বিজ্ঞান
এবার মানুষের রক্ত থেকে সবচেয়ে শক্তিশালী বিষনাশক

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক টিম ফ্রিড শরীরে একটু একটু করে সাপের বিষ ঢুকিয়েছেন। এখন তাঁর রক্ত বিভিন্ন প্রজাতির সাপের বিষ প্রতিরোধ করতে পারে - সিএনএন
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৫ | ০১:১৭ | আপডেট: ০৪ মে ২০২৫ | ১০:৫৮
দুই দশক ধরে টিম ফ্রিড নিজেকে ইচ্ছাকৃতভাবে সাপের বিষে আক্রান্ত করেছেন। কখনও সরাসরি সাপের কামড় খেয়ে, আবার কখনও ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ প্রয়োগ করেন তিনি। এতে ওই ব্যক্তির রক্তে একটি বিস্ময়কর অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রাণীর ওপর পরীক্ষায় টিম ফ্রিডের রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডি সাপের বিস্তৃত প্রজাতির গুরুতর বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর ফল দিয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিভেনম সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর। ফ্রিডের ১৮ বছরের এই দুঃসাহসিক যাত্রা ভবিষ্যতে সব ধরনের বিষাক্ত সাপের কামড়ের চিকিৎসায় একটি সর্বজনীন অ্যান্টিভেনম খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখতে পারে।
মাম্বা, কোবরা, তাইপান, ক্রেইটসহ বিশ্বের ভয়ংকর প্রাণঘাতী কিছু সাপের একাধিক প্রজাতির ২০০টিরও বেশি কামড় সহ্য করেছেন টিম ফ্রিড। এ ছাড়া এসব সাপের বিষের ৭০০টিরও বেশি ইনজেকশন শরীরে পুশ করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান সেন্টিভ্যাক্সের প্রধান নির্বাহী এবং গবেষণাপত্রের লেখক জ্যাকব গ্ল্যানভিল বলেন, ‘ফ্রিড ১৮ বছর ধরে নিজের শরীরে সাপের বিষ প্রয়োগ করে চলেছেন। বিষধর এসব সাপের বিষ একটি ঘোড়াকেও মেরে ফেলতে পারে। এটি এককথায় বিস্ময়কর! তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, ফ্রিড যা করেছেন, তা কেউ করার চেষ্টা করবেন না। সাপের বিষ অত্যন্ত বিপজ্জনক।’
গবেষণা অনুযায়ী, ফ্রিডের রক্ত থেকে সংগৃহীত দুটি সুরক্ষা অ্যান্টিবডি ও একটি ক্ষুদ্র আণবিক বিষ প্রতিরোধক একত্র করে তৈরি করা হয়েছে নতুন এই অ্যান্টিভেনম ককটেল। এটি ১৯টি মারাত্মক প্রজাতির মধ্যে ১৩টির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সুরক্ষা এবং বাকিগুলোর ক্ষেত্রে আংশিক সুরক্ষা দিতে সক্ষম। ঘোড়া বা ভেড়াকে বিষ দিয়ে বর্তমানের প্রচলিত অ্যান্টিবডি তৈরি করা হয়। এতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও আশঙ্কা থাকে।
প্রথমে ইউটিউব ভিডিও তৈরি করতে গিয়ে বিষাক্ত সাপ নাড়াচাড়ার সময় নিজেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন ফ্রিড। সাবেক এই ট্রাক মেকানিক জানান, প্রথমদিকে তিনি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছিলেন, যখন পরপর দুটি কোবরার কামড় তাঁকে কোমায় পাঠিয়ে দেয়। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মরতে চাইনি। আমি একটি আঙুলও হারাতে চাইনি। তবে এখন আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হলো আমি মানবতার জন্য ভালো কিছু করছি। আমি এতে গর্বিত।’
- বিষয় :
- বিজ্ঞানী