ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

কর্মক্ষেত্রে পরিপাটি

কর্মক্ষেত্রে পরিপাটি

মডেল: ইরা ও আশিক। ছবি: ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য

--

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৩ | ১৮:০০

কর্মক্ষেত্রে কমবেশি সবাই ফিটফাট থাকতে পছন্দ করেন।  কাজের ক্ষেত্রে অনেকের পছন্দ ফুল ফরমাল পোশাক। অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণার পরিবর্তন হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নিজেকে পরিপাটি রাখার ক্ষেত্রে পোশাকটা যদি একটু আরামদায়ক হয় তাহলে  প্রশান্তি নিয়ে কাজ করা যায়। লিখেছেন নাইস নূর

একটা সময় সবার ধারণা ছিল, কর্মক্ষেত্রের পোশাক মানেই হচ্ছে ফিটফাট ধরনের ফরমাল পোশাক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেরই এই ধারণা বদলেছে। বিভিন্ন স্থানে যাওয়ার পাশাপাশি আজকাল অনেকে কাজের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্যাজুয়াল পোশাকের ওপর। এটা স্বীকার করা গুরুত্বপূর্ণ, একজনের ব্যক্তিত্ব প্রকাশের সহায়ক হচ্ছে রুচিশীল পোশাক। তাই ক্যাজুয়াল পোশাক হলেও, যাতে রুচিশীলতা ফুটে ওঠে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

আজকাল বেসরকারি, সরকারি, করপোরেট অফিস সব জায়গাই পুরুষ ও নারী সমানতালে কাজ করছেন। ইন্টারনেটের দ্রুতগতির সঙ্গে জীবন এগিয়ে চলছে। সংসারে দৈনন্দিন জীবনের চাপ সামলে দিনের অধিকাংশ সময় অফিসেই দিতে হচ্ছে নারী ও পুরুষ সবাইকে। এ কারণে কাজের পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রেখে কর্মক্ষেত্রে পোশাক হওয়া উচিত আরামদায়ক।

এ ব্যাপারে ‘সারা’ লাইফস্টাইলের ফ্যাশন ডিজাইনার মোহাম্মদ শামীম রহমান বলেন, ‘যারা নিয়মিত অফিস করেন তাদের উপযোগী পোশাক ডিজাইনে আমরা বিশেষ নজর দিই। কারণ বেশির ভাগ অফিসে ফরমাল পোশাক পরতে হয়। থাকতে হয় পরিপাটি। সব দিক বিবেচনা করে যারা অফিস করেন তাদের জন্য সুতির পোশাক আমরা বেশি ডিজাইন করি। সাধারণত ডিজাইনে উজ্জ্বল রং আমরা এড়িয়ে চলি। সাদা রংকে আমরা বেশি গুরুত্ব দিই। হালকা রংয়ে আরামদায়ক পোশাক বেশি তৈরি। কারণ পোশাক ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে। তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকারদের প্রতিদিন অনেক মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হয়। তাদের পোশাকে উগ্রতা ভাব থাকা একদমই শোভা পায় না। আবার যারা টেলিভিশনের খবর পড়ছেন নিয়মিত, তাদের সাবলীল পোশাকের পাশাপাশি ট্রেন্ড অনুসরণ করতে হয়। ক্যামেরার সামনে যারা কাজ করেন তাদের জন্য আমরা দেশীয় সংস্কৃতি মাথায় রেখে পোশাক ডিজাইন করে থাকি।’

গবেষণায় দেখা গেছে, অন্তত ৬০ শতাংশ চাকরিপ্রত্যাশী আশা করেন এমন অফিস, যেখানে ক্যাজুয়াল ড্রেসকোড মেনে চলা হয়। অর্থাৎ নিজের স্বস্তিমতো পোশাক পরে অফিস করার স্বাধীনতা আছে। তবে বাস্তবতা ভিন্ন। সব কাজের ক্ষেত্রে চাইলেও সব সময় ক্যাজুয়াল পোশাক পরা যায় না। তার মধ্যেও সবার চেষ্টা থাকে পোশাকে কিছুটা স্বস্তি আনার।

এ ব্যাপারে ব্র্যাক ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপস্থাপক মো. হাসানুর রহমান জানান, মানুষ ও দর্শকের কাছে তিনি সাবলীল, রুচিশীল, মার্জিত পোশাকে নিজেকে উপস্থাপন করতে পছন্দ করেন।

নিজের পোশাক ও লুক নিয়ে তিনি বলেন, পুরো বিশ্বে ব্যাংকের চাকরির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। অনেক বেশি গোছানো রাখতে হয় নিজেকে। ব্যাংকে যখন আমি যাই, তখন ফরমাল পোশাক আমার পরা হয়। শার্টের সঙ্গে মানিয়ে স্যুট, টাই বাছাই করি। শার্ট হালকা রঙের হলে টাই উজ্জ্বল রং পরি। এর বাইরে জুতার দিকেও থাকে বাড়তি যত্ন। কারণ পোশাক ঠিকঠাক পরলে শুধু হবে না। জুতাও হতে হবে ঝকঝকে এবং মানানসই।

হাসানুর রহমান বলেন, ক্যামেরার সামনে যখন দাঁড়াই, তখন পোশাকের পাশাপাশি নিজের লুকের প্রতিও নজর দিই। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নিজের মেকআপ সাধারণত নিয়ে থাকি। মোটা টাই পরার যুগ এখন আর নেই। স্লিম, চেক টাই পরলে নিজেকে এখন আকর্ষণীয় লাগে। ক্যামেরার সামনে নিজেকে নিত্যনতুনভাবে উপস্থাপন করতে বেশি স্বাছান্দ্যবোধ করি। এই চ্যালেঞ্জিং পেশার জন্য এটা দরকারও।

‘দেশ’ টিভির সংবাদ পাঠিকা বাবলী ইয়াসমিন নিয়মিত ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজটা অনেক দায়িত্বশীল এবং চ্যালেঞ্জিং। দৈনন্দিন ছাড়াও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে আমাদের আলাদা আলাদা পোশাক নির্বাচন করতে হয়। সাধারণত আমরা শাড়ি পরি। তাই শাড়ির রঙের দিকেও রাখতে হয় আমাদের বিশেষ খেয়াল। অন্যদিকে আমরা যখন সংবাদ পরিবেশন করি, তখন সুসংবাদ, দুঃসংবাদ সবই পরতে হয়। তাই আমাদের পোশাক ও সাজ এমন হওয়া উচিত যাতে দৃষ্টিকটু না লাগে। সাজের দিকে চুল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে যাতে কোনোভাবে নমনীয়তা ভাব চলে না যায়। ফ্যাশন, স্টাইল সবই ঠিক রাখতে হবে। তবে মাথায় রাখতে হবে রুচিশীল সাজের পাশাপাশি মার্জিত পোশাক।’
বাবলী ইয়াসমিন আরও জানান, একজন সংবাদ পাঠিকা সাধারণত ১৫০ থেকে ২০০ শাড়ি সংগ্রহে রাখেন। একই পোশাক তারা অনেকবারই পরেন, সেটা এক মাস পরপর।

‘এখন’ টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকা তানজিলা খান মীম দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত। অনেক জায়গায় কাজ করেছেন। বিভিন্ন অফিসে তাঁকে নির্বাচন করতে হয়েছে বিভিন্ন পোশাক। কখনও সালোয়ার-কামিজ, কখনও শাড়ি, কখনও বা শার্ট পরে সংবাদ পরছেন তিনি। সব সময় নিজের ডিজাইনে পোশাক বানিয়ে পরতেন মীম।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চ্যানেলগুলোয় তো নিজস্ব ড্রেস কোড থাকে। সেই অনুযায়ী আমি কাপড় কিনে নিজেই ডিজাইন করি। এমন কটন আমি নির্বাচন করি, যেটা ক্যামেরার সামনে দেখতে ভালো লাগবে এবং আয়রনও করা যাবে খুব সহজে। অন্যদিকে, আমি ভারী মেকআপ কখনও নিই না। অতিরঞ্জিত সাজ হয়েছে টেলিভিশনের সামনে বসে এটা যেন কারও মনে না হয় সেদিকে গুরুত্ব দিই। সব সময় নিজেকে ন্যাচারাল লুকে রাখতে ভালো লাগে। যাতে দর্শক আমার কথার দিকে বেশি নজর দেন।’ তানজিলা খান বলেন, ‘বাইরের দেশে নিউজ দেখলে মনে হয় তারা কোনো মেকআপই করেননি। আসলে ঠিক তাই। তাদের প্রযুক্তি অনেক উন্নত। খুব কম সময়ে হালকা সাজ নিয়ে তারা ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। আমাদের দেশ এদিক থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। নো মেকআপ লুকের জন্যও আমাদের সময় নিয়ে মেকআপ আর্টিস্টরা সাজান। এ বিষয়ে মেকআপ আর্টিস্টদের আরও প্রশিক্ষণ দরকার বলে আমি মনে করি।’

সংবাদ পড়ার পাশাপাশি রিপোর্টিংয়ের জন্যও বাইরে যান মীম। তখন তিনি শার্ট কিংবা ফতুয়া পরতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বাইরে সব সময় ফ্রেশ লুকে থাকতে ভালোবাসি। যাতে আমাকে একজন রিপোর্টার মনে হয়। কখনও যেন বিনোদনের উপস্থাপক না মনে হয়, এদিকে আমি খেয়াল রাখি। কারণ, আমাদের নানা ধরনের সংবাদ উপস্থাপন করতে হয়।’  
সময় বদলাচ্ছে। কর্মজীবী নারীরা আজকাল শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ পরার পাশাপাশি ওয়েস্টার্ন কিংবা অনেক স্টাইলিশ পোশাক পরেন, যেটা কিনা তাদের কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে মানানসই। এ ব্যাপারে রাজধানীর একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কর্মরত তানিয়া রহমান জানান, আবহাওয়া অনুযায়ী অফিসে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি পোশাক নির্বাচন করেন। এ ক্ষেত্রে সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি তাঁর বেশি পছন্দের। কখনও টপসও পরেন। এটা নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে যাই পরুন না কেন, তা যেন রুচিশীল হয় সেদিকে খেয়াল রাখেন।

আরও পড়ুন

×