ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ঈদ আয়োজনের ভালো-মন্দ

ঈদ আয়োজনের ভালো-মন্দ

‘কিডনি’

--

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ | ০৪:২০

প্রতি ঈদেই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আয়োজন করে নানা রকম অনুষ্ঠানের। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এসব অনুষ্ঠানের ভালো-মন্দ নিয়ে লিখেছেন ইকবাল খন্দকার

বিশেষত্ববিহীন নাটক-টেলিছবি

অস্বীকার করার উপায় নেই, এখন নাটক-টেলিছবির জোয়ার চলছে। নিঃসন্দেহে এটি ইতিবাচক। কিন্তু এই ইতিবাচকতার সুফল দর্শক খুব সামান্যই পাচ্ছেন। কারণ, বিশেষভাবে মনে দাগ কাটবে– এমন ‘বিশেষ’ নাটক-টেলিছবির সংখ্যা বরাবরের মতো এবারও খুব কম ছিল। টিভি আয়োজনে এবার যুক্ত হয়েছিল ওয়েব সিরিজও। একঘেয়েমি ভাঙার জন্য এ ধরনের আয়োজন নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। তবে নাগরিক টিভিতে ‘মরীচিকা’ সিরিজটি দেখে মনে হয়েছে, টিভি পর্দা এতটা উপযোগী নয় ওয়েব সিরিজের জন্য। কারণ, এ সিরিজের ঘনিষ্ঠ দৃশ্যগুলো পরিবার-পরিজন নিয়ে বসে দেখার মতো নয়। টিভি পর্দার জন্য আপত্তিকর দৃশ্যে ভরপুর ওয়েব সিরিজটির গল্পেও নতুনত্ব ছিল না। ‘মরীচিকা’র এমন গল্পে বহু আগে থেকেই পরিচিত এ দেশের দর্শক।

উদ্দেশ্যমূলক তারকা আড্ডা

তারকা আড্ডাগুলোকে উদ্দেশ্যমূলকই মনে হয়েছে। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর প্রচারসংশ্লিষ্ট তারকারা নিজেদের কাজের প্রচারণা চালাতে টিভি অনুষ্ঠানে আসেন। এ ধারা বহু আগেই চালু করেছেন বাইরের দেশের তারকারা। বাংলাদেশের তারকারা এ ধারার সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন কয়েক ঈদ ধরে। তাঁদের এই একাত্মতার চূড়ান্ত রূপ দেখা গেছে এবারের ঈদে। সব তারকা আড্ডায় ঘুরেফিরে প্রায় একই মুখ। একই আলোচনা, একই প্রশ্ন ও উত্তর। এসব আলোচনা কিংবা প্রশ্নোত্তরের বাইরে সেই কমন প্রশ্ন তো ছিলই– ‘ঈদকেন্দ্রিক কোনো মজার ঘটনা আছে?’ পাশের দেশের একটি টিভি চ্যানেল তাদের ‘দিদি নাম্বার ওয়ান’ অনুষ্ঠানে নিয়মিত কিছু সেগমেন্ট রাখে। একটি সেগমেন্ট এমন– অতিথির কান বন্ধ করে দেওয়া হয় হেডফোন বা এ জাতীয় কিছু একটা দিয়ে। তারপর তার সামনে কিছু শব্দ উচ্চারণ করেন উপস্থাপক। অতিথিকে জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি কী বলেছেন। খেয়াল করেছি, প্রায় প্রতিটি তারকা আড্ডায় এই সেগমেন্ট রাখা হয়েছে। আমরা কতটা অনুকরণপ্রিয় কিংবা আইডিয়াহীনতায় ভুগছি, তার একটা জলজ্যান্ত প্রমাণ এই ধার করা সেগমেন্ট।

পানসে ‘লাইভ’ গানের অনুষ্ঠান

আগে আমরা ঈদের লাইভ অনুষ্ঠানগুলোতে আইয়ুব বাচ্চু, জেমসদের মতো তারকাশিল্পীদের দেখেছি। অর্থাৎ সারা বছর যাঁদের দেখা যায়নি, যাঁদের অনেক মৌলিক গান ছিল, কেবল তাঁদেরই দেখা যেত ঈদ অনুষ্ঠানগুলোতে। এতে ঈদ-আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যেত। দর্শক এটিকে দেখতেন ‘বাড়তি পাওয়া’ হিসেবে। কিন্তু এবারের ঈদে বাড়তি কোনো পাওয়া ছিল না বলা যায়। যেসব শিল্পীর মৌলিক কোনো গান নেই, তাঁদেরও দেখা গেছে একাধিক টিভি চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে। যে কারণে একদমই আলাদা করা যায়নি– আমরা ঈদের অনুষ্ঠান দেখেছি, নাকি সাধারণ কোনো অনুষ্ঠান। এটা দর্শককে বঞ্চিত করারই নামান্তর। এত বাহারি বিজ্ঞাপন অথচ শিল্পী তালিকায় বৈচিত্র্য নেই– এটা কেন? রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমীন এখনও গান গাইতে সক্ষম এবং ভালোভাবেই সক্ষম। তাঁদের কি উপস্থিত করা যেত না কোনো লাইভ অনুষ্ঠানে? এক চ্যানেল যাঁকে লাইভ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে, অন্য চ্যানেলগুলোও যদি তাঁর পেছনেই ছোটে, যদি এর বাইরের কাউকে দিয়ে গান করানোর কথা না ভাবে, তাহলে স্বকীয় ধারা প্রতিষ্ঠা করা কীভাবে সম্ভব? যেসব শিল্পীর মৌলিক গান নেই অথচ নিয়মিত লাইভ অনুষ্ঠানে ডাক পান, এমনকি ঈদের অনুষ্ঠানগুলোতেও, তাঁরা অন্য শিল্পীর গান করেন– এটা দোষের কিছু না। তবে মূল গানের বাইরে গিয়ে সুর বিকৃত করে গাওয়া অবশ্যই দোষের। অপরাধ গানের কথা বিকৃত করা। এই দোষ এবং অপরাধ বরাবরই দর্শক-শ্রোতার কানে ধরা পড়ছে; যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। টিভি চ্যানেলগুলোর উচিত শুদ্ধতা নিশ্চিত করা। অর্থাৎ মৌলিক গান নেই, অন্যদের গান গেয়ে থাকেন, এমন শিল্পীকে দিয়ে লাইভ গান করানোর আগে তাঁর গানের খাতাটা যাচাই করে নেওয়া– গানের কথা শুদ্ধ করে লেখা আছে কিনা। যদি তা না করা হয় তাহলে ভুল গাইতে গাইতে তাঁরা একদিন ভুলটাকেই প্রতিষ্ঠিত করে ফেলবেন। একটি অনুষ্ঠানে যত গান গাইবেন, প্রতিটা গানই ভালো গাওয়া সম্ভব নয় কোনো শিল্পীর পক্ষে। কোনোটা ভালো, কোনোটা একটু কম ভালো হতেই পারে। অথচ ঈদে যত লাইভ অনুষ্ঠান চোখে পড়েছে, প্রতিটা অনুষ্ঠানের উপস্থাপকই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।

সিনেমা ও অন্যান্য

প্রতি বছর কত কত সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। অথচ আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো পড়ে আছে হাতেগোনা কতিপয় সিনেমা নিয়ে। সারা বছর পড়ে থাকুক, কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ঈদেও কেন? কেন দর্শকরা ঈদের মৌসুমে এমন কিছু সিনেমা দেখতে পাবেন না, যেগুলো সচরাচর দেখা যায় না? আমরা কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি, চ্যানেল আই এবং দীপ্ত টিভি ঈদ উপলক্ষে নতুন সিনেমা দেখায়। এবারও কম-বেশি নতুন সিনেমা তারাই দেখিয়েছে। অন্যরা এমন এমন সিনেমা দেখিয়েছে, যেগুলো দর্শক ইতোপূর্বে দেখতে দেখতে ক্লান্ত। যদি টিভি কর্তৃপক্ষ মনে করে, ঈদে দর্শক কেবল সিনেমা হলে গিয়েই নতুন সিনেমা দেখবেন, তাহলে কিছু করার নেই। দর্শক টিভি বন্ধ রেখে সিনেমা হলেই যাবে। যদি মনে করে, কিছু দর্শক তাদেরও দরকার, তাহলে সারা বছর দেখিয়ে দেখিয়ে ‘তিতা’ বানিয়ে ফেলা সিনেমাগুলো যেন অন্তত ঈদে দেখানো না হয়। ঈদের অনুষ্ঠানে বিজ্ঞাপনের আধিক্য নিয়ে সবসময়ই কথা শোনা যায়। এবারও সেই আধিক্য ছিল। তবে বাংলাভিশনের ‘স্বল্প বিরতির নাটক’ এবং গাজী টিভির ‘ব্রেক ফ্রি’ আয়োজনগুলো নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। নিন্দার দাবি রাখে যেসব চ্যানেল ঈদ আয়োজনেও প্রচার করেছে এমন সব নাটক-টেলিফিল্ম, যেগুলো আগের ঈদগুলোতে প্রচার হয়েছিল; যেগুলো ইউটিউবে আছে দু-চার বছর ধরে। ঈদ আয়োজনে পুরোনো নাটক বা অনুষ্ঠানের প্রচার একদমই গ্রহণযোগ্য নয়। তবু যদি প্রচার করতেই হয়, দয়া করে স্ক্রিনের কোনায় লিখে দিন ‘পুনঃপ্রচার’। 

আরও পড়ুন

×