ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলের আগ্রাসন

গাজার অবস্থা ‘নরকের চেয়েও খারাপ’

গাজার অবস্থা ‘নরকের চেয়েও খারাপ’

মধ্য গাজার নুসেইরাতের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের সামনে বুধবার খাবারের জন্য জড়ো হয়েছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ইসরায়েলি হুমকির মুখে ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ উপত্যকায় ত্রাণ বিতরণ করেনি। ছবি: এএফপি

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৫ | ০১:২৪ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৫ | ১০:৪৫

গাজার পরিস্থিতিকে ‘নরকের চেয়েও খারাপ’ বলে বর্ণনা করেছে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি)। উপত্যকায় ইসরায়েলের অবরোধ, অব্যাহত বিমান হামলা, স্থল অভিযান ও ত্রাণ সরবরাহের নামে ক্ষুধার্ত মানুষকে গুলি করে হত্যার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার সংস্থাটি এ মন্তব্য করল।

সংস্থার প্রধান মিরজানা স্পলজারিক বলেন, মানবতা ব্যর্থ হচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধ করে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে জিম্মিদের মুক্ত করতে দেশগুলো যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

গতকাল বুধবার জেনেভায় সংস্থাটির সদরদপ্তরে বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। মিরজানা বলেন, ফিলিস্তিনিদের মানবিক মূল্যবোধকে চূর্ণ করে দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মান্য করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, গাজায় যা হচ্ছে, তা যে কোনো আইনি গ্রহণযোগ্যতা, নৈতিকতা ও মানবিক মান অতিক্রম করে গেছে।

উপত্যকায় যেসব আন্তর্জাতিক সংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, আইসিআরসি তাদের অন্যতম। সংস্থাটির অন্তত ৩০০ কর্মী উপত্যকার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। রাফায় তাদের একটি চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে। ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিতর্কিত যে ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রটিতে গুলি করে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা হয়েছে, সেটি তাদের চিকিৎসাকেন্দ্রের অদূরেই।

আইসিআরসি জানায়, সোমবার সকালে রাফায় তাদের অস্ত্রোপচার দল ১৮৪ জন আহত-রক্তাক্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে আসে। তাদের মধ্যে ১৯ জন পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই মারা যান। আরও আটজন মারা যান কিছুক্ষণ পর। এক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে গাজার এ ফিল্ড হাসপাতালে এটিই একক সর্বোচ্চ হতাহতের ঘটনা। 

সম্প্রতি গাজায় কিছুসংখ্যক ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছায়। প্রয়োজনের তুলনায় যা একেবারেই অপর্যাপ্ত। গাজার সব মানুষের কাছে ত্রাণ যায়নি। বিশেষ করে উত্তর গাজায় কোনো ত্রাণ পৌঁছতে দেয়নি ইসরায়েল। এরই মধ্যে বিতরণের নামে গুলি করে ত্রাণপ্রত্যাশীদের হত্যা করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। গতকাল বুধবার বেশ কয়েকটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়। গাজা থেকে ইউনিসেফের মুখপাত্র বলেন, যে পরিমাণ ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে, তা একেবারেই অপর্যাপ্ত।

এ পরিস্থিতিতে অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। বুধবার এক দিনে গাজায় আরও ৯৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হন ৪৪০ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত ৫৪ হাজার ৬০৭ জন নিহত ও ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৪১ জন আহত হয়েছেন। হতাহতের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও বিক্ষোভ চলছে। তিন দিনব্যাপী একটি কর্মসূচির ডাক দেয় ইসরায়েলের একটি সংগঠন, যেখানে বিক্ষোভকারীরা মিছিল নিয়ে তেল আবিব থেকে গাজার সীমান্ত অভিমুখে রওনা করবেন। ইসরায়েলের একটি কট্টরপন্থি গ্রুপ সম্প্রতি গাজার ত্রাণের ট্রাক আটকে দিয়েছিল। এ বিক্ষোভকারীরা তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোরও বার্তা দিচ্ছেন। তারা যুদ্ধ বন্ধ ও জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছেন।

গাজায় নিঃশর্ত এবং স্থায়ী একটি যুদ্ধবিরতি অবিলম্বে কার্যকর করতে আনা প্রস্তাবে বুধবার ভোট গ্রহণ করতে যাচ্ছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ। এতে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জাতিসংঘের কূটনীতিবিদরা। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী ১০ সদস্যের তত্ত্বাবধানে ওই প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরায়েলিদের অবিলম্বে মুক্তির বিষয়েও খসড়ায় বলা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জাতিসংঘের কূটনীতিক মঙ্গলবার বলেছেন, প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ভেটো আসার আশঙ্কা রয়েছে।

গ্রেটা গাজায় পৌঁছতে পারেন কাল

ভূমধ্যসাগরে জাহাজে ত্রাণ নিয়ে গাজার দিকে এগোচ্ছেন জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ ও তাঁর ১১ সদস্যের দল। তবে ‘মাদলিন’ নামে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের ওই জাহাজে হামলার ঝুঁকিও রয়েছে। ফ্লাইট রাডারের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের তৈরি হেলিনিক কোস্টগার্ড ড্রোন এরই মধ্যে ‘মাদলিন’-এর ওপর ঘুরে গেছে। গ্রিসের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ড্রোন মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আরও পড়ুন

×