ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

প্রকাশ্য বিবাদ

ইলন মাস্কের কার্যকলাপে ‘হতাশ’ ট্রাম্প, মাস্ক বললেন, ট্রাম্প ‘অকৃতজ্ঞ’

পাল্টা আক্রমণে ট্রাম্পকে তুলোধুনো করলেন মাস্ক 

ডোনাল্ড ট্রাম্প-ইলন মাস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিবাদে রূপ নিয়েছে (ছবি-গার্ডিয়ান)

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৬ জুন ২০২৫ | ০৮:৩৯ | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৫ | ০৯:১৬

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রকাশ্য বিবাদে রূপ নিয়েছে। একে-অপরের প্রতি পাল্টাপাল্টি আক্রমণ ছুঁড়ে দিয়েছেন। সরকারি খরচ কমানোর জন্য বিশেষ সরকারি উপদেষ্টা পদে ছিলেন ইলন মাস্ক। তার কর ও ব্যয়-সংক্রান্ত বাজেট বিল নিয়ে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রাম্প ও মাস্কের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল।

ইলন মাস্ক গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল কর ও ব্যয় বিলকে ‘জঘন্য’ বলে সমালোচনা করে প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন। ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে ইলন মাস্কের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, তার কার্যকলাপে তিনি ‘হতাশ’। জবাবে মাস্ক বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অকৃতজ্ঞ’। ।স্যোশাল মিডিয়া এক্সে একের পর এক পোস্টে ট্রাম্পকে পাল্টা তুলোধুনো করছেন মাস্ক। 

হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সঙ্গে বৈঠকের সময় ইলন মাস্ককে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প বলেন, ইলন মাস্কের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক ছিল। সেটা আর থাকবে কি না আমি জানি না। আমি মাস্ককে নিয়ে খুবই হতাশ। আমি তাকে অনেক সাহায্য করেছি। তিনি এখানে অন্যদের চেয়ে বিগ বিউটিফুল বিলের ভেতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন। এতে তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎই তার সমস্যা দেখা দিল। মাস্ক এই বিলের যে সমালোচনা করেছেন, তাতে ট্রাম্প বিস্মিত হয়েছেন বলে জানান।

তবে ট্রাম্পের এই দাবিকে ‘মিথ্যা’ বলেছেন ইলন মাস্ক। প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যের পর স্যোশাল মিডিয়া এক্সে পাল্টা জবাব দিয়ে ইলন মাস্ক লেখেন, আমি না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন। ডেমোক্র্যাটরা হাউজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের সূক্ষ্ম ব্যবধান (৫১-৪৯) থাকত। অথচ ট্রাম্প এই ধরনের অকৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন। 

ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় ধনকুবের টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্ক জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি নির্বাচনে সবচেয়ে বড় অনুদানদাতাও ছিলেন। তাঁর সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠতা সব মহলে আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে।প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ও তার দলের অন্যান্য রিপাবলিকানদের জন্য ২৭ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন মাস্ক। সেইসূত্রে ট্রাম্পের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ট্রাম্পের। ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ের পর মাস্কের জন্য আলাদা একটি দফতর তৈরি করেছিলেন। সেই সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই)-এর কাজ ছিল প্রশাসনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করে অর্থনৈতিক সাশ্রয় করা। গত মাসে কর ও ব্যয় সংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করার পর ট্রাম্প এটিকে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নাম দেন। সেই বিল নিয়ে পরে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। খবর-বিবিসি ও এএফপি

মাস্কের দাবি ছিল, তিনি এবং তার সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনে থেকে এতদিন ব্যয় কমাতে যে কাজ করে এসেছেন সবই ব্যর্থ হবে এই বিলের কারণে। বিলটি তাকে দেখানোর আগেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সেটি পাস করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তবে বিলটির বিরোধিতায় মাস্কের ব্যক্তিগত কারণ থেকে থাকতে পারে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলছেন, পর্যায়ক্রমিক কর ও ব্যয় সংক্রান্ত এই বিলের সরাসরি প্রভাব পড়ত মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলার উপর।

ডিওজিই প্রধানের পদ থেকে ইস্তফার পর বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইলন মাস্কের দায়িত্ব ছিল সাময়িক। তাই এ বিদায় কোনো অপ্রত্যাশিত ঘটনা নয়। বিশেষ সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর সরকারি দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা আগামী ৩০ মে। ১৩০ দিনের মেয়াদে তিনি দায়িত্বে এসেছিলেন। তবে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, ফেডারেল সরকারকে পুনর্গঠন ও ব্যয়-কর্মী কমাতে ডোজের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মাস্ক বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডোজের কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। সরকারের মাধ্যমে এটা জীবনের অংশ হয়ে উঠবে।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ নীতি নিয়েও সমালোচনা করেছেন মাস্ক। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলেও তিনি সতর্ক করেন। মধ্যপ্রাচ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংক্রান্ত তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের চুক্তি প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির হাতে চলে যাওয়া নিয়েও তিনি ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন। 

এক সময় মাস্ককে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ’ মনে করা হতো। তবে এখন তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ইলন মাস্ক জানান, নিজের কোম্পানিগুলোকে বেশি সময় দিতেই তিনি সরকারি দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।


 

আরও পড়ুন

×