মুস্তাফা মনোয়ার ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার শ্রীপুর থানার অন্তর্গত নাকোল গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা কবি গোলাম মোস্তফা এবং মা জমিলা খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মুস্তাফা মনোয়ার সবার ছোট।
তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ চিত্রশিল্পীদের একজন এবং শিল্পমাধ্যম হিসেবে তিনি পুতুল নাচকেও অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও উদ্যোগে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
ভাষা আন্দোলনে মুস্তাফা মনোয়ার ছিলেন নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র। নারায়ণগঞ্জে মেজো বোনের বাড়িতে থাকতেন। দেশাত্মবোধ ও ছবি আঁকার জন্য কৈশোরেই কারাবরণ করেছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার। জানা যায়, পশ্চিম পাকিস্তানি নেতা ও তাদের এ দেশীয় অনুসারী দ্বারা বাংলা ভাষাকে অসম্মান ও এর প্রতিবাদ মিছিলে রাজপথে বাঙালিদের শহীদ হওয়ার কথা শুনে মুস্তাফা মনোয়ার সেই প্রেক্ষাপটে ছবি এঁকে বন্ধুদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দিতে শুরু করেন। পরে পুলিশ এসে তাঁকে ও তাঁর দুলাভাই লুৎফর রহমানকে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে বন্দি করে। দীর্ঘ এক মাস কারাবাসের পর তাঁরা মুক্তি পান। আমাদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের লাল সূর্যের অন্যতম স্থপতি তিনি।
১৯৭১-এর মার্চে অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে টেলিভিশন থেকে ফজল-এ-খোদা রচিত ও আজাদ রহমান সুরারোপিত ‘সংগ্রাম সংগ্রাম সংগ্রাম, চলবে দিনরাত অবিরাম’ গণসংগীতের পরিচালনায় ছিলেন তিনি। গানটি ১০ জন শিল্পী গেয়েছিলেন। কিন্তু যখন গানটি প্রচারিত হয়, তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের দর্শকদের কাছে মনে হয়েছিল যেন কয়েকশ শিল্পী একত্রে গানটি গাইছেন। শিশু-প্রতিভা বিকাশের জনপ্রিয় টেলিভিশন আয়োজন ‘নতুন কুঁড়ি’র (১৯৭৬) রূপকার মুস্তাফা মনোয়ার।
পুতুলনাট্যের অন্যতম পথিকৃৎ মুস্তাফা মনোয়ার কলকাতা আর্ট কলেজ থেকে পাস করার পর ঢাকা আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়ে প্রথম পুতুল নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। গ্রামবাংলার পুতুল নাচ ছোটবেলাতেই তাঁকে আকৃষ্ট করেছিল। বাংলাদেশে পুতুল তৈরি ও গল্প সংবলিত পাপেট প্রদর্শনের তিনিই মূল উদ্যোক্তা।
‘মনের কথা’ নামে একটি পুতুলনাট্য বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়ে বিপুলসংখ্যক শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মনে ইতিবাচক প্রভাব রাখে। ছবি আঁকা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি সৃষ্টি হয়েছিল বিশেষ অনুরাগ এবং শিশুমনেই প্রোথিত হয়েছিল লোকজ শিল্প ও দর্শনের প্রতি আগ্রহ, বহুমতের উপস্থিতিকে বর্ণিল সমাজের আকাঙ্ক্ষা ও পরমতসহিষ্ণুতার বীজ। পারুল, বাউল ও ষাঁড় এবং সবশেষে মুস্তাফা মনোয়ারের উপস্থিতিতে ‘মনের কথা’র দৃশ্য ও সংলাপ শিশু-কিশোরদের মনে দোলা দিয়েছিল, বহুদূর বিস্তৃত করেছিল তাদের কল্পনা শাখা-প্রশাখা।
ষাটের দশকে তিনি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ‘আজব দেশে’ অনুষ্ঠানে নিয়মিতভাবে ‘বাঘা’ ও ‘মেনি’ চরিত্রকে উপস্থাপন করে তৎকালীন নানা রাজনৈতিক অসংগতি তুলে ধরেছিলেন। বাঙালি সংস্কৃতিবিরোধী পাকিস্তানি মনোভাবের প্রকাশকে ব্যঙ্গ করেছিলেন।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার : ১৯৫৭: কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস আয়োজিত নিখিল ভারত চারু ও কারুকলা প্রদর্শনীতে গ্রাফিক্স শাখায় শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের স্বীকৃতি হিসেবে স্বর্ণপদক।
১৯৫৮: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে চারুকলা প্রদর্শনীতে তেলচিত্র ও জলরং শাখার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্মের জন্য দুটি স্বর্ণপদক।
২০০৪: শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত একুশে পদক।
১৯৯০: টিভি নাটকের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য টেনাশিনাস পদক।
২০১৯: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রদত্ত ‘সুলতান স্বর্ণপদক-২০১৮’ প্রশ্ন
১. ভাষা আন্দোলন স্মরণে ছবি এঁকে মুস্তাফা মনোয়ার কোথায় সেঁটে দিয়েছিলেন?
২. কোন গণসংগীতের পরিচালনায় ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার?
৩. ‘বাঘা’ ও ‘মেনি’ তাঁর কোন অনুষ্ঠানের চরিত্র?
কুইজ ১০৬–এর উত্তর
১. ১১ বছর বয়সে
২. ১৯৭৮ সালে
৩. শিল্পোত্তীর্ণ কবিতার সংখ্যা
গত সংখ্যার বিজয়ী
অপ্সরা অপি,
গজারিয়া, মুন্সীগঞ্জ
নিয়ম
পাঠক, কুইজে অংশ নিতে আপনার উত্তর পাঠিয়ে দিন সোমবারের মধ্যে কালের খেয়ার ঠিকানায়। পরবর্তী কুইজে একজন বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে। বিজয়ীর ঠিকানায় পৌঁছে যাবে পুরস্কার।গত সংখ্যার বিজয়ী