ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইতিহাসের কিংবদন্তি

ইতিহাসের কিংবদন্তি

নেলসন ম্যান্ডেলা, [১৮ জুলাই ১৯১৮-৫ ডিসেম্বর ২০১৩]

হিল্লোল চৌধুরী

প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০

কারাগার থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে ওঠার ইতিহাস। এক বিরল ব্যক্তিত্বের দেশনেতার নাম নেলসন ম্যান্ডেলা। অ্যাক্টিভিস্ট, রাজনীতিবিদ, চিন্তাবিদ, মানবতাবাদী এই নেতা দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণভিত্তিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের দেশ হিসেবে। জাতিসংঘ ২০০৯ সাল থেকে তাঁর জন্মদিনকে ‘নেলসন ম্যান্ডেলা দিবস’ হিসেবে পালন করে। সব মিলিয়ে ম্যান্ডেলা হয়ে আছেন ইতিহাসের কিংবদন্তি।

১৯১৮ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার জন্ম। বাবা নাম রেখেছিলেন রোলিহ্লাহলা ডালিভুঙ্গা ম্যানডেলা। স্কুলের এক শিক্ষক তার ইংরেজি নাম রাখলেন নেলসন। দক্ষিণ আফ্রিকার আপামর মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘মাদিবা’। অর্থাৎ জাতির স্থপতি।

নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ম্যান্ডেলা হয়ে ওঠেন আইনজীবী। নিপীড়িত-শোষিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোই প্রধান কাজ হয়ে ওঠে তাঁর।

কারণ সে সময় কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের নিপীড়ন ছিল বর্ণনাতীত। দেশটির জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ কৃষ্ণাঙ্গ হলেও, সব সুবিধা ভোগ করত শ্বেতাঙ্গরা। এই অসাম্য, অনৈতিক অত্যাচার ও নিপীড়নই নেলসন ম্যান্ডেলাকে প্রতিবাদী করেছিল।

তার পরের ইতিহাস অনেক বৈচিত্র্যপূর্ণ। কখনও মার্কসইজমে বিশ্বাসী হওয়া, কখনও দক্ষিণপন্থি। ১৯৪২ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসে যোগ দেন। প্রত্যক্ষ সরকার বিরোধিতায় রাজনীতির ময়দানে ঝাঁপিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধিতা বা প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠেন। ১৯৬০ সালে শার্পভিলে কৃষ্ণাঙ্গ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের গুলিতে ৬৯ জন নিহত হলে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আদৌ আর লাভ হবে কিনা, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এ সময় এক বক্তৃতায় নেলসন ম্যান্ডেলা বলেছিলেন, ‘সরকার যখন নিরস্ত্র এবং প্রতিরোধবিহীন মানুষের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তখন সরকারের সঙ্গে শান্তি এবং আলোচনার কথা বলা নিষ্ফল।’

এএনসি সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করলে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রতিবাদী ম্যান্ডেলার সঙ্গে কারারুদ্ধ করা হয় তাঁর অসংখ্য অনুগামীকে। বিচারে পান যাবজ্জীবন সাজা। শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার কুখ্যাত রুবেন দ্বীপে তাঁর দীর্ঘ কারাজীবন। তবে নেলসন ম্যান্ডেলা এবং এএনসির শীর্ষ নেতাদের কারাবন্দি করলেও দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত শহরতলিগুলোয় বর্ণবাদবিরোধী লড়াই অব্যাহত থাকে। ম্যান্ডেলার মুক্তির জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও বাড়তে থাকে। শেষ পর্যন্ত তিনি মুক্তি পান ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি; ২৭ বছর কারাভোগের পর। দীর্ঘ কারাবাসে লিখেছেন আত্মজীবনী ‘লং ওয়াক টু ফ্রিডম’। ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত হন।

১৯৯৪ সালে গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত হয়ে হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। অবসরে যাওয়ার পরও নেলসন ম্যান্ডেলার ব্যস্ততা থামেনি, স্বাধীনতা এবং বিশ্ব শান্তির এক আইকন বা প্রতীকে পরিণত হয়েছেন তিনি।

ম্যান্ডেলা যা ধারণ করতেন, সেই বার্তাই রেখে গেছেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য— ‘শিক্ষা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে বদলে দেওয়া যায়।’

‘ঘৃণা মনকে অন্ধকার করে, ঘৃণা নিয়ে কেউ জন্মায় না।’  

আরও পড়ুন

×