রয়টার্সের বিশ্লেষণ
‘বিজয়ী’ হিজবুল্লাহর সামনে ক্ষতি পোষানোর দীর্ঘ লড়াই

ছবি-রয়টার্স
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪ | ০৭:০৯
রণক্ষেত্রে এখনও পড়ে আছে যোদ্ধাদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন মরদেহ। হিজবুল্লাহ তাদের বীরদের দাফন দ্রুত শেষ করবে, যারা ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। সংগঠনটি এখন যুদ্ধের ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার দিকে এগোবে। কিন্তু এ পথ অনেক দীর্ঘ। হিজবুল্লাহ মনে করে, গত ১৪ মাসে তাদের কয়েক হাজার যোদ্ধা প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন গত সেপ্টেম্বরে ইসরায়েলের সর্বাত্মক হামলা শুরুর পর।
হিজবুল্লাহর শীর্ষ চার কর্মকর্তার বরাত দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। একটি সূত্র জানায়, ইরান সমর্থিত সংগঠনটি তাদের অন্তত চার হাজার যোদ্ধাকে হারিয়েছে, যা ২০০৬ সালের চেয়ে ১০ গুণ বেশি। ২০০৬ সালেও ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছিল হিজবুল্লাহ। লেবানন কর্তৃপক্ষ বলছে, ইসরায়েলের হামলায় ৩ হাজার ৮০০ জন নিহত হয়েছেন। তবে এ সংখ্যায় সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের পৃথক করা হয়নি।
হিজবুল্লাহ নিজেদের এ লড়াইয়ে জয়ী বলে মনে করছে। পাশাপাশি লেবাননের বাসিন্দারাও জয়ের অনুভূতি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন। এবারের যুদ্ধে হিজবুল্লাহ আগাগোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শীর্ষ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর এখনও নতুন নেতা পেতে হিমশিম খাচ্ছে সংগঠনটি। দক্ষিণ বৈরুতে ব্যাপক বোমা হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহ সমর্থক বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা ও বাস্তুচ্যুত করা হয়েছে।
গত বুধবার কার্যকর হয় যুদ্ধবিরতি। এ প্রেক্ষাপটে পুনরায় সংগঠিত হওয়াই এখন হিজবুল্লাহর মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করাও অগ্রাধিকারে রয়েছে। সংগঠনের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ত্রুটি থাকায় ইসরায়েল এত ব্যাপকভাবে তাদের লক্ষ্যে পরিণত করতে পেরেছে। ইসরায়েলের প্রযুক্তি সক্ষমতা সম্পর্কেও হিজবুল্লাহর ধারণা ভালো ছিল না। চলমান বাস্তবতায় এ বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা হবে।
হাসান ফাদাল্লাহ নামে হিজবুল্লাহর এক জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে তারা যেসব বিষয় নিয়ে ভাবছেন, তা হলো লোকজনকে কীভাবে পুনর্বাসন করবেন, কীভাবে ধ্বংসস্তূপ সরাবেন, কীভাবে শহীদদের শেষ বিদায় জানাবেন। পরে তারা পুনর্গঠন নিয়ে ভাববেন।
পুরো লেবাননে ইসরায়েল হামলা চালালেও হিজবুল্লাহ অধ্যুষিত এলাকাগুলো বেশি আক্রান্ত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে ওয়াকিটকি ও পেজার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হিজবুল্লাহর যোগাযোগ নেটওয়ার্কে যে আঘাত আনা হয়েছিল, সে সময় আহতদের এখনও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হিজবুল্লাহ সমর্থক দক্ষিণ লেবাননের বাসিন্দা এক নারী জানান, পেজার বিস্ফোরণে তাঁর এক ভাই শহীদ হয়েছেন; দুলাভাই আহত হয়েছেন। স্বজনদের মধ্যে অনেকেই হতাহত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শহীদদের মরদেহ আমরা সংগ্রহ করে কবর দিতে চাই। আমরা আমাদের বাড়িঘর পুনর্গঠন করতে চাই।’
ইসরায়েলের হামলায় লেবাননে বাস্তুচ্যুত হন ১০ লাখের বেশি মানুষ। লেবাননের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সংগঠনটি এখন পুনরুত্থান ও পুনর্গঠনের দিকে নজর দেবে। তিনি বলেন, হিজবুল্লাহ এখন অনেকটা আহত ব্যক্তির মতো। একজন আহত ব্যক্তি কি উঠে দাঁড়াতে ও লড়াই করতে পারে? আহত ব্যক্তিকে অবশ্যই তাঁর নিজের ক্ষত সারিয়ে তুলতে হবে। তাঁর প্রত্যাশা, হিজবুল্লাহ বিস্তৃত পরিসরে কার্যক্রম হাতে নেবে। তারা নীতিগত পর্যালোচনা, সব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু, ইসরায়েল ও তার অস্ত্র এবং লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়গুলো বিবেচনা করবে।
ইরান বলেছে, ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হিজবুল্লাহকে তারা সংস্কারের জন্য সহযোগিতা দেবে। বিশ্বব্যাংক লেবাননের বাড়িঘর সংস্কারে ২৮০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছে। যুদ্ধে লেবাননের ৯৯ হাজার বাড়িঘর আংশিক ও পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাজায় ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের ওপর হামলার জেরে গত বছরের ৮ অক্টোবর ইসরায়েলে রকেট ছোড়ে হিজবুল্লাহ। এতে উত্তরাঞ্চল থেকে ৬০ হাজার বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ইসরায়েল।
- বিষয় :
- ইসরায়েল
- হিজবুল্লাহ
- লেবানন
- যুদ্ধবিরতি