এখানে বসা নিষেধ

শিল্পকর্ম :: বিপ্লব সরকার
কামরুন নাহার শীলা
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫ | ০০:১৫
নির্বিকার একাডেমির ততদিন পর্যন্ত বেশ ভালোই চলছিল যতদিন না এই অলক্ষুনে লোকটা কোনো সার্টিফিকেট ছাড়াই হাজির হয়েছিল। সার্টিফিকেট তো দূরের কথা, লোকটা একেবারেই বকলম– কোনো নিয়মকানুন না জেনেই সে বড় হয়েছে। তার নাকি কোনো নামই নেই। এসেই কী যে একটা ঝামেলা পাকিয়ে দিল ব্যাটা! লোকটার মাঝে এক অদ্ভুত নীরবতা ছিল। সে কথা বলত না, তর্ক করত না, শুধু বসে থাকত শিরীষ গাছটার ছায়ায়। একাডেমির পাঠ্যক্রমের বাইরে এমন একটা ভাষা ছিল তার চোখে; যা সেখানকার কেউই পড়তে পারত না।
পৃথিবীর এমন একটা দেশের গল্প এটা, যেখানে প্রতিষ্ঠানে যা শেখানো হয় তাকেই চূড়ান্ত সত্য বলে বিবেচনা করা হয়। এ দেশে মানুষ জন্মায় কেবল শেখার জন্যই। মৃত্যুর আগেই সে তার প্রয়োজনীয় সবকিছু শিখে ফেলে, জীবদ্দশায় তা অক্ষরে-অক্ষরে কাজে লাগায়। বাস্তব জীবনে কাজে দেয়– এমন ধরনের শিক্ষাই এখানে সিলেবাসভুক্ত। আর যার হাতে পাঠের এই গুরুভার, তার নামই নির্বিকার একাডেমি।
এটা কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই নয়– এক ধরনের প্রকল্পও। যার মূল উদ্দেশ্য হলো এমন সব প্রজন্ম তৈরি করা; যারা বিনয়ী হবে আর জোটবদ্ধ থাকবে। একাডেমিক ভবনগুলোর মতোই শক্তিশালী এর সিলেবাস– একেবারে প্রাসঙ্গিক আর মূলানুগ। এখানে শেখানো হয় কীভাবে ভাবতে হয় না, কীভাবে প্রশ্নাতীতভাবে বিশ্বাস করতে হয় এবং কীভাবে সন্দেহ আর কৌতূহলের দরজায় চিরস্থায়ীভাবে পেরেক ঠুকে দেওয়া যায়। শিক্ষকগণ এমনভাবে শিক্ষার্থীদের মগজধোলাই করেন যে তারা সিলেবাসের বাইরে যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারে না। এই প্রতিষ্ঠানে চর্চার মুখ্য বিষয় হচ্ছে ‘চিন্তাশূন্য অনুসরণ’। ক্লাসে শেখানো হয় ‘তর্ক মানেই ত্রুটি’, ‘উৎসাহ হচ্ছে বিচ্যুতি’, ‘সন্দেহ একটা নৈতিক ব্যাধি’, ‘নিজস্বতা এক ধরনের অলীক কল্পনা’, ‘ভিন্নতা এক ধরনের বিলাসিতা’ আর ‘কর্তৃত্বই চূড়ান্ত সত্য’।
প্রশিক্ষণের সূচনা হয় নিষ্পাপ শিশুদের নিয়ে। শুরুতেই তাদের শেখানো হয় ‘আমি’– নিজেকে চেনার ভাষা। সেই আমিকে তারা চিনতে শেখে একটা কাঠামোর ভেতর দিয়ে। তারপর আসে দ্বিতীয় ধাপ– ‘আমরা’। এই ‘আমরা’ কোনো বন্ধনকে নয়, বরং একটা সম্মিলিত সত্তাকে নির্দেশ করে। শিশুরা শিখে নেয় কীভাবে ‘আমি’ থেকে ‘আমরা’তে নিজেকে বিলীন করে দিতে হয়। ধীরে-ধীরে ‘আমি’ হয়ে ওঠে এক অপরাধের নাম, এক ধরনের বিপথগামিতা।
পাঠ্যপুস্তকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ থাকে– ‘চেনা পথের বাইরে যেয়ো না, হারিয়ে যাবে।’ শিক্ষার্থীরা প্রথম কয়েক বছরেই শিখে যায়– বিকল্প ভাবনা মানেই অনিয়ম, অনিয়মে জন্মায় অস্থিরতা আর অস্থিরতা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ধীরে-ধীরে তারা এও শিখে যায়, সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থান হলো শ্রোতা হয়ে থাকা আর প্রশ্নহীনভাবে মাথা ঝাঁকানো।
এই একাডেমির সর্বোচ্চ স্বীকৃতির নাম ‘পূর্ণ নির্বিকারতা’। একটা স্বর্ণপদক, সাথে একটা সনদ আর ঠান্ডা একটা মগজ যা আদ্যোপান্ত অনুভূতিহীন। এই মগজ কখনও কাঁদে না, হাসে না, বিস্মিত হয় না, ভালোবাসে না। ‘পূর্ণ নির্বিকারতা’ হলো সেই একাডেমির শিক্ষার্থীদের আরাধ্য এমন এক শিখর যেখানে পৌঁছলে আর কোনো প্রশ্ন থাকে না। আধুনিক বিশ্বের যোগ্য মডেল নাগরিকে রূপান্তর হলেই এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়া যায় আর বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনতে হয় কঠোর প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে। এই পুরস্কার কেবল সফলতার নয়, বরং সবচেয়ে দক্ষ শাসনব্যবস্থার শ্রেষ্ঠ হাতিয়াররূপেও স্বীকৃত।
নিশ্ছিদ্র নিয়মে বাঁধা এমন এক বিশুদ্ধতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় যখন আচমকাই এমন একটা অপদার্থের আগমন ঘটে, তখন তা স্বভাবতই পুরো কাঠামোর ভারসাম্য বিপন্ন করে তোলে। সে-কারণে একাডেমির অধ্যক্ষ বেশ চিন্তায় পড়ে গেলেন। এই অনধিকার প্রবেশ শিক্ষার্থীদের আচরণে স্খলন ঘটাতে পারে, সে-আশঙ্কায় তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলেন। নির্দেশ এলো– প্রত্যেকেই যেন লোকটিকে উপেক্ষা করে, কেউ যেন তার সঙ্গে কোনো কথাবার্তা বা ভাবের আদানপ্রদান না করে। তার বিরুদ্ধে জারি হলো একরকম নিঃশব্দ সামাজিক বয়কট। তবে কেবল ব্যাপারটাকে উপেক্ষাতেই সীমাবদ্ধ রাখা হলো না, তাকে পর্যবেক্ষণেও রাখা হলো– তার চালচলন, কথাবার্তা, কার কাছে সে ঘোরাফেরা করছে,
কী লক্ষ্য তার– এসব নিয়ে নীরব নজরদারি চলতে থাকল। কিন্তু দিন কয়েকেই হাঁপিয়ে উঠল সবাই। লোকটা কোনো কথা তো বলেই না, কারও কাছে তো যায়ই না, কেবল একাডেমিক ভবন ১-এর ডানপাশ দিয়ে বয়ে চলা শান্ত নদীটার ধারের শিরীষ গাছের ছায়ায় ততোধিক শান্ত হয়ে বসে থাকে সে। তবু কেমন অনিয়ন্ত্রিত লাগে। তার এই নিয়মবহির্ভূত উপস্থিতিতে বিরক্তি বাড়তে থাকে। শেষমেশ অধ্যক্ষ নিজেই ঘোষণা করলেন, ‘‘এই ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিসরে এক ‘পাঠ্যবহির্ভূত প্রক্ষেপ।’’ ফলে একটা বিশেষ অধ্যাদেশও জারি হলো, ‘যে-ব্যক্তি শেখেনি তাকে জিজ্ঞেস কোরো না, কারণ তার নিরুত্তরতা একটি বিক্ষোভ। আর বিক্ষোভ শিক্ষাব্যবস্থায় অবৈধ।’
তবু কিছু ছাত্র গোপনে তার কাছে যেত। সে কোনো শিক্ষক ছিল না, ছিল না পদাধিকারী কেউ; ক্ষমতাবান হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না যে নম্বরের প্রত্যাশায় শিক্ষার্থীরা যাবে তার কাছে। তাকে তো কেউ নিয়োগই দেয়নি! সে-কারণে কেউ-কেউ তাকে প্রত্যাখ্যানও করতে পারেনি। তাই তারা শিরীষ গাছের তলায় যাওয়া শুরু করল। সে কিছু বলত না, তবু তারা শুনত তার চুপ করে থাকার মধ্যে বিশেষ অনুরণন, এমন এক অশ্রুতপূর্ব সংগীত যা স্তব্ধতার দেয়াল ধসিয়ে তাদের শেখাত নতুন এক ভাষা। সে কিছু শেখাত না, তবু তারা শিখত– ‘না শেখা’র সম্ভাবনাকে। এই শিক্ষার্থীরা জানত, তারা কোনো উত্তরের খোঁজে নয়, বরং প্রশ্নের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে নেমেছে। তারা ধীরে-ধীরে বুঝে ফেলেছিল, শেখার আরেক নাম ভুলে যাওয়া– সেই ‘চোখ বুজে মেনে চলা’র নিয়মাবলি। কোনো শিক্ষা কিংবা নির্দেশনা না দিয়েই, এমনকি একটা বাক্যও না বলে লোকটা তাদের কাছে হয়ে উঠেছিল এক জীবন্ত আয়না, যেখানে তারা আবার ‘আমরা’ থেকে ‘আমি’ হয়ে উঠছিল। তার চুপ করে থাকাটা হয়ে উঠেছিল অজস্র না-বলা কথার জটলা আর তার উপস্থিতি হয়ে উঠেছিল ভিন্ন ধারার আরেক সিলেবাসের উন্মোচন।
বিষয়টা জানাজানি হয়ে গেল একসময়। ধীরে-ধীরে ছড়িয়ে পড়ল খবর– কিছু ছাত্র নিয়ম ভেঙে সেই নিষ্কর্মা মানুষটার কাছে যাচ্ছে। সে কিছু শেখাচ্ছে না, অথচ শিক্ষার্থীরা শিখে নিচ্ছে। কথা না বললেও অনেক কিছু নাকি শোনা যায় তার কাছ থেকে। এ দেখি মহাবিপদ! নড়েচড়ে বসল পুরো প্রতিষ্ঠান। ঘটনাটির নাম দেওয়া হলো ‘নীরব যোগাযোগ’। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর কমিটি রিপোর্ট পেশ করল, ‘এই নীরব যোগাযোগ প্রতিষ্ঠানের জন্য হুমকিস্বরূপ।’
শিক্ষার্থীদের পথে ফেরাতে ‘ভ্রান্ত অভিভাষণ তত্ত্ব’ নামে নতুন কোর্স চালু হলো। নীরবতা, চোখের ভাষা ইত্যাদির প্রতিকার কীভাবে করা যায় তার পদ্ধতি শেখানোই ছিল এই কোর্সের উদ্দেশ্য। শিক্ষার্থীদের শেখানো হলো– চোখে চোখ রাখা বিপজ্জনক, নীরবতা সন্দেহজনক আর অনুভব মানেই অবাধ্যতা। জানালাবিহীন ঘরে চলতে থাকল প্রশিক্ষণ। প্রতিষ্ঠান ভাবল, সবকিছু আবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। কিন্তু ততদিনে সমস্যার শেকড় অনেক গভীরে পৌঁছে গেছে। সেই অশিক্ষিত মানুষটার নিঃশব্দ উপস্থিতি শিক্ষার্থীদের সুসংহত মগজে একটা সূক্ষ্ম ছিদ্র তৈরি করে ফেলেছে এর মধ্যেই। আর ঠিক সেই ছিদ্রপথ দিয়েই প্রবেশ করেছে ভাবনার বীজ, যদিও তা ভুল ভাবনা। কী ভাবতে হবে তা তারা শিখছিল না, বরং শিখছিল কীভাবে ভাবা যায়– ভুলভাল ভাবনা হলেও। আর এই ভুলভাল ভাবার অধিকারই ছিল একাডেমির চোখে সবচেয়ে বিপজ্জনক। কারণ ভুল ভাবনা মানে প্রশ্ন আর অনিশ্চয়তা যা একবার জন্মালে ইহজগতে আর দমন করা যায় না। এই একটুখানি ফাঁকই প্রতিষ্ঠানের শতাব্দীপ্রাচীন কাঠামোকে কাঁপিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট হয়ে উঠছিল।
পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে জরুরি ভিত্তিতে একটি সভা ডাকা হলো। একাডেমি তার শীতল আর ধাতব নীরবতা ভেঙে হঠাৎ এক অশরীরী আলোড়নের মুখোমুখি হলো যেন। সভাকক্ষে এক ধরনের চাপা উত্তেজনা, উদ্বেগ আর অজানা শঙ্কা নিয়ে নীতিনির্ধারকেরা বসে আছেন। মেজাজ হারিয়ে, সংযম ভেঙে অধ্যক্ষ স্পষ্ট ও কঠিন সুরে বললেন, ‘‘আমাদের এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষার মান ও বিশুদ্ধতার ঐতিহ্য যদি আমরা রক্ষা না করি তবে আমাদের ওপর চেপে বসবে ‘মূর্খের অজ্ঞতা’। এই একাডেমি হয়ে উঠবে চিন্তার শৃঙ্খলার বদলে বিকারগ্রস্তের উন্মাদনার ক্ষেত্র।”
এই ঘোষণার পর প্রশাসনিক মহল থেকে পরবর্তী দিকনির্দেশনা এলো– লোকটিকে আর সহ্য করা যাবে না, তাকে সরিয়ে ফেলতেই হবে। তবে শুধু শারীরিকভাবে অপসারণ নয়– তার অস্তিত্ব, স্মৃতি, এমনকি তার নামটুকুও মুছে ফেলতে হবে একাডেমির সামগ্রিক তথ্যব্যবস্থা থেকে। তাকে দেখানো হলো এক আত্মবিধ্বংসী ব্যক্তিত্ব হিসেবে, যে নিজের পাশাপাশি পরিবেশকেও ধ্বংস করে দেয়। সেই যুক্তিতে তার উপস্থিতি ধরা হলো এমন একটা ভাইরাসের মতো যা একাডেমির কাঠামোতে ঢুকে পড়ে তার নীতিনৈতিকতাকে ধ্বংস করছে প্রতিনিয়ত। তার নাম, পরিচয়, রেজিস্ট্রেশন নম্বর– যেগুলো পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের দ্বারা তৈরি হয়েছিল– সবকিছু নিখুঁতভাবে মুছে ফেলা হলো সমস্ত ডেটাবেজ থেকে, যেন সে কখনোই ছিল না। তার উপস্থিতিকে ‘মায়াজাল’ হিসেবে ঘোষণা করা হলো। যেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী অর্থাৎ গোটা একাডেমি মিলে এক জাদুর ফাঁদে আটকা পড়ে গিয়েছিল– যে-জাদু কেটে এখন তারা মুক্ত।
কিন্তু বিলয়ের পরেও লোকটার উপস্থিতি বিলীন হলো না– কোথায় যেন রেশ রয়ে গেল তার! তার শূন্যতা, তার নীরবতা, তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণার কারণ– এসবই ধীরে-ধীরে পাঠের বাইরের পাঠ হয়ে উঠতে লাগল। বহু ছাত্র এখন ক্লাসে প্রশ্ন করে, ‘‘এই যে ‘কেউ ছিল না’, সে তো আমাদের চিন্তা করার ইচ্ছেটুকু দিয়েছিল, তা-ই না?’’
শিক্ষকেরা চুপ থাকেন। কারণ, সিলেবাসে এর কোনো উত্তর নেই। একাডেমি পড়ল মহাবিপদে। ছাত্রদের ভেতরে যে-ক্ষীণ চিন্তার রেখা অঙ্কিত হচ্ছিল, তাকে আর হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। কেননা, সেটা দিনদিন কেমন যেন ছোঁয়াচে হয়ে উঠছিল। একই রকম প্রশ্ন করছিল করছিল পাশের শিক্ষার্থীও। বলছিল, ‘চিন্তা কেন করা যাবে না?’ সেই নীরব মানুষটার সেই নিঃশব্দ আর ভুল শিক্ষা শিক্ষার্থীদের স্বাধীনভাবে চিন্তা করার উৎসাহ জোগাচ্ছিল ধীরে-ধীরে।
ব্যাপারটাকে ভয়ংকর হুমকি হিসেবে দেখল একাডেমি, তারপর মরিয়া হয়ে গ্রহণ করল সেই সিদ্ধান্ত যা একেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে কর্তৃপক্ষ নেয় না। তারা প্রয়োগ করল তাদের সর্বশেষ অস্ত্র–আবেগ-নিরাময় ডোজ। এটা ছিল শৃঙ্খলা ফেরাতে একাডেমির চূড়ান্ত পদক্ষেপ। এটা এক ধরনের ইনজেকশন; যা মস্তিষ্কের প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রগুলোকে চিরতরে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর প্রভাবে হারিয়ে যায় উত্তেজনা, উদ্বেগ, বিস্ময়, প্রেম, ভয় কিংবা কৌতূহলের মতো মৌলিক অনুভূতিগুলো।
দেওয়া হলো ডোজ। যাক, শান্তি! কর্তৃপক্ষ হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। একাডেমি যেন দীর্ঘ এক দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠল। শৃঙ্খলা ফিরে এলো সব জায়গায়। ক্লাসরুমগুলো নিঃশব্দ, করিডোরে সীমিত চলাফেরা, লাইব্রেরিতে শুধুই সিলেবাসভিত্তিক বই এবং শিক্ষার্থীদের চোখে নেই আর কোনো অনাহুত দীপ্তি। এখন আর কেউ এমন প্রশ্ন করে না যার উত্তর সিলেবাসে নেই।
তবু চলতে ফিরতে হঠাৎ-হঠাৎ দেখা যায়, শিরীষ গাছটার ছায়ায় কেউ একজন এখনও বসে থাকে– অদৃশ্য আর নিস্তব্ধ। নতুন ছাত্রদের কাছে সে-ব্যক্তি এক রহস্যময় সত্তা, যার নাম কেউ জানে না, যার মুখ কেউ চেনে না। তারা শুধু শুনেছে, গাছটির ছায়ায় বসা নিষেধ এবং নিষেধ অমান্য করার শাস্তি সম্পর্কে তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
এখনও কিছু-কিছু ঝিম-মারা দুপুরে, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে একজন-দুজন যায় শিরীষ গাছটার তলায়; যদিও তারাও জানে যে এখানে বসা নিষেধ।
- বিষয় :
- গল্প