গলার সমস্যা: টনসিল

ডা. মো. আব্দুল হাফিজ শাফী
প্রকাশ: ১২ মে ২০২৩ | ১৮:০০
টনসিল এক ধরনের লসিকাগ্রন্থি বা লিস্ফয়েড টিস্যু। এতে কোনো প্রকার ইনফেকশন বা প্রদাহ হলে আমরা এটাকে টনসিলাইটিস বলি। মানবদেহে গলার ভেতরে দু’পাশে একজোড়া Palatine tonsi থাকে, টনসিলের প্রদাহ বলতে আমরা এর ইনফেকশনকেই বুঝে থাকি। টনসিলের ইনফেকশন একটি সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। শীতে বাড়ে টনসিল। টনসিলাইটিস সাধারণত ৩ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দের ক্ষেত্রে যে একেবারেই হয় না, তা কিন্তু নয়। টনসিল ইনফেকশনের জন্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ই দায়ী। ব্যাকটেরিয়ার ক্ষেত্রে প্রধানত বিটা হেমোলাইটিক স্ট্রেপ্টোকক্কাস দিয়ে হয়। এই ইনফেকশনের অন্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বারবার ঠান্ডা সর্দি লাগা, পুষ্টিহীনতা, পরিবেশ দূষণ, দেহে অপর্যাপ্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অতিরিক্ত কোল্ড ডিংকসে আসক্তি ও আবহাওয়ার পরিবর্তন।
লক্ষণ দেখে কীভাবে টনসিল ইনফেকশন বুঝবেন
-গলাব্যথা এবং সঙ্গে খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে এবং শরীরে ক্লান্তি ভাব থাকে।
-জ্বর ১০২ ডিগ্রি-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে। সঙ্গে মাথাব্যথা ও বমির ভাব থাকতে পারে।
-গলার সাথে কানের সম্পর্ক রয়েছে। তাই টনসিলের ইনফেকশনে কানে ব্যথা থাকবে এবং গায়ে ব্যথা হতে পারে।
-শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় মুখ দিয়ে লালা পড়তে দেখা যায়।
-অনেক সময় মারাত্মক ইনফেকশনে মুখ খুলতে অসুবিধা হতে পারে। এই রকম সমস্যাকে আমরা তীব্র ইনফেকশন বা বা Acute tonsillitis বলে থাকি। চিকিৎসকের দেওয়া উপদেশ মেনে চললে এবং সঠিক সময়ে নিয়মিত ওষুধ সেবন করলে টনসিলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক, মাউথওয়াশ, ব্যথার ওষুধ, এন্টিহিস্টামিন ও প্রচুর পরিমাণে পানি পানের মাধ্যমে এই ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। তবে কেউ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ না করে এবং চিকিৎসকের উপদেশ মেনে না চলে তবে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ হয়ে থাকে, যাকে আমরা Chronic tonsillitis বলে থাকি। চিকিৎসা শাস্ত্রে Chronic tonsillitis কে বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, তবে এই দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন যদি বছরে চার-পাঁচবার করে পরপর দুই বছর হয়, তবে অসুস্থ টনসিল অপারেশন করিয়ে নেওয়াই ভালো।
দীর্ঘমেয়াদি টনসিলের ইনফেকশন থাকলে অপারেশন না করালে নিম্নোক্ত সমস্যা হতে পারে
-টনসিলের ইনফেকশন চারপাশে ছড়িয়ে টনসিলে পুঁজ জমে ফোড়া হতে পারে (Peritonsilar Abscess)
-টনসিল বড় হয়ে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ করে দিলে শ্বাসকষ্টও হতে পারে। এ ছাড়া বড় টনসিলের কারণে খাবার গিলতে গেলে কষ্ট হতে পারে।
-ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা থেকে কানে ইনফেকশন হতে পারে।
-বাতজ্বর বা Rheumatic Fever হতে পারে।
-রক্তের মাধ্যমে টনসিলের জীবাণু কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
-বয়স্কদের ক্ষেত্রে একদিকের টনসিল বড় থাকলে এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ থাকলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই এই ধরনের সমস্যা অবহেলা করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধের মাধ্যমে যদি সমাধান না হয়, তবে টনসিল অপারেশন করানো ভালো এবং নিরাপদ। আমাদের দেশে নিয়মিত টনসিল অপারেশন হচ্ছে। তবে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে ই এন টি সোসাইটি থেকে টনসিল এর রুটিন অপারেশন সর্বোচ্চ সতর্কতা ছাড়া যথাসম্ভব এড়িয়ে যেতে বলা হয়েছে।
তবে আশার কথা, তীব্র ইনফেকশন প্রথমে হলে সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভালো ওষুধ সেবন, উপদেশমতো ঠান্ডা এড়িয়ে চললে, কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করলে এবং আদা-লেবু রং চা পান করলে অপারেশনের টেবিলে যাওয়া থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
কখন টনসিলের অপারেশন করা যাবে না?
-টনসিলে তীব্র ইনফেকশন থাকলে, অর্থাৎ জ্বর বা ব্যথা থাকা অবস্থায় অপারেশন করা যাবে না।
-তিন বছরের কম বাচ্চাদের।
-এ ছাড়া কারও রক্তে হিমেগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকলে বা রক্তশূন্যতা থাকলে।
-হিমোফিলিয়া নামক রক্তরোগের ইতিহাস থাকলে।
-নারীদের মাসিক চলাকালীন অবস্থায়।
[ নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ]
- বিষয় :
- গলার সমস্যা
- টনসিল