ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

ক্যান্সার: দিনে ৩১৯ জনের ঘাতক 

ক্যান্সার: দিনে ৩১৯ জনের ঘাতক 

প্রতীকী ছবি

আসিফ হাসান নবী

প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৪:২১ | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১৪:২৩

প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যান ক্যান্সারে। দেশে দৈনিক গড়ে ৪৫৮ জন ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছেন। আর মৃত্যুবরণ করছেন দৈনিক ৩১৯ জন। বছরে আক্রান্ত হন এক লক্ষ ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো এই রোগ। ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করার জন্য, এই রোগ সম্পর্কে সবকিছু জানা খুব দরকার। কীভাবে এই রোগ হয় এবং কীভাবে এই রোগ প্রতিরোধ হয়, সকল ব্যক্তির এই বিষয়ে জানা উচিত। এ জন্য প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে: ‘Close the care gap’ বা ‘পরিচর্যার ঘাটতি পূরণ করুন’। সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি এই রোগের চিকিৎসাকে উৎসাহিত করার জন্য এটি একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ।

আমাদের শরীর কোটি কোটি কোষ দ্ধারা গঠিত। মাতৃগর্ভে ডিম্ব এবং শুক্র সংযুক্ত করার মাধ্যমে একটি কোষ গঠিত হয় এবং পূর্ণাঙ্গ শিশুর আদল পাবার আগে সেই কোষলক্ষ লক্ষ ভাগে বিভক্ত হয়। কিন্তু যখন শিশু পরিণত বয়সের হয়, তখন শুধুমাত্র কিছু কিছু কোষে বিভাজন হয়। ক্যান্সার হলো কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজন যা বৃদ্ধি ও বিভাজনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে মেনে চলে না। কোষের এই অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শরীরের স্বাভাবিক বিপাক প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে শরীরের কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। তখন এটা রোগ হিসাবে দেখা দেয়। 

যদিও এই অস্বাভাবিকতার সকল কারণ এখনো পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি, তবে রাসায়নিক দূষণ, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি কিছু কিছু ক্যান্সারের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ধুমপান এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক অবশেষে প্রমাণিত হয়েছে। বৃদ্ধির ধরন ও আক্রান্ত স্থানের ওপর নির্ভর করে ক্যান্সারকে দুইশ’ ধরনের বেশি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আমাদের শরীরে কোষগুলোর বৃদ্ধি, বিভাজন এবং ধ্বংস ঘটে চলেছে। এই প্রক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত জীন দ্ধারা। জীনের অস্বাভাবিক পরিবর্তন কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনের কারণ। এটা শরীরের পুষ্টির অসামঞ্জস্যতা এবং বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের অস্বাভাবিক কাজের জন্য দায়ী। ক্যান্সার অবস্থায় মানবদেহের কিছু কোষ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না এবং ধীরে ধীরে শরীরের অন্যান্য অংশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। মানবদেহের যেকোনও জায়গায় বিকশিত হতে পারে ক্যান্সার। তাই এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়।

আমাদের দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন, ধূমপান, পরিবেশগত সমস্যা এর মূল কারণ। আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার বেশি হওয়ায় ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ খুবই কম। সারা দেশে আছে মাত্র ২২ টি চিকিৎসাকেন্দ্র। এছাড়া সচেতনতার অভাবে রোগী এদেশে চিকিৎসকের কাছে যায় অনেক দেরিতে। তা রোগকে জটিল করে তোলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায় বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করে। বিশেষ করে কয়েক কোটি নারী ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। দ্বিতীয় এ মরণব্যাধিতে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে সচেতনতা ও শিক্ষার অভাব এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে বাংলাদেশে ক্যান্সার ও এ রোগে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

বর্তমানে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ক্যান্সারের চিকিৎসার যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, আমাদের দেশেও সেগুলো অনুসরণ করা হলেও সংখ্যাটা খুবই কম। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগিরা চরমভাবে মানসিক, আর্থিক আর আত্মিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। তাদের মধ্যে বিশালসংখ্যকই প্যালেয়িটিভ পর্যায়ে চলে যায়। তাদের দেখার যেন কেউ নেই। আর যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও সচেতন তারা বেশির ভাগই ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ করে সুস্থ জীবন-যাপন করছেন। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে প্রত্যেকেই নিজেদের পছন্দসই ক্যান্সারবিরোধী জীবন যাপন করতে হবে। শুরুতেই ক্যান্সার নির্ধারণ করা গেলে জীবন বেঁচে যেতে পারে।

পরিসংখ্যানগত ধারণা যে, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতিবছর নতুন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ। এইসব রোগীর দুই-তৃতীয়াংশই থাকবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। তারা বিশ্বস্বাস্থ্য খাতে মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ অর্থ ব্যবহার করে। তাহলে এইসব মানুষ কী দুরারোগ্য এই রোগের কোনো চিকিৎসাই পাবে না? ক্যান্সার রোগের চিকিৎসায় সবচেয়ে বড় সমস্যা চিকিৎসক স্বল্পতা। এ সমস্যা দূর করতে এই রোগীর চিকিৎসায় পর্যাপ্ত সরকারি বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির দিকে মনোযোগ বাড়াতে হবে।

আসিফ হাসান নবী: সাংবাদিক  ও লেখক
[email protected]

আরও পড়ুন

×