ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল এত ভয়ঙ্কর কেন

লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল এত ভয়ঙ্কর কেন

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৮:২১ | আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৯:০৯

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। উল্টো ঝড়ের বেগে ছড়িয়ে পড়ছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। তিন দিনে পুড়ে গেছে শত শত ঘরবাড়ি, প্রাণ গেছে অন্তত ১০ জনের।

লস অ্যাঞ্জেলসে বর্তমানে পাঁচটি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। এতে পুড়ছে সেখানকার ১১৬ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার অবকাঠামো পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভয়াবহ এই দুর্যোগ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলেস, প্রতিবেশি রাজ্যগুলো থেকেও আনা হচ্ছে আগুন নেভানোর সরঞ্জাম ও কর্মীবাহিনী।

এখন প্রশ্ন উঠেছে দাবানল কেন এমন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় বৃষ্টি না হওয়ায় ফলে খরা আর প্রবল বাতাসের কারণে দাবানল দ্রুত ছড়াচ্ছে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দাবানল ভয়ঙ্কর হওয়ার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে যদিও ঠিক কোন কোন বিষয়গুলো এজন্য দায়ী, সেটি এখন স্পষ্ট নয়।

ক্যালিফোর্নিয়া ফায়ার সার্ভিসের একটি ব্যাটালিয়নের প্রধান ডেভিভ অ্যাকুনারের বলেন, মানুষের কারণেই ক্যালিফোর্নিয়া এলাকার ৯৫ শতাংশ দাবানলের শুরুটা হয়। যদিও এখনকার দাবানলের শুরুটা কীভাবে হয়েছিল, সেটি এখন স্পষ্ট করেননি সরকারি কর্মকর্তারা।

দাবানলের শিখা ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা আনা বাতাসের কথা। মরুভূমির পরিবেশ বা শুষ্ক অঞ্চল থেকে ঘণ্টায় ৯৭ কিলোমিটার গতিতে এই বাতাস বয়ে যায় উপকূলের দিকে। এ বাতাসকে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সান্তা আনার এই বাতাসই লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল উসকে দিচ্ছে, যা বাড়িঘর ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে। বাস্তুচ্যুত করছে হাজারো মানুষকে।

শুষ্ক আর উষ্ণ সান্তা আনার বাতাস বেশ শক্তিশালী। যুক্তরাষ্ট্রের নেভাডা, উটাহ ও ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের শুকনো এলাকা থেকে এটি উড়ে আসে। ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির পরিবেশ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অ্যালেক্স হল বলছেন, শীতের মাসগুলোতে এ বাতাস দেখা যায়, যে সময়টাতে উত্তর গোলার্ধে মধ্য অক্ষাংশজুড়ে আবহাওয়ায় নিম্ন ও উচ্চচাপ বেশি থাকে।

ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার নিম্নচাপ থাকা অঞ্চলের দিকে ধেয়ে এই উষ্ণ বাতাস বইতে থাকে, যাকে বলা হচ্ছে সান্তা আনা বাতাস। সান্তা আনার বায়ু স্বাভাবিকভাবেই উষ্ণ। কারণ সেটি ‘গ্রেট বেসিনে’ মরুভূমির মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

অ্যালেক্স হল বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন কীভাবে সান্তা আনা বাতাসকে প্রভাবিত করছে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত নন। একটা বিষয় হল উষ্ণ তাপমাত্রা আরও বেশি আগুনের সৃষ্টি করে।

বৃষ্টির অভাব আর প্রবল বাতাস দাবানলে ঘি ঢাললেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে, যা এমন দাবানলের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে বড় দাবানলের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের যে সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই দেশটির সরকারের গবেষণায়।

ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন যেমন অতিরিক্ত তাপ, খরা, উষ্ণ বায়ুমণ্ডল যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের দাবানলের মূল কারণগুলোর একটি। আর উষ্ণ গ্রীষ্ম ও বৃষ্টির অভাবে খরার কারণে বিশেষত ক্যালিফোর্নিয়ার অবস্থা শোচনীয়।

দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানলের সময় ধরা হয়ে থাকে সাধারণত মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত। তবে এ অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এর আগে বলেন, দাবানল একটি বহুবর্ষজীবী বা দীর্ঘ সময়ের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কোনো মওসুম নেই।

লস অ্যাঞ্জেলেসের পলিসেডসের এবারের দাবানল তিন দশকের মধ্যে তৃতীয়বারের মত ঘটল। ছড়িয়েছে অনেক বড় পরিসরে। এতে ১০ জনের প্রাণহানি ছাড়াও লস অ্যাঞ্জেলেসের প্রায় দেড় লাখ মানুষ তাদের ঘড়বাড়ি ছেড়েছে।

ফায়ার ফাইটাররা প্রাণপণ চেষ্টার পরও তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। পলিসেডসের দাবানলের মত ইটনের দাবানলও নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে হলিউড হিলস এলাকা। এখন পর্যন্ত ১০ হাজার স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। যার মধ্যে রয়েছে বাড়িঘড়, স্কুল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

তবে ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দাবানল অনেকটা গতি হারিয়েছে। 

মঙ্গলবার থেকে পলিসেডসের ১৭ হাজার ২০০ একর এলাকার পাশাপাশি আগুন ছড়িয়েছে ইটনের ১০ হাজার ৬০০ একর, হার্স্টের ৮৫৫ একর, লিডিয়ার ৩৫০ একর, সানসেটের হলিউড হিলসসহ ৪৩ একর। ছড়িয়েছে উডলি ও ওলিভাস এলাকাতেও।

দাবানলের কারণে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি ও অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দারে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস

আরও পড়ুন

×