ডায়াবেটিক রোগীর স্নায়বিক সমস্যা

প্রতীকী ছবি
ডা. মো. জাহেদ হোসেন
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪ | ০৩:৪৮
শরীরের প্রায় সব অঙ্গের কার্যক্রমের ওপর ডায়াবেটিসের প্রতিক্রিয়া যেমন দেখা যায়, তেমনি নার্ভ বা স্নায়ুর ওপর অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া লক্ষণীয়। ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি বলতে আমরা স্নায়ুর ওপর ডায়াবেটিসের প্রতিক্রিয়াজনিত প্রভাবকে বুঝি।
অনেক সময় অনিয়ন্ত্রিত এমনকি অনিয়মিতভাবে নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে ১০-১৫ বছর সময়ের মধ্যে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দিতে পারে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের মধ্যেই ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি দেখা দেয়।
কারণ : ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির প্রকৃত কারণ খুব ভালোভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, রক্তে গ্লুকোজের আধিক্যই এর কারণ। যেসব রোগীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তারাই মূলত নিউরোপ্যাথির শিকার হন। প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ ডায়াবেটিক রোগী নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্ত হন। হাত ও পায়ের ব্যথা, ঝিনঝিন করা, অবশ লাগা ইত্যাদি ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির লক্ষণ।
ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি কয়েক রকমের হতে পারে। যেমন–
১. পেরিপেরাল নিউরোপ্যাথি (হাত ও পায়ের স্নায়ু আক্রান্ত হয়);
২. প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি (হাত ও পায়ের ওপরের দিকে মাংসপেশির স্নায়ু আক্রান্ত হয়);
৩. অটোনমিক নিউরোপ্যাথি (হৃদতন্ত্র, রক্তনালি, পরিপাকতন্ত্র, মূত্র ও যৌনাঙ্গ, শরীরের রেচন প্রক্রিয়া ইত্যাদি আক্রান্ত হয়);
৪. ফোকাল নিউরোপ্যাথি (কোনো একটি নির্দিষ্ট স্নায়ু আক্রান্ত হয়)।
পেরিপেরাল নিউরোপ্যাথি : ডায়াবেটিক
নিউরোপ্যাথির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় পেরিপেরাল নিউরোপ্যাথি। এতে হাত ও পায়ের নিচের দিকের অংশ, অর্থাৎ কনুইয়ের নিচে ও হাঁটুর নিচের দিকের অংশে ব্যথা করা, জ্বালাপোড়া করা, ঝিনঝিন করা ও অবশ লাগা ভাব হয়। হাত ও পায়ের এই অংশ ঠান্ডা থাকে, লোম পড়ে যায়, হাত ও পায়ের অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। আঘাত লাগলে বা পুড়ে গেলে ব্যথা পাওয়া যায় না। সে কারণে পায়ে প্রায়ই ঘা হয়, পচন ধরে, যে কারণে অনেক সময় পা কেটেও ফেলতে হয়।
প্রক্সিমাল নিউরোপ্যাথি : এতে হাত-পায়ের ওপরের দিকের, অর্থাৎ ঊরু বহির্দেশ ও বাহুর মাংসপেশির দুর্বলতা দেখা যায় এবং মাংসপেশি শুকিয়ে যায়। এটা সাধারণত বয়স্ক মানুষের হয় এবং চিকিৎসায় আরোগ্য হয়।
অটোনমিক নিউরোপ্যাথি : অটোনমিক নিউরোপ্যাথি হলে হৃৎপিণ্ডের গতির অস্বাভাবিকতা দেখা দেয়; রক্তচাপ কমে যায়। পেটের খাদ্য ঠিকমতো হজম হয় না; পেট ফুলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ডায়াবেটিস রোগীর স্নায়বিক সমস্যা প্রতিরোধ রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যদি কারও স্নায়বিক সমস্যার লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে শুরুতেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি।
লেখক : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
- বিষয় :
- রোগীর মৃত্যু