বাংলাদেশের একাত্তর
একাত্তরের সশস্ত্র যুদ্ধের বিভিন্ন পরিসর

আফসান চৌধুরী
প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১২:০০
[পর্ব :২]
আমাদের ইতিহাস চর্চায় ইতিহাসের যথাযোগ্য বিশ্নেষণে প্রায়ই ঘাটতি থেকে যায়। কোনো ঘটনা ইতিহাসকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে, সেটা যদি আমরা ধরতে না পারি, আমরা যদি আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিই যে নির্দিষ্ট এক শ্রেণিই হচ্ছে ইতিহাসের প্রধান নায়ক- তাহলে আমরা ইতিহাসকে ঠিকভাবে বলতে পারব না। যে কারণে আমরা শরণার্থীদের কোনো মর্যাদা দেই না। তাদের বিশাল ব্যাপক ভূমিকাটাকে আমরা বুঝতেই তো পারি না, স্বীকার করা তো দূরের কথা। একাত্তরে পাকিস্তানিরা কীরকম ভয়াবহ নির্যাতন করেছে, ভারতে যাওয়া শরণার্থীদের থেকে তার আর কোনো বড় প্রমাণ পৃথিবীতে নেই। সারা পৃথিবীর গণমাধ্যম বাংলাদেশের একাত্তর নিয়ে যা যা কথা বলেছে সেগুলোর মধ্যে কেবল দুইটা বিষয়ই ছিল বড়- একটা হচ্ছে শরণার্থীদের নির্যাতন, আরেকটি হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার। সমস্ত আলোচনা ছিল এ দুটো বিষয় নিয়েই।
কেবল অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধারাই নয়, গ্রামের সাধারণ মানুষও যে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন- আমাদের ইতিহাস চর্চায় তাদের দিকে একটু দৃষ্টি ফেরানো উচিত। একাত্তরে সবার ভূমিকাকে সামগ্রিকভাবে দেখতে না পারলে আমরা আমাদের পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস কোনোদিনই নির্মাণ করতে পারব না।
বাংলাদেশের একাত্তর, যার মাধ্যমে খুবই দ্রুত একটা ভয়াবহ সংকট হিসেবে সারা পৃথিবীর কাছে পরিচিত হতে পেরেছিল, সেটি হলো ভারতে থাকা শরণার্থী। শরণার্থীদের নির্যাতন-শিকার ও কষ্টের কথা সারা পৃথিবীর কাছে পৌঁছে যাবার মাধ্যমেই মূলত এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল পাকিস্তানিরা গণহত্যা ও গণনির্যাতন চালিয়েছে। বিশ্বে পাকিস্তানের যে রাজনৈতিক পরিসরটি ছিল সেটা মুহূর্তেই একেবারে সংকুচিত হয়ে গেল। এটা ঘটেছে এই শরণার্থীদের মাধ্যমেই। সারা পৃথিবীর কাছে তখন তারাই তো পাকিস্তানি নির্যাতনের সবচেয়ে বড় সাক্ষী। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেই খবরাখবর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা এই শরণার্থীদের কোনোদিনই স্বীকৃতি দেই না, বরং তুচ্ছ চোখে দেখি। কেবল অসহায়তার প্রতিরূপ হিসেবে দেখি।
একাত্তরের সশস্ত্র যুদ্ধের পরিসরটিও বিভিন্ন স্তরে ও বাস্তবতায় বিস্তৃত। মুজিবনগর সরকারে বিশেষ করে তাজউদ্দীন আহমদের ওপর ভারতীয়দের যথেষ্ট আস্থা থাকলেও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যেসব বিরোধী পক্ষ বিদ্যমান ছিল, তাদের অস্তিত্ব সেখানে নানামাত্রিক চাপের সৃষ্টি করেছে। এক্ষেত্রে খন্দকার মোশতাক একটি বড় উদাহরণ এবং আরও অনেকে ছিলেন। তরুণ নেতৃত্ব- যেমন শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান এরাও তাজউদ্দীন আহমদকে সহজভাবে নেয়নি। ভারত যেটা করছিল- একদিকে তার প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মিত বাহিনী, তার সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মুজিবনগর সরকারের সম্পর্ক। অন্যদিকে ভারত তো তার জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধটি করছে, জীবনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক অর্জনের দিকে যাচ্ছে। সেখানে সে কেন ঝুঁকি নিতে যাবে? এসব দিক থেকে বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সেস (বিএলফ) বা মুজিব বাহিনী গঠন করা হয়। মুজিব বাহিনী গঠনে ভারতীয়দের উদ্দেশ্য এবং মুজিব বাহিনী যারা গঠন করছেন তাদের উদ্দেশ্য এক ছিল না। ভারত মুজিব ভারত গঠন করেছিল কারণ তারা ভেবেছিল আমাদের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে কিছু মানুষ থাকবে। কিন্তু সেই বাহিনী যে যুদ্ধে খুব বড় ভূমিকা রাখতে পেরেছিল তা না। বড় ভূমিকার চেয়ে বড় বিষয়টি ছিল তাদের উপস্থিতি। বড় ভূমিকাগুলো শেষ পর্যন্ত সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারাই পালন করেছে। এর বাইরে দেশের ভেতরে ছিল বিভিন্ন বাহিনী। কাদেরিয়া বাহিনী, আব্দুল লতিফ বাহিনী, আফসার বাহিনী, হালিম বাহিনী, হেমায়েত বাহিনী, আকবর বাহিনী, ইঞ্জিনিয়ার আবুল হোসেন বাহিনী, বাতেন বাহিনী, কুদ্দস বাহিনী, গফুর বাহিনীর মতো সশস্ত্র পক্ষগুলো। সিলেট অঞ্চলে ছিল জগৎজ্যোতি দাসের দাস পার্টি। এদের বেশিরভাগই ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়নি। এরা নিজেদের তত্ত্বাবধানেই দেশের ভেতরে থেকে সাধ্যমতো যুদ্ধ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল কাদেরিয়া বাহিনী। এটা পাকিস্তানি দলিলপত্রেও দেখা যায়। সমস্ত জায়গাতেই আঞ্চলিকভাবে এমন বহু বাহিনী গড়ে উঠেছিল।
এই সবাইকে নিয়ে যুদ্ধটা যেভাবে এগিয়েছে- শেষ পর্যন্ত সে যুদ্ধের সার্বিক সাফল্য পরিকল্পনা অনুযায়ী আশানুরূপ ছিল না। অন্তত ভারতীয়দের দলিলপত্র থেকে দেখা যায় যুদ্ধের একপর্যায়ে দেখা গেল, তারা যতটা সাফল্য পাওয়া যাবে বলে মনে করেছিল সমগ্র যুদ্ধ থেকে ততটা সফলতা পাওয়া যাচ্ছে না। তাদের অনুমান ছিল এর মাধ্যমেই পাকিস্তানিদের শক্তি অনেকাংশেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এ বিষয়ে তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল তাও নয়। তারা জানত যুদ্ধের এই পর্যায় ও ধরনটা চাপ প্রয়োগ বা বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভালো হবে। এবং তারা জানত যে শেষ পর্যন্ত তাদেরকে নিয়মিত বাহিনী নিয়েই সরাসরি যুদ্ধে নামতে হবে।
ভারত এপ্রিল মাসেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল যে, তারা বাংলাদেশকে সাহায্য তো করবেই এবং প্রয়োজন হলে যুদ্ধে যাবে। আমাকে এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সচিব কিষণ বিহারী লাল বলেছিলেন যে, উনি তখন বাণিজ্য সচিব ছিলেন। উনাকে ইন্দিরা গান্ধী ডেকে পাঠিয়ে বলেছিলেন যে, তুমি যাও গিয়ে ডিফেন্সটা দেখ। এখানে ডিফেন্স মানে সেনাবাহিনীর বিষয় দেখা নয়, এই ডিফেন্স মানে ছিল লজিস্টিকস। অর্থাৎ সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র জোগাড় করে তাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছিল। তাকে ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, প্রস্তুত হও, আমরা ডিসেম্বর মাসে যুদ্ধে যাব।
ভারত কিন্তু বিভিন্নভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানিরা ভেবেছিল যে মুক্তিবাহিনীকে আটকে দিলেই বোধহয় তারা যুদ্ধে জিতে যাবে। তবে হামুদুর রহমান কমিশনে আছে যে, পাকিস্তানিরা বলছে, মুক্তিবাহিনী তো আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে বেশিদিন টিকতে পারবে না। যুদ্ধে জিততে হলে ভারতকে নামতে হবে।
তাছাড়া কে-ফোর্স, জেড-ফোর্স, এস-ফোর্স এই তিনটা ফোর্সও সম্মুখ সমরে ততটা ভালো করতে পারেনি। তারা তো সীমান্ত এলাকার বাইরে আর খুব একটা ভেতরে আসতে পারেনি। সীমান্ত এলাকাতেই তাদের যুদ্ধটা সীমাবদ্ধ ছিল। কিছু কিছু জায়গা অনেকটা ভেতরে ঢুকে পাকিস্তান আর্মিদের মেরে চলে যাচ্ছিল। আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক বাহিনীও আসলে মোটামুটিভাবে গেরিলা যুদ্ধই করছিল। ভারতের নেতৃত্বে যতক্ষণ না যৌথ বাহিনী গঠিত হয়ে দেশের ভেতরে প্রবেশ করেছে, তার আগে ফ্রন্টাল ওয়ার অর্থাৎ সম্মুখ সমর হয়নি। পাকিস্তানি দলিলেও দেখা যায় যে, নিয়াজি সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, সে যেই রণকৌশল নিয়েছে, সেটা দিয়ে মুক্তিবাহিনীকে আটকানো যেতে পারে কিন্তু ভারতকে আটকানো সম্ভব নয়। নিয়াজির এটা বোঝা উচিত ছিল এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুত হওয়া প্রয়োজন ছিল।
যুদ্ধের তৃতীয় পর্যায়টা শুরু হচ্ছে এই ভারত যখন সরাসরি যুদ্ধে প্রবেশ করছে। পাকিস্তানিরাও স্বীকার করছে যে, চীন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে বলে দিয়েছে যে, তোমাদের হয়ে আমরা লড়ব না। গোপন দলিলগুলো পড়লে বিষয়টা আরও পরিস্কার হয়ে যায় যে, বাংলাদেশ হওয়া না হওয়া নিয়ে পৃথিবীর কেউই তার নিজের গায়ের এক ইঞ্চি চামড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে চায়নি। না রাশিয়া, না চায়না, না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে রাশিয়া- অক্টোবর মাসে যখন তারা ভারতের সঙ্গে শান্তিচুক্তিটা করেছে, তখন অনেক বেশি সশস্ত্র সহায়তা এসেছে। তার ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে, শক্তি বেড়েছে। যে কারণে মার্কিনিরা খেপে গেছে। আরেকটি ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের ব্যাপারে রাশিয়া আগ্রহী ছিল কি ছিল না, তার চেয়ে আরেকটি বড় বিষয় হলো, ভারত আগ্রহী ছিল তাদের নিজেদের অবস্থানের উন্নতির কারণেই। এবং এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ভারত এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের সাথে তাদের রাজনৈতিক সমরে নিজেদের অবস্থানকে ঠিক করে নিয়েছে। আর এই সকল শক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে আমরা এগোচ্ছি তখন নভেম্বরের দিকে।
চীনের ব্যাপারে অনেক বেশি চিন্তিত ছিল ভারত। কিন্তু তারা ততটা চিন্তিত ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম নৌবহর নিয়ে। কারণ তারা জানত কেউই এই যুদ্ধে জড়িত হতে চায় না। পাকিস্তান কী করে ভেবেছিল জানি না যে, শেষ পর্যন্ত চীন বা আমেরিকা এ যুদ্ধে জড়িত হবে। পাকিস্তানের নির্বুদ্ধিতার এটাও আরেকটা দিক।
শীতের সময় বরফ যখন পড়া শুরু হলো চীন-ভারত সীমান্ত থেকে তিব্বতি আর্মি যারা সেখানে ভারতের সীমান্ত রক্ষায় নিয়োজিত ছিল, তাদেরকে বিমানযোগে নিয়ে আসা হয় বাংলাদেশে। তার মানে আবহাওয়াগত কারণে চীনের সেনাবাহিনী তখন আর চাইলেও অত সহজে ঢুকতে পারবে না। ভারত তাই এই বরফ পড়ার সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেছিল।
ভারতের চিন্তা ছিল, দুই সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করে ফেলবে। এবং বাস্তবে তাই হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশ করে স্থল ও নদীপথে যেভাবে পেরেছে তারা খুবই দ্রুততার সঙ্গে ঢাকায় পৌঁছে গেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সব ধরনের অবস্থান তখন প্রায় ভেঙে গেছে এবং যে কথাটা লোকে বলে না তা হলো, প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কোনো মনোবলই ছিল না। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ অভিযানের মাত্র তেরো দিনের মাথায় সেই মনোবলহীন সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণে রাজি হয়ে গেল। মূলত একাত্তরের এই শেষ পর্যায়ে এসেই প্রাতিষ্ঠানিক যুদ্ধটা সংঘটিত হয়। এর আগ পর্যন্ত যুদ্ধের ধরনটা ছিল মোটামুটি গেরিলা যুদ্ধের মতোই। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ হয়েছে আর দেশের ভেতরে ঢুকে যুদ্ধ করেছে সিভিলিয়ান বা সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা। আর ছিল ভেতরে অবস্থান করা বিভিন্ন বাহিনী। কয়েকটি বামপন্থি বাহিনী ছিল- এর মধ্যে পাবনার টিপু বিশ্বাস, আব্দুল মতিনদের একটি বাহিনী; বরিশালের পেয়ারা বাগানে ছিল সিরাজ সিকদারের বাহিনী। তারাও স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু আক্রমণ পরিচালনা করেছে। রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, মান্নান ভূঁইয়া প্রমুখের আরেকটি বাহিনী ছিল লৌহজং এলাকায়। ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ না নিয়েই তারা এসব অঞ্চলে যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়া, যশোর অঞ্চলে যে বামপন্থিরা ছিলেন, তারাও কিছু কিছু অঞ্চল রক্ষা করে গেছে। তবে তাদের সঙ্গে অনেক জায়গায় জনগণ ও আওয়ামী লীগের লোকেদের যুদ্ধ হয়েছে বলে উল্লেখ পাওয়া যায়। এ ছাড়া সোভিয়েতপন্থি কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরাও ছিল। এরা কিছু কিছু বড় যুদ্ধও পরিচালনা করেছে। তাদের অনেক লোক শহীদও হয়েছে। কিন্তু মোটামুটিভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক পরিসরটার কথা বলতে গেলে- মুক্তিযুদ্ধের প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক দল ছিল আওয়ামী লীগ, নির্বাচিত দল; প্রাতিষ্ঠানিক সরকার ছিল মুজিবনগর সরকার; সেনাবাহিনী ছিল প্রাতিষ্ঠানিক সেনাবাহিনী, যার প্রধান ছিলেন জেনারেল এম এ জি ওসমানী এবং তার অধীনেই গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে, যুদ্ধ করেছে; যুদ্ধে সমগ্র বাংলাদেশ ১১টি সেক্টরে বিভক্ত ছিল। এ ছাড়া নৌবাহিনীর একটি আলাদা সেক্টর ছিল- যারা অপারেশন জ্যাকপটের মতো খুবই প্রভাবশালী আক্রমণ সংঘটিত করতে সক্ষম হয়েছিল। অপারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে পাকিস্তানি জাহাজসহ মোট ২৬টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিল সুইসাইডাল স্কোয়াডের নৌ কমান্ডোরা। যেটি মুক্তিযুদ্ধে একটি বড় রকমের অবদান রাখতে পেরেছিল। যা পাকিস্তানিদের সাংঘাতিক রকমের ধাক্কা দিতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া ছিল বিমানবাহিনী- যারা অপারেশন কিলো ফ্লাইটের অধিনে বেশকিছু হামলা পরিচালনা করে এবং পাকিস্তানি বাহিনীর ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হয়েছিল।
এই ছিল মোটামুটি একাত্তরের সশস্ত্র যুদ্ধের বড় পরিসরটি। এর বাইরে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নানারকম ছোটখাটো সশস্ত্র অংশগ্রহণও ছিল। আর বিশেষ করে জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আমাকে যে কথাটা বলেছিলেন, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি তা থেকে আরেকটু পরিস্কার হয়। তিনি বলেছিলেন, 'বাংলাদেশের কৃষকসমাজ যদি আমাদেরকে সম্মতি না দিত আমাদের কোনো ক্ষমতা ছিল না দেশের ভেতরে প্রবশে করা, যুদ্ধে জেতা তো দূরের কথা।' আমি মনে করি, এই একটা বাক্যে প্রাতিষ্ঠানিক বাহিনীর একজন সদস্য একাত্তরের সশস্ত্র অংশটাকে প্রকাশ করতে পেরেছে। আসলে যুদ্ধটা কেউ একা করে না। আর বাংলাদেশের একাত্তরের সশস্ত্র যুদ্ধ সাধারণ মানুষের সম্মতির ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিল। এটা কেউ গ্রহণ না করুক বা না মানুক, অন্তত ভাবনাটা প্রয়োজন। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসচর্চায় অনেক সময় দেখা যায় যে যুদ্ধে সাধারণ মানুষ ছিলই না। কিন্তু একাত্তরের সশস্ত্র যুদ্ধের পরিসরটি প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল পক্ষ নিয়েই বিস্তৃত।
- বিষয় :
- বাংলাদেশের একাত্তর
- আফসান চৌধুরী