ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

মধুর আমার মায়ের হাসি

শিশুর পৃথিবী

শিশুর পৃথিবী

জুয়েল আইচ

জুয়েল আইচ

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৩ | ১৮:০০

সন্তানের জন্য মায়ের আবেগ অনন্তকালের। অন্যদিকে সন্তানের কাছে মায়ের কোল সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। আজ বিশ্ব মা দিবস। বিশ্বের সব মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বিশেষ আয়োজন...

আমার মনে হয় ‘মা’ একটি সর্বজনীন শব্দ। শিশুর দুটি ঠোঁট ফাঁক করে যে শব্দটি প্রথম বের হয়, এটি হলো ‘মা’। সন্তানের কাছে ‘মা’ মানে হলো তার দুনিয়া। জন্মের আগে যখন মায়ের গর্ভে বড় হয়, তখন সে অবচেতনেই মাকে তার সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেয়। এরপর যখন পৃথিবীর আলো দেখে তখন বুকে টেনে নেন মা। ক্ষুধায় বুকের দুধ খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখেন মা। শীতে নিবিড় পরশে উষ্ণতা দেন মা। বাবা বাইরের দুনিয়াটা দেখেন, পরিবারের অন্যরা নিজ নিজ কাজ করেন; কিন্তু শিশুটির কাছে মা-ই হলো তার পৃথিবী। আমার মা এর ব্যতিক্রম নন।
আমার জন্ম পিরোজপুরের সমদেকাঠী গ্রামে। ছোটবেলার সব স্মৃতিই মাকে নিয়ে। ছোটবেলায় আমি ঘুমাতাম নিচ তলায়, ঘুম ভাঙত দোতলায়। এটা কীভাবে হলো! আসলে মা ঘুমন্ত অবস্থায় কোলে করে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিতেন। অর্থাৎ আমরা আমাদের মতো কাজ করতাম। আর কোন কাজটা করলে আমাদের ভালো হবে, সেটা করতেন মা।
মাকে ছাড়া কিছুই বুঝতাম না। তবে একটু বড় হওয়ার পরই হাহাকার লেগে গেল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনোর পর আমার বাবা আমাকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করিয়ে দিলেন তৎকালীন বিখ্যাত পিরোজপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমার নিজেকে সুতো ছেঁড়া ঘুড়ির মতো মনে হতে লাগল। আমি যেন বাঁধনহারা উদ্দেশ্যহীন কোনো ঘুড়ি। আমি মাতৃহারা। অর্থাৎ মা থেকে দূরে চলে যাওয়া হলো এক ধরনের মৃত্যুর মতো।


আমরা ছিলাম ছয় ভাই, তিন বোন। মাছ, মাংস, ফলসহ সব খাবারই ৯ ভাগ হতো। একটু বড় হয়ে হিসাব কষলাম– আমরা তো ৯ জন ছিলাম, সেখানে মা ছিলেন। তাঁরও তো খাবারের দরকার। তাঁর কোনো ভাগ নেই কেন? ভাগ তো হওয়া উচিত ছিল দশটা। মা নিজের ভাগের জন্য কিছু রাখতেন না। এটা যখন বুঝতে পারলাম, তখন খুব কষ্ট হতো।
তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। একবার সদরঘাটে খুব আশা করে একটা সাগর কলা কিনেছি। সে সময় আমাদের দেশে সাগর কলা পাওয়া যেত না সবখানে। সাগর কলার সুগন্ধ অনেক দূর থেকে পাওয়া যেত। আমি এক আনা দিয়ে একটা সাগর কলা কিনলাম, খোসা ছাড়িয়েছি, সুগন্ধ ছড়িয়েছে। কামড় দিয়ে খেতে যাব, এমন সময় মায়ের কথা মনে পড়ল। হায় হায়, আমি মাকে না দিয়ে একা খাব এটা! মা যেখানে না খেয়ে আমাদের খাইয়েছেন, সেখানে তাঁকে ফেলে এটা আমি খেতে পারব না। আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম; কিন্তু এটা খাওয়া সম্ভব নয়। আমি কলাটা খেতে পারছিলাম না; আবার নদীতে ফেলে দিলে নষ্ট হবে, সেটাও পারছিলাম না। আমি আশপাশে দেখলাম। একজন ক্ষুধার্ত বৃদ্ধা ভিখারিকে আমি ওই কলাটা দিয়ে দিলাম। তিনি আমার দিকে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন।      লেখক : জাদুশিল্পী

আরও পড়ুন

×