ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

কর্ণাটকে কংগ্রেসের চমক

কর্ণাটকে কংগ্রেসের চমক

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ আগস্ট ২০২২ | ২২:২৭ | আপডেট: ২৯ আগস্ট ২০২২ | ২২:২৭

বেঙ্গালুরুর রাস্তায় লাখো মানুষ। প্রত্যেকের হাতেই ভারতের জাতীয় পতাকা। এক স্বরে উচ্চারিত বিজয়গাথা আর পরিবর্তনের স্লোগান। গত ১৫ আগস্ট ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসে কর্ণাটকে এমনই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে ক্ষমতার বাইরে থাকা প্রাচীন দল কংগ্রেস। এ দিন বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী দীর্ঘ প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কজুড়ে শোভাযাত্রা বের করেন। এটিকে আগামী বছরের প্রথম দিকে বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কর্ণাটক কংগ্রেসের শক্তি প্রদর্শন বলেই মনে করা হচ্ছে।

স্বাধীনতা দিবসের আগে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি যেভাবে দেশব্যাপী 'হর ঘর তিরঙ্গা' প্রচারাভিযান খুব ধুমধামে শুরু করেছিল, তা দেখে কেউ কেউ হয়তো ভেবেছিলেন, আগামী নির্বাচন ঘিরে এটি কর্ণাটকের ক্ষমতাসীন দলের গণসংহতির চেষ্টা। কিন্তু কংগ্রেসের ওই শোভাযাত্রা তাদের কর্মসূচিকেও ছাড়িয়ে গেছে।

কর্ণাটক বিজেপির স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচিতে ৫০ হাজারের মতো সমর্থকের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে কংগ্রেসের সমাবেশে প্রায় আড়াই লাখ নেতাকর্মী অংশ নিয়েছেন বলে দাবি দলটির নেতাদের, যা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন দিল্লির কংগ্রেস নেতারাও। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, সবশেষ কবে যে দলটি দেশের কোথাও এমন কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে, তা তাঁর মনে নেই।

স্বাধীনতা দিবসের ওই কর্মসূচি সম্পর্কে ডি কে কর্ণাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির (কেপিসিসি) সভাপতি শিবকুমার (৬০) বলেন, এই বিশাল কর্মসূচি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভোটাররা বলতে পারেন, নির্বাচন ছাড়া তাঁরা নেতাদের কখনোই দেখেন না। কিন্তু এখন নেতা ও ভোটারদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

কেপিসিসি আসলে আলাদা কী করছে?: কর্ণাটক কংগ্রেস দলের ভাগ্য বদলে জাতীয় নেতৃত্ব থেকে আলাদাভাবে আসলে কী করছে? এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সহজ উত্তর- ব্যাপক আগাম প্রস্তুতি। যেমন- স্বাধীনতা দিবসের শোভাযাত্রাকে ঘিরে এর প্রস্তুতি হিসেবে শিবকুমার বিপুলসংখ্যক মানুষকে কর্মসূচিতে অংশ নিতে উৎসাহিত করতে রাজ্যে ১৫ দিনের সফর করেছিলেন। শুধু তাই নয়, অংশগ্রহণকারীরা যাতে ভাড়া ছাড়াই অনুষ্ঠানস্থলে যেতে পারেন, সে জন্য বেঙ্গালুরু মেট্রোর ১ লাখেরও বেশি টিকিট কিনে রেখেছিল দলটি। সেই সঙ্গে শোভাযাত্রার সময় যাতে একটি জাতীয় পতাকাও রাস্তায় পড়ে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে ১ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছিল। বেঙ্গালুরুর রাজনৈতিক বিশ্নেষক সন্দীপ শাস্ত্রী বলেছেন, কর্ণাটকে কংগ্রেস আলাদা, কারণ এখানে বিজেপিও আলাদা।

আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য কংগ্রেস সভাপতি পদের নির্বাচনে তিনি আগ্রহী কিনা, জানতে চাইলে শিবকুমার বলেন, তিনি শুধু থোড়া, থোড়া (সামান্য) হিন্দি জানেন, তাই ওই পদের জন্য নিজেকে উপযুক্ত মনে করেন না। তিনি অবশ্য বিশ্বাস করেন, কংগ্রেস গান্ধী ছাড়া চলতে পারে না। কর্মী, নেতা ও জনগণ- কেউ-ই তা মেনে নেবে না।

'যুদ্ধের চেতনা ছাড়া কিছুই অর্জন করা যায় না': কর্ণাটকের কংগ্রেস নেতারা বিশ্বাস করেন, তিনটি কর্মসূচি সামনে রেখে এগোচ্ছেন তাঁরা। সেগুলো হলো- গণপ্রসার, দৃশ্যমান নেতৃত্ব এবং উৎসাহী সক্রিয় কর্মীবাহিনী। শিবকুমার বলেন, 'যদি আমি করোনাকালে ঘরে বসে থাকতাম, তবে আজ এই শোভাযাত্রা হতো না। নেতাকে কর্মীদের মনে আস্থা তৈরি করতে হবে।' লড়াইয়ের মনোভাব ছাড়া কিছুই অর্জন করা যায় না বলেও মনে করেন তিনি।

আগামী নির্বাচন নিয়ে পরিকল্পনা: ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচন সামনে রেখে কেপিসিসি এখন বিজেপির বিরুদ্ধে অবস্থান তৈরিতে দুর্নীতি, শাসন ও বেকারত্ব- এই তিনটি বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় দেশ গঠনে কংগ্রেসের অবদানের ওপরও জোর দেওয়া হবে। সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা তুলে ধরার কথাও জানিয়েছেন দলটির নেতারা। শিবকুমারের সহকর্মী এবং কর্ণাটক কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা দীনেশ গুন্ডু বলেন, নেতারা যদি টুইট আর সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে না আসেন, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আর রাজপথে যাওয়া বন্ধ করে দেন, তাহলে কর্মী ও জনগণ উভয়েই আস্থা হারাবে।

দলাদলি ও জাতপাতের সমীকরণ: দলাদলি অনেক রাজ্যে কংগ্রেসের জন্য আত্মঘাতী হয়েছে, কর্ণাটকও এর ব্যতিক্রম নয়। শিবকুমার ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার মধ্যে বিবাদ রয়েছে। তাঁরা দু'জনই জনপ্রিয় নেতা। কর্ণাটক কংগ্রেসের সূত্র মনে করছে, এ কারণেই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের হাইকমান্ড মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্নেষক সন্দীপ শাস্ত্রী বলেছেন, দলাদলি বিজেপির জন্য ততটাই চ্যালেঞ্জ, যতটা কংগ্রেসের জন্য। আমি সবসময় যুক্তি দিয়েছি, কংগ্রেস ছাড়া কেউ কংগ্রেসকে পরাজিত করতে পারে না। দল যখন ঐক্যে থাকে, তখন তারা সেরা লড়াই করে।

আরও পড়ুন

×