ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

গরমে ডায়াবেটিক রোগীর জটিলতা

গরমে ডায়াবেটিক রোগীর জটিলতা

প্রতীকী ছবি

 লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৪ | ১১:৫৯

তেতিয়ে ওঠা গ্রীষ্মের দিনে ডায়াবেটিক রোগীর সংকট তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীর জন্য প্রচণ্ড গরম ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। 
ঝুঁকি কেন: পরিবেশের উত্তাপ বেড়ে গেলে শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য কিছু শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে।

এ সময় ঘাম নিঃসরণ বেড়ে যায়। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিক রোগীর স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুর দুর্বলতার কারণে ঘাম নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটে। এ কারণে পরিবেশের উষ্ণতা বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষের তুলনায় তাদের সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।

গরমে ত্বকের রক্তনালি স্ফীত হয়ে ওঠে শরীরের তাপমাত্রা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এতে ইনসুলিননির্ভর ডায়াবেটিক রোগীর ইনসুলিন দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গরমে মুখের রুচি কমে যায়। এ কারণে অনেক ক্ষেত্রে সুগার কমে যেতে পারে।

গ্লুকোজের মাত্রা ওঠানামা: টাইপ-২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য এক ধরনের ট্যাবলেট ব্যবহার করা হয়; যা কিডনি দিয়ে পানি এবং গ্লুকোজ বের করে দেয়। এ ধরনের ওষুধ সেবন করলে পানিশূন্যতার মাত্রা বেড়ে যায়; যা এ সময়ে ডায়াবেটিস বৃদ্ধিজনিত একটি ভয়াবহ জটিলতা তৈরি করতে পারে। 

এ ছাড়া অধিক গরমে ঘাম নিঃসরণ বেড়ে যায়। শরীরে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়। এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিস বেড়ে গেলে প্রকারান্তরে কিডনি দিয়ে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে আসে; যা আরও পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে। এভাবে একটি দুষ্ট চক্র তৈরি হয়। 

করণীয়:
তাপদাহে রোদে ঘোরাফেরা করা যাবে না। 
যদি হাঁটা কিংবা সাঁতার কাটার মতো শরীরচর্চা করতে থাকেন তাহলে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট বা স্ন্যাকস গ্রহণ করা দরকার। হাতের কাছে চিনি অথবা গ্লুকোজের প্যাকেট রাখুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে বিশেষত বয়স্ক ডায়াবেটিক রোগীকে। চিনির শরবত, কফি কিংবা অ্যালকোহল অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
ইনসুলিনের কলম ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার ওপরে থাকলে এর ভেতরের ইনসুলিন নষ্ট হয়ে যায়। ইনসুলিনের ডিভাইস এবং স্ট্রিপ রোদ থেকে সাবধানে রাখুন।
ত্বক রোদে পুড়ে গেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটে। সে জন্য বাইরে বেরোলে সানস্ক্রিন ক্রিম ব্যবহার করুন। 
নিয়মিত সুগার পরখ করুন এবং ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করুন।
যদি ক্লান্তি অনুভূত হয়, বমি ভাব, বমি, মাথা ঘোরা, অতিরিক্ত ঘাম হয় তবে অবশ্যই রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দেখে নিন।
শরীরচর্চা অবশ্যই অব্যাহত রাখুন, তবে অবশ্যই রোদের মধ্যে নয়।

লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, বরিশাল।

আরও পড়ুন

×