থাইরয়েড গ্রন্থি ও থাইরয়েড হরমোনে সমস্যা

প্রতীকী ছবি
ডা. শাহজাদা সেলিম
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৪ | ০০:০২
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে সাধারণত দুই ধরনের সমস্যা দেখা যায়– গঠনগত ও কার্যগত। গঠনগত সমস্যায় থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায়, যেটিকে গয়টার বলা হয়। কার্যগত সমস্যা দু’রকমের হয়– হাইপারথাইরয়েডিজম ও হাইপোথাইরয়েডিজম।
কারণ: হাইপোথাইরয়েডিজম মূলত তিনটি কারণে দেখা যায়। সদ্যোজাত শিশুদের মধ্যে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড তৈরি না হলে, কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা যায়। এ ছাড়া অটোইমিউন হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা যায়। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি সক্রিয় হলে, থাইরয়েড গ্ল্যান্ড খারাপ হয়ে যায়। তখন থাইরয়েড গ্ল্যান্ড কাজ করে না। চিকিৎসাজনিত কারণেও এই অসুখ হতে পারে। অপারেশনের কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বাদ দিতে হলে বা ‘রে’ দেওয়ার কারণে থাইরয়েড নষ্ট হয়ে গেলে এ সমস্যা হতে পারে।
অ্যান্টিবডি অতিরিক্ত মাত্রায় থাইরয়েড গ্ল্যান্ডকে স্টিমুলেট করলে হাইপারথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ের পর ওষুধের ডোজ বেশি হলে, এর থেকে হাইপারথাইরয়েডিজম হতে পারে। থাইরয়েডাইটিসে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনফেকশন হলে তাৎক্ষণিকভাবে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ভেঙে হরমোন বেরোতে শুরু করে; ফলে রক্তে থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়।
যেসব অঞ্চলে আয়োডিনের অভাব রয়েছে, সেখানে আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে হাইপোথাইরয়েডিজম দেখা যায়।
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
ভালো না লাগা, সঙ্গে লেথার্জিভাব, ত্বক খসখসে হয়ে যায়। পা অল্প ফুলে যায়, খিদে ভাব কমে যায়, চুল পড়তে শুরু করে, ওজন অল্প বেড়ে যায়, ৫-৬ কিলো ওজন বাড়তে পারে, স্মৃতিশক্তি কমে যায়, খিটখিটে ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে পারে, বন্ধ্যত্বের সমস্যা হতে পারে, গর্ভপাত হতে পারে, কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজমে শিশুর ব্রেনের বিকাশ হয় না, পিরিয়ডসে সমস্যা হতে পারে।
হাইপারথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
খিদে বেড়ে গেলেও ওজন কমতে থাকে, প্রচণ্ড গরম লাগে, বুক ধড়ফড় করে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, পিরিয়ডসের সমস্যা হয়, ত্বক কালো হয়ে যায়, হার্টের সমস্যা হতে পারে, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়, হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। বেশি বয়সে অস্টিওপোরোসিস হতে পারে, চোখ ঠেলে বেরিয়ে আসে, বন্ধ্যত্ব হতে পারে।
চিকিৎসা
থাইরয়েড সমস্যা নির্ধারণের জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসা ওষুধের মাধ্যমে করা হয়। ওষুধে কাজ না করলে, সার্জারি বা রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন থেরাপির কথা ভাবা হয়।
গয়টারের সমস্যা হলে ফোলা অংশ ম্যালিগনেন্ট কিনা, তা পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। ম্যালিগনেন্ট নির্ধারিত হলে এবং শুরুর দিকে ধরা পড়লে রেডিওঅ্যাক্টিভ আয়োডিন পদ্ধতির মাধ্যমে থাইরয়েড
ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।
আয়োডিনের অভাবজনিত কারণে থাইরয়েডের সমস্যা হলে আয়োডাইজড সল্ট খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
- বিষয় :
- থাইরয়েডের সমস্যা