ইন্দোনেশিয়ায় প্রথা ভেঙে নারীদের কফিশপ ‘মর্নিং মামা’

‘মর্নিং মামা’ কফিশপে নারীরা। ছবি: সূত্র: ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোর
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:০৬ | আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ | ১৬:৩৬
ইন্দোনেশিয়ার ছোট্ট একটি শহর বান্দা আচেহ। পর্যটন শহর হিসেবে বিখ্যাত এই শহরে রয়েছে এক হাজারের বেশি কফিশপ। যেখানকার প্রায় সবগুলোর দোকানিই পুরুষ। সেখানে রক্ষণশীল এই শহরে প্রথা ভেঙে ‘মর্নিং মামা’ নামে কফিশপ করেছেন ২৮ বছর বয়সী নারী কুররাতা আয়ুনি। শুধু তাই নয়- কফিশপের সব কর্মচারীই নারী।
নারীরা স্বাচ্ছদ্যে কাজ করতে পারবে এমন উদ্দেশ্যেই তিনি কফিশপটি নির্মাণ করেন।, বলেন কুররাতা আয়ুনি।
তিনি বলেন, ‘যদিও প্রদেশটি প্রায়ই ভূমিকম্পের কবলে পরে বা সুনামির মুখোমুখি হয়। তবুও এখানে দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। কফিশপে সাঙ্গার ল্যাটে নামের কফির আইটেমটি বেশি জনপ্রিয়। যেটিতে কনডেন্সড মিল্ক মেশানো থাকে।
বান্দা আচেহ শহরটি কফির সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে প্রায় ১০০ বছর আগে যখন ডাচদের ঔপনিবেশন ছিলো। শহরটি অত্যন্ত রক্ষণশীল এবং নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পড়ার আইন রয়েছে। এখানে কফির দোকান চালানো পুরুষদের কর্মক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত। এরকম একটি জায়গায় নারীরা কফির দোকানে কাজ করবে তা ভাবাই যায় না।
মানবাধিকার সংস্থার কর্মী আন্দ্রেস হারসোনো বলেন, ‘আচেহ-তে নারীদের জন্য শিক্ষা এবং কর্মজীবন চালানো অত্যন্ত কঠিন, তারা শুধু আইনি বিধিনিষেধই নয়, সামাজিক নিপীড়নেরও সম্মুখীন হয়।’
তিনি আরও বলেন, এখানে ব্যাপক সমালোচনা ছাড়াও জুয়া খেলা, মদ্যপান, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে নারীদের।
তবে এখানে নারীদের এতো নিয়মের মধ্যেও কুররাতা ছিলো ব্যতিক্রম।
যেভাবে পরিবর্তনের হাওয়া
কুররাতা ব্যবসায়িক স্বার্থ ছাড়াও এমন একটি কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজন অনুভব করেন যেখানে নারীরা স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারবে এবং বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবে। দোকানটিতে কফির পাশাপাশি বই এবং স্যানিটারি ন্যাপকিনও বিক্রি করা হয়।
কুররাতা বলেন, ‘কফিশপটি সম্পূর্ণ ধূমপানমুক্ত এবং নিরিবিলি পরিবেশ। পুরুষরাও এখানে সানন্দে কফি পান করতে আসেন।
তিনি বলেন, ‘নারীরা যে নিজেরা ব্যবসা দাঁড় করাতে পারে এবং নেতৃত্ব দিতে পারে, এই কফিশপটিই তার প্রমাণ। এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।
নারীরা কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, এই কফিশপে চাকরির জন্য প্রায় এক হাজার নারী আবেদন করেছেন। আমি তাদের জীবনের গতিপথ পরিবর্তন করে সুযোগ তৈরি করতে চাই।
২১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মেলু আলিনা বলেন, ‘আমি যখন দোকানের কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলি তখন আমি খুব আপন আপন অনুভব করি। মনে হয়, আমি আমার বোনের সঙ্গে কথা বলছি।
যেভাবে সাহায্যের সূত্রপাত
২০০৪ সালে কুররাতার যখন আট বছর বয়স তখন ভারত মহাসাগরের সুনামিতে বাবা-মাকে হারান। সেই সময় প্রায় দুই লাখ মানুষ মারা যায় সুনামিতে। বান্দা আচেহ শহরের কাছে তার গ্রামটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু কুররাতা অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়। এরপর থেকে চাচা-চাচির সঙ্গে বাস করতে থাকেন।
কুররাতা বলেন, তিনি দুঃখ-দুর্দশা কাটাতেই নারীদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। ফটোগ্রাফি থেকে কিছু অর্থ সঞ্চয় করেন তিনি। এর সঙ্গে চাচার সহযোগিতার মাধ্যমে কফিশপটি দাঁড় করান তিনি।
‘পুরুষদের খারাপ মন্তব্যের ভয়ে অনেক নারী কাজ করতে ভয় পান। তারা মনে করে নারীদের ঘরে থাকা উচিত। কিন্তু সময় বদলে গেছে। এখন নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করছেন।’, বলেন তিনি
কুররাতা বলেন, ‘আমার মূল লক্ষ্য নারীদের অনুপ্রাণিত করা। আমরা দেখিয়ে দিতে চাই আমরাও উদ্ভাবক হতে পারি। তাই নারীদের আহ্বান জানাই, ঘরে বসে থাকবেন না।’
সূত্র: ফ্রান্স টোয়েন্টি ফোর
- বিষয় :
- ইন্দোনেশিয়া
- কফি