উষ্ণতা বৃদ্ধির জের
ইউরোপে এক বছরে পৌনে ২ লাখ মানুষের মৃত্যু

ইউরোপে দ্রুত তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ২০:৫৩ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৪ | ২১:১৪
বাতাসে গ্রিনহাউস গ্যাসের উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে প্রতিদিন পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রীষ্মকালের ব্যাপ্তি বাড়ছে এবং পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় দীর্ঘ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহ। মানবসৃষ্ট এ উষ্ণতা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বিশ্বজুড়ে বাড়ছে হিটস্ট্রোক। গরমজনিত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। শীতল জলবায়ু অঞ্চল বলে পরিচিত ইউরোপেও তাপজনিত অসুস্থতায় মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
জাতিসংঘের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইউরোপ শাখা শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০০০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর হিটস্ট্রোক ও তাপজনিত বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৪ লাখ ৮৯ হাজার মানুষের। এর মধ্যে গড়ে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৪০ জন ইউরোপের বাসিন্দা। অর্থাৎ প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে হিটস্ট্রোক ও তাপজনিত অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা যান, তার ৩৬ শতাংশই ইউরোপের বাসিন্দা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ শাখা ইউরোপ মহাদেশ এবং মধ্য এশিয়ার ৫৩টি দেশের জনগণের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে। শুক্রবারের বিবৃতিতে সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রতিবছর বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির তুলনায় ইউরোপের দেশগুলোতে তাপ বাড়ছে দ্বিগুণ হারে। এ তাপ বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গত দুই দশকে ইউরোপে তাপজনিত অসুস্থতায় মৃত্যু বেড়েছে অন্তত ৩০ শতাংশ। ডব্লিউএইচওর ইউরোপ শাখার পরিচালক হ্যান্স ক্লাগ বলেন, হিটস্ট্রোকের পাশাপাশি তাপজনিত যেসব অসুস্থতায় ইউরোপে মৃত্যু ঘটছে, সেগুলো হলো হৃদযন্ত্রের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, সেরেব্রাল-ভাসকুলার সমস্যা এবং ডায়াবেটিস সংক্রান্ত জটিলতা। বৈশ্বিক তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির চূড়ান্ত মূল্য জীবন দিয়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে মানুষকে, বিবৃতিতে বলেন ক্লাগ।
চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, কলোরাডো, ওকলাহোমা, আরকানসাসসহ কয়েকটি শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়েছে। বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ইউরোপের মধ্যে স্পেন দ্বিতীয় দফায় তাপপ্রবাহের মুখে পড়েছে। দেশটির দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো কোনো শহরে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পেরিয়ে যেতে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর আগে ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার বলেছে, গত জুন মাসে যে গরম পড়েছে, তা বৈশ্বিক রেকর্ডে ছিল সবচেয়ে উষ্ণ। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে রয়টার্স জানায়, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাপপ্রবাহ আরও ঘন ঘন দেখা দিচ্ছে এবং দিনে দিনে তা আরও তীব্র হয়ে উঠছে। মারাত্মক গরম মানুষের শরীরে নানা ধরনের প্রভাব ফেলে। এতে হিটস্ট্রোকে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটছে। গত বছরের আগস্টে স্পেনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সপ্তাহে পতুর্গালে তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে দাবানলও সৃষ্টি হয়। পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে ধোঁয়াশা দেখা যায়। খবর এএফপির।