সৌন্দর্যসচেতন প্রত্যেক নারী জানেন ঘৃতকুমারীর গুণের কথা। নিখুঁত ত্বকের যত্নে এর অবদান অনেক। ভেষজ এই উপাদানে আছে ২০ রকমের খনিজ। ঘৃতকুমারীতে আছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এ, বি, সি এবং অন্যান্য উপাদান। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন এ, বি, সি এবং অন্যান্য উপাদান ত্বকে পুষ্টি জোগায়।
ত্বকের বয়স রুখে দিতে, ত্বকে বলিরেখা মলিন করার ক্ষেত্রে ঘৃতকুমারীর ভূমিকা আছে বলে জানান ভেষজ পণ্যের প্রতিষ্ঠান ‘আমলকী’র স্বত্বাধিকারী এবং ভেষজ বিশেষজ্ঞ নন্দিতা শারমিন। রুক্ষ-শুষ্ক ভাব দূর করে ত্বক আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে ঘৃতকুমারীর জেল।
তিনি জানান, গরমকালে সেনসেটিভ, তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি হয়। স্বাভাবিক ত্বকেও দেখা যায় ফুসকুড়ি। ঘৃতকুমারীর জেল সেসব সমস্যা দূরীকরণে কাজ করে। ব্রণ কমে গেলেও থেকে যায় দাগ। ঘৃতকুমারীতে প্রচুর পরিমাণে এনজাইম, অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান, ভিটামিন থাকায় এর ব্যবহারে কমে ব্রণের সমস্যা।
ঘরেই বানান ফেসপ্যাক
ঘৃতকুমারীর সঙ্গে বিভিন্ন উপাদান মিশিয়ে ঘরেই বানাতে পারেন ফেসপ্যাক। এক টেবিল চামচ জেলের সঙ্গে এক টেবিল চামচ গোলাপজল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি ত্বকে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এর পর ধুয়ে ফেলুন। পোরসের সমস্যা সমাধানের জন্য এই পেস্ট তোলার আগে দু-তিন মিনিট ম্যাসাজ করতে পারেন। সপ্তাহে তিনবার এই প্যাক ব্যবহার করলে কালো দাগ, ব্রণের দাগ, ত্বকের ফাটা দাগ কমবে। এটি সব ধরনের ত্বকে ব্যবহার করা যাবে।
মুলতানি মাটির সঙ্গে ঘৃতকুমারীর জেল ও ঠান্ডা দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
ঘৃতকুমারীর জেলের সঙ্গে এক চিমটি হলুদের গুঁড়া, এক চা চামচ মধু, কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে ত্বকে লাগাতে পারেন। মুখ ও গলায় এই মিশ্রণ লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। এর পর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে পরিষ্কার ও নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে নিন। সপ্তাহে দুইবার এটি ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে। কেননা, হলুদে থাকা বিভিন্ন উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
তিন-চারটি পাকা কলার টুকরোর সঙ্গে এক টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর জেল মেশান। চাইলে কলা ও ভেষজ উপাদানটির জেল বেশি পরিমাণে নিয়ে ব্লেন্ড করতে পারেন। এর পর সপ্তাহে এক দিন মুখে লাগান। এটি মূলত ত্বকের গভীর থেকে পুষ্টি জোগাবে। ত্বককে করবে প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যবান।
দুই চা চামচ জেলের সঙ্গে এক চা চামচ টক দই, এক চা চামচ মধু অথবা লেবুর রস মেশান। যাদের ত্বক শুষ্ক, তারা মধু মেশাবেন। মিশ্র ও তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা লেবুর রস মেশাবেন। সপ্তাহে তিনবার ১০-১৫ মিনিট করে ব্যবহার করুন। ত্বকের সব ধরনের অপরিপক্বতা দূর করবে এই পেস্ট।
রোদে পোড়া দাগ দূর করতে ঘৃতকুমারীর জেলের সঙ্গে শসার রস ও কয়েক ফোঁটা গোলাপজল মেশান অথবা এসেনশিয়াল অয়েল। এটি মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। শুকালে ধুয়ে ফেলুন। রোদে যাদের ত্বক কালচে হয়ে গেছে, যাদের ত্বক চুলকায়, তারা এই মিশ্রণ ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
এক্সফোলিয়েট করার জন্য ঘরেই বানাতে পারেন মসুর ডাল, টমেটো ও ঘৃতকুমারীর জেলের প্যাক। এ জন্য দুই টেবিল চামচ ডালের পেস্টের সঙ্গে এক টেবিল চামচ ঘৃতকুমারীর জেল, অর্ধেকটি টমেটোর পেস্ট ও পরিমাণমতো পানি মিশিয়ে নিন। এই প্যাক ১৫-২০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন। এর পর আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। নরমাল পানি দিয়ে ধুয়ে নিন মুখ। নরম তোয়ালে দিয়ে মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এই প্যাকের সাহায্যে এক্সফোলিয়েট করলে মরা চামড়া দূর হবে এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া পোরস খুলে যাবে।
ঠোঁটের যত্নে এক টেবিল চামচ চালের গুঁড়ার সঙ্গে পরিমাণমতো জেল মিশিয়ে ব্যবহার করুন। পাঁচ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ঠোঁটের রং উজ্জ্বল হবে। ঠোঁট হবে নরম ও মসৃণ। v
মডেল: তাসফিয়া তামান্না; ছবি: কাব্য