

নাটোর শহর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব কোণে ১২৫ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাজপ্রাসাদটি বেশ সাজানো। চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর। ভেতরে রয়েছে রাজপ্রাসাদ, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির গাছ শোভা পাচ্ছে। প্রাচীর-সংলগ্ন গোটা রাজপ্রাসাদের চারদিকে রয়েছে পরিখা। সামনে রয়েছে ছোট-বড় কয়েকটি কামান। মুর্শিদকুলি খাঁর রাজত্বকালে যশোরের মুহম্মদপুরে রাজা সীতারাম বিদ্রোহ করলে দয়ারাম রায় নবাব সৈন্যের পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেন এবং সীতারামকে পরাজিত ও বন্দি করে নাটোরে নিয়ে আসেন। নবাব তাঁকে এ সাহসিকতার পুরস্কার হিসেবে একটি তালুক দান করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি এই দিঘাপতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।

১৮১০ সালে দয়ারাম রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে জগন্নাথ রায় রাজা হন। এরপর তাঁর ছেলে প্রাণনাথ রায় রাজা হন। নিঃসন্তান প্রাণনাথের মৃত্যুর পর দত্তক পুত্র প্রসন্ন নাথ রায় রাজার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৮৭ সালে ভূমিকম্পে এই রাজবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাজা প্রমদানাথ রায় দিঘাপতিয়া রাজবাড়িটি নতুনভাবে সুসজ্জিত করেন। এই বংশের সাত প্রজন্ম রাজা হিসেবে পর্যায়ক্রমে এই রাজবাড়ির দায়িত্ব পালন করেন। দেশভাগের সময় এই রাজবংশের উত্তরাধিকাররা ভারতে চলে যান। এর পর ষাটের দশকে এটিকে গভর্নর হাউস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এটিকে গণভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আগের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ির বর্তমান নাম ‘উত্তরা গণভবন’।

জনশ্রুতি রয়েছে, রাজা প্রমদানাথ রায়ের ঘড়ি ও বাড়িপ্রীতি ছিল। তিনি বিদেশ থেকে নানা ধরনের ঘড়ি তৈরি করে এনে প্রাসাদের বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করতেন। এমন একটি ঘড়ি ছিল, যা ১৫ মিনিট পরপর জলতরঙ্গের সুর ছড়িয়ে বেজে উঠত। রাজবাড়ির প্রবেশদ্বারের ওপর প্রকাণ্ড ঘড়িটিও বিদেশ থেকে এনে স্থাপন করা হয়। ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে ঘড়িটি আনা হয়। কয়েক বছর আগে ঘড়িটি একবার মেরামত করতে হয়েছিল। গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের সহায়তায় ঘড়িটির কিছু যন্ত্রাংশ সংযোজনের পর ঘড়িটি আবার সময় দিয়ে যাচ্ছে।

উত্তরা গণভবনের প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরের গ্রাম ভাগনগরকান্দির বাসিন্দা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আদেশ আলী বলেন, দেশ স্বাধীনের পরও বাড়ি থেকে রাজবাড়ির এই ঘড়ির ঘণ্টাধ্বনি শোনা যেত। তবে এখন দূর থেকে ঘণ্টাধ্বনি শোনা না গেলেও ঘড়িটি প্রায় ২০০ বছর ধরে দিনরাত সময় দিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

×