‘পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা বন্ধ করতে আরও আগ্রাসী চীন’

উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদে ভারতের মুসলিমদের প্রতিবাদ-এপি
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ | ০৩:২৮ | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ | ০৪:০৭
চীন সরকার তার দেশে ভিন্নমতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ করতে দমন-পীড়ন নীতির আশ্রয় নিয়েছে অনেক আগেই। তাদের এই নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা বন্ধ করতে চীনের কমিউনিস্ট সরকার দিন দিন আগ্রাসী হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক মতামতধর্মী নিবন্ধে এমনটাই জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, সম্প্রতি তাদের এই নীতির এক নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক উইঘুর পরিবার। তারা জানিয়েছে, চীন সরকারের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের জন্য তাদের এক নিকটাত্মীয়কে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির সরকার।
গুলশান আব্বাস নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের জিনজিয়াং অঞ্চলের রাজধানী উরুমকি থেকে নিখোঁজ হন।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ১ কোটি উইঘুর মুসলিমের বাস। এই সম্প্রদায়ের লোকজনের প্রতি চীন সরকার বছরের পর বছর ধরে নির্যাতন চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘ জানিয়েছে, জিনজিয়াংয়ে প্রায় ১০ লাখ উইঘুর ও অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনকে ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন চালাচ্ছে চীন সরকার।
আব্বাসের বোন রুশান আব্বাস। তিনি উইঘুরদের প্রতি হওয়া মানবাধিকার অপরাধ সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করতে ওয়াশিংটনভিত্তিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ‘ক্যাম্পেইন ফর উইঘুর্স’ গঠন করেছেন।
হডসন ইনস্টিটিউটে একটি পাবলিক প্যানেলে অংশ নেওয়ার এবং জিনজিয়াংয়ের শিবিরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করার কয়েকদিনের মধ্যেই রুশানের বড় বোন নিখোঁজ হন।
এখন রুশান এবং গুলশান আব্বাসের মেয়ে জিবা মুরাত জেনেছেন, গুলশান আব্বাসকে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে চীন সরকার। গুলশান আব্বাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার বোনের অ্যাডভোকেসি গ্রুপের সঙ্গে জড়িত ছিল। এই সংগঠনকে বেইজিং একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
জিবা মুরাত এখন ভার্জিনিয়ায় থাকেন। একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ২০১৯ সালের মার্চে আমার মাকে গোপনে দণ্ড দেওয়া হয়। বিষয়টি সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি।
তিনি বলেছেন, আমার মা চিকিৎসা সেবার সঙ্গে যুক্ত। তিনি কখনও রাজনীতি করেননি। সারাজীবন তিনি শুধু মানুষকে সাহায্য করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আত্মীয়দের মুখ বন্ধ করার জন্যই আমার মায়ের বিরুদ্ধে বেআইনি অভিযোগ আনা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখায় উইঘুরকে দণ্ড দেওয়া চীন সরকারের নতুন কোনো কৌশল নয়।
গত বছর রায়হান আসাত নামে ওয়াশিংটনভিত্তিক এক উইঘুর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, তার ভাই একপার আসাতকে গোপনে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে চীন সরকার।
২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক বিনিময় প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার পর জিনজিয়াং ফিরে যান একপার। এর কয়েকদিন পরেই তিনি নিখোঁজ হন।
একপার একজন সোশ্যাল মিডিয়া উদ্যোক্তা ছিলেন, যিনি চীনা মিডিয়ায় উইঘুর এবং হান চীনাদের মধ্যে সমঝোতা প্রচারের জন্য প্রশংসিত হয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার পরে তাকে আটক করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে ‘জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর’ অভিযোগ আনা হয়।
উইঘুরদের বিরুদ্ধে চীন সরকারের এই দমন নীতি যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছে একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া উইঘুর বা তাদের পরিবারের সদস্যদের উপর এখনও চীনের হামলা রোধ করতে বাইডেন প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে হবে।
- বিষয় :
- ওয়াশিংটন পোস্ট
- যুক্তরাষ্ট্র
- উইঘুর
- চীন