ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ভোটের আগে কঠোর অবস্থানে মোদি সরকার

কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের নিন্দায় বিরোধীরা

ভোটের আগে কঠোর অবস্থানে মোদি সরকার

কেজরিওয়াল

 সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪ | ০২:১৭ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ | ০৮:০১

ভারতে বিরোধী দলগুলোর ওপর সরকারের ক্রমবর্ধমান দমনপীড়নের মধ্যেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে। দুর্নীতিবিরোধী এ নেতাকে দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর সমর্থকরা বলছেন, বিনা দোষে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে বিজেপি সরকার। শুধু আম আদমি পার্টির (আপ) এ নেতাই নন, গত জানুয়ারিতে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। হেমন্তের বিরুদ্ধে জমি ক্রয়ে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছিল। তারা দু’জনই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের নেতা।

২০২২ সাল থেকে কেজরিওয়াল ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনের বিরুদ্ধে বিজেপি অভিযোগ করে আসছে, দিল্লিতে মদ বিক্রির লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন বিক্রেতার কাছ থেকে আপ নেতারা আর্থিক সুবিধা নিচ্ছিলেন। 

ভারতের তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এ মামলার তদন্ত করছে। ইডি বলছে, মদ কেলেঙ্কারিতে কেজরিওয়াল ও তাঁর সঙ্গীরা কোটি কোটি রুপি আত্মসাৎ করেছেন।

এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েক দফা সমন পাঠায় ইডি। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিবার তাঁকে দিল্লির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দেশটির ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কট্টর সমালোচক কেজরিওয়াল আসলেই দোষী কিনা– এখনও প্রমাণ হয়নি। তবে ইন্ডিয়া জোটের এ নেতা কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছেন। গত কয়েক মাস ধরে বিরোধী দলগুলোর নেতারা তাদের ওপর চাপ প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মোদির বিরুদ্ধে তদন্ত সংস্থাগুলোকে অপব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে আসছেন। 

আগামী ১৯ এপ্রিল শুরু হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। এর আগেই একের পর এক বিরোধীদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে কেজরিওয়ালের দলের আরও তিন নেতার জেল হয়েছে। 

বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বলছে, নির্বাচন সামনে রেখে বিজেপি আয়কর বিভাগকে ব্যবহার করে তাদের দুর্বল করার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাঁর দলের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এক মাস ধরে জব্দ অবস্থায় আছে। তাদের হাতে ‘রেলের টিকিট’ কেনার মতো অর্থও নেই। কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারকে সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলেও মন্তব্য করেন রাহুল।

আপ নেতা সোমনাথ ভারতী বলেন, সবার কাছে এটা পরিষ্কার– আগামী নির্বাচনে হারের শঙ্কায় আছে মোদি সরকার। এটা কি কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ? বিরোধী নেতাদের ধরে ধরে জেলে ভরা হচ্ছে; তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হচ্ছে। 

আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার দিল্লিকে নজিরবিহীন সাংবিধানিক সংকটে ফেলেছে। আপ বলছে, কেজরিওয়াল কারাগারে থেকেই প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। কেজরিওয়াল সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী যা করার স্বপ্ন দেখছেন, তা তিনি করতে পারেন। এ পর্যন্ত তারা দু’জন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছেন। আরও কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তারও অসম্ভব নয়। 

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের জেরে দিল্লিতে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে আপ। এতে আইটিও চক, রাজঘাট ও বিকাশ মার্গে তীব্র যানজট দেখা দেয়। দলটির অনেক শীর্ষ নেতাও এ বিক্ষোভে অংশ নেন। এ সময় কেজরিওয়াল সরকারের মন্ত্রী অতিশি সিং ও সৌরভ  ভরদ্বাজকে আটক করে পুলিশ। আপের অভিযোগ, তাদের দুই হাজার কর্মীকে আটক করা হয়েছে।

কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল সাত দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।  ইডি ১০ দিনের হেফাজতে চেয়েছিল। শুনানি শেষে বিচারক ২৮ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।  

কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সোনিয়া গান্ধী ও দলটির সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। সামাজিক মাধ্যম এক্সে রাহুল বলেন, ‘আতঙ্কিত একনায়ক গণতন্ত্রকে হত্যা করতে চাইছেন।’ গ্রেপ্তারকে ‘ভুল’ এবং ‘অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। নিন্দা জানিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসও। সিপিআই (এম) নেতা সিতারাম ইয়াচুরি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জনগণ বিজেপিকে যে প্রত্যাখ্যান করবে– এ নিয়ে মোদি ও তাঁর দল আতঙ্কিত হয়ে গ্রেপ্তার করছে। 

তবে গ্রেপ্তারকে স্বাগত জানিয়েছেন দিল্লির বিজেপি নেতা বীরেন্দ্র সাচদেব। তিনি বলেন, সত্য কখনও চাপা থাকে না। কেজরিওয়ালকে তাঁর অপরাধের সাজা ভোগ করতে হবে। 

কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার নিয়ে ভিন্নধর্মী প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি। তিনি বলেন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল নিজ কর্মদোষেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। তিনি ও আন্না হাজারের সমর্থকরা মিলে দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছিলেন। শিলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনেক প্রমাণ হাতে থাকার দাবি করলেও কখনও তারা তা জনগণের সামনে প্রকাশ করতে পারেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শর্মিষ্ঠা।


 


 

আরও পড়ুন

×