আপন দর্পণ
'প্রকৃতপক্ষে আর্ট বোঝার কিছু নেই'

মনিরুল ইসলাম
মনিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০২২ | ১২:০০
জীবনের কোন ঘটনা আপনার শিল্প চর্চাকে প্রভাবিত করেছে?
ষাট বছর আগে আসলে শিল্পী হবো- সেটা ভাবার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে হাতের কাজ জানতাম। সেটাই ধীরে ধীরে উন্নত হয়ে ছবি আঁকায় রূপ নিয়েছে। তখন আসলে জলরং কী? তেলরং কী? এসব কিছুই চিনতাম না। মাঝেমধ্যে সিনেমার পোস্টারগুলো দেখতাম, ব্যানার দেখতাম। তখনকার সময় বুঝতামই না- ছবি কী, কেন আঁকব বা প্রকাশ হয় কীভাবে? শুধু ভালো লাগত, তাই আঁকতাম।
প্রথম চিত্রকর্মের কোনো স্মৃতি আছে?
আমি যখন পঞ্চম কি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, তখন আসলে ছবি কপি করতাম। রবীন্দ্রনাথ, ইকবাল- এসব বড় শিল্পীদের। তখন শেখার কোনো প্রক্রিয়া ছিল না। কোনো বইও ছিল না। ছবি এঁকে কী হয়, সেটাও জানার উপায় ছিল না। কোনো পাবলিকেশনও ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারে এসব আসলে অকল্পনীয় ছিল। তখন পরিবার থেকেও বলত, ছবি এঁকে করবিটা কী? তখনকার দিনের নির্দিষ্ট কোনো ছবির কথা মনে নেই।
বাংলাদেশে চিত্রশিল্প চর্চার ব্যাপারে কিছু বলুন-
আমি তো বহু বছর স্পেনে ছিলাম, প্রায় ৪৭ বছর। তিন মাসের জন্য এসে এখন সাত বছর হয়ে গেছে- আর যাওয়া হয়নি।
ছবিটা আসলে কী? একটা সময়কে ধরে রাখা। এর বাইরে আর কিছুই না। জয়নুল আবেদিন কলকাতার দুর্ভিক্ষ নিয়ে ছবি এঁকেছিলেন। তার ছবির মধ্য দিয়ে সে সময়টা আটকে আছে, তবে তিনি কিন্তু পরে আর একই ছবি আঁকেন নাই। জাদুঘরে দুর্ভিক্ষের ছবি সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
বাংলাদেশ যেহেতু মুসলিম দেশ, অনেক আগে থেকে শুনেছি ছবি আঁকা যাবে না। মানুষ আঁকা যাবে না, শরীর আঁকা যাবে না। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে আজকের দিনে ছবি আঁকার বিষয়টি অনেক উন্নত হয়েছে। আশেপাশের দেশগুলোতেও চর্চা হচ্ছে। বাংলাদেশ ভীষণ ঐতিহ্যপূর্ণ দেশ- সেই গুপ্তযুগ থেকেই। বাংলাদেশের শিল্পীরাও অনেক সাহসী। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শিল্পীরা অনেক স্বাধীনতা পায়। তবে আর্টের সাথে অর্থের একটা ব্যাপার যুক্ত। ৫০০ বছর আগে রাজারা আর্ট করত তাদের কিংবা তাদের পরিবারের, এখন ৫০০ বছর পর আজকে সেটি হাতবদল হয়ে শিল্পীরা করছে। এটা অবশ্যই পজিটিভ। যেভাবে এখন আর্ট নিয়ে চর্চা হচ্ছে- এর মান আরও বাড়বে। বাংলাদেশ অগ্রগতির দিকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের আর্টটা কেবল ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এটাকে ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেওয়া দরকার। পরিকল্পিতভাবে প্রদর্শনীর মাধ্যমে আর্ট বায়ার বা ব্লগারদের চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা যেতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেভাবে হয়ে থাকে।
এমন কোনো চিত্রকর্ম আছে, যেটা আপনাকে বিশেষভাবে আলোড়িত করে?
নির্দিষ্ট কোনো চিত্রকর্ম নেই। সেরা কোনো ছবি নেই। বিষয়টা আসলে অন্যরকম। অনেক সাধারণ মানুষের প্রশ্ন থাকে- ভাই কী আঁকলেন, কিছুই তো বুঝি না। তাদেরকে কী বলব? আসলে আমি নিজেও বুঝি না। প্রকৃতপক্ষে আর্ট বোঝারও কিছু নেই। প্রতিটা ছবির একটা অদৃশ্য মেসেজ থাকে। সেরা আর্ট বাছাই করাটাও অনেক কঠিন। ১০ জন শিল্পী ১০ ধরনের ছবি আঁকে। কিন্তু কী করে বলব, কারটা সবচেয়ে সুন্দর। এটা বলা আসলে অসম্ভব। ছবির ক্ষেত্রে জাজমেন্টটা পুরোপুরি সঠিক হয় না।
ব্যক্তিজীবনে এমন কোনো সীমাবদ্ধতা আছে, যা আপনাকে কষ্ট দেয় বা ভাবায়?
সীমাবদ্ধতা আসলে আমরা নিজেরা তৈরি করি। তবে ব্যথা আছে। আমরা আর্টিস্টদের ক্ষেত্রে অনেক সময় যেটা হয়, সেটা হলো যেমন ছবি যেভাবে আঁকতে চাই কোনো কারণে তেমনটি না হলে সব থেকে বেশি হতাশায় ভুগি। কেন হচ্ছে না, এটা ভেবে বিষণ্ণতা আসে। হতাশার মতো একটা বাধা সব সময় থাকে। এটা আসলে পজিটিভ, আবার নেগেটিভও। কারণ হতাশা না এলে সফলতাও আসে না। তাই এটাকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে নেওয়া উচিত।
ষাট বছর আগে আসলে শিল্পী হবো- সেটা ভাবার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে হাতের কাজ জানতাম। সেটাই ধীরে ধীরে উন্নত হয়ে ছবি আঁকায় রূপ নিয়েছে। তখন আসলে জলরং কী? তেলরং কী? এসব কিছুই চিনতাম না। মাঝেমধ্যে সিনেমার পোস্টারগুলো দেখতাম, ব্যানার দেখতাম। তখনকার সময় বুঝতামই না- ছবি কী, কেন আঁকব বা প্রকাশ হয় কীভাবে? শুধু ভালো লাগত, তাই আঁকতাম।
প্রথম চিত্রকর্মের কোনো স্মৃতি আছে?
আমি যখন পঞ্চম কি ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, তখন আসলে ছবি কপি করতাম। রবীন্দ্রনাথ, ইকবাল- এসব বড় শিল্পীদের। তখন শেখার কোনো প্রক্রিয়া ছিল না। কোনো বইও ছিল না। ছবি এঁকে কী হয়, সেটাও জানার উপায় ছিল না। কোনো পাবলিকেশনও ছিল না। মধ্যবিত্ত পরিবারে এসব আসলে অকল্পনীয় ছিল। তখন পরিবার থেকেও বলত, ছবি এঁকে করবিটা কী? তখনকার দিনের নির্দিষ্ট কোনো ছবির কথা মনে নেই।
বাংলাদেশে চিত্রশিল্প চর্চার ব্যাপারে কিছু বলুন-
আমি তো বহু বছর স্পেনে ছিলাম, প্রায় ৪৭ বছর। তিন মাসের জন্য এসে এখন সাত বছর হয়ে গেছে- আর যাওয়া হয়নি।
ছবিটা আসলে কী? একটা সময়কে ধরে রাখা। এর বাইরে আর কিছুই না। জয়নুল আবেদিন কলকাতার দুর্ভিক্ষ নিয়ে ছবি এঁকেছিলেন। তার ছবির মধ্য দিয়ে সে সময়টা আটকে আছে, তবে তিনি কিন্তু পরে আর একই ছবি আঁকেন নাই। জাদুঘরে দুর্ভিক্ষের ছবি সংরক্ষণ করে রাখা আছে।
বাংলাদেশ যেহেতু মুসলিম দেশ, অনেক আগে থেকে শুনেছি ছবি আঁকা যাবে না। মানুষ আঁকা যাবে না, শরীর আঁকা যাবে না। কিন্তু এই পর্যায়ে এসে আজকের দিনে ছবি আঁকার বিষয়টি অনেক উন্নত হয়েছে। আশেপাশের দেশগুলোতেও চর্চা হচ্ছে। বাংলাদেশ ভীষণ ঐতিহ্যপূর্ণ দেশ- সেই গুপ্তযুগ থেকেই। বাংলাদেশের শিল্পীরাও অনেক সাহসী। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের শিল্পীরা অনেক স্বাধীনতা পায়। তবে আর্টের সাথে অর্থের একটা ব্যাপার যুক্ত। ৫০০ বছর আগে রাজারা আর্ট করত তাদের কিংবা তাদের পরিবারের, এখন ৫০০ বছর পর আজকে সেটি হাতবদল হয়ে শিল্পীরা করছে। এটা অবশ্যই পজিটিভ। যেভাবে এখন আর্ট নিয়ে চর্চা হচ্ছে- এর মান আরও বাড়বে। বাংলাদেশ অগ্রগতির দিকেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ আমাদের আর্টটা কেবল ঢাকাতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। এটাকে ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের নেওয়া দরকার। পরিকল্পিতভাবে প্রদর্শনীর মাধ্যমে আর্ট বায়ার বা ব্লগারদের চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা যেতে পারে। ইউরোপীয় দেশগুলোতে যেভাবে হয়ে থাকে।
এমন কোনো চিত্রকর্ম আছে, যেটা আপনাকে বিশেষভাবে আলোড়িত করে?
নির্দিষ্ট কোনো চিত্রকর্ম নেই। সেরা কোনো ছবি নেই। বিষয়টা আসলে অন্যরকম। অনেক সাধারণ মানুষের প্রশ্ন থাকে- ভাই কী আঁকলেন, কিছুই তো বুঝি না। তাদেরকে কী বলব? আসলে আমি নিজেও বুঝি না। প্রকৃতপক্ষে আর্ট বোঝারও কিছু নেই। প্রতিটা ছবির একটা অদৃশ্য মেসেজ থাকে। সেরা আর্ট বাছাই করাটাও অনেক কঠিন। ১০ জন শিল্পী ১০ ধরনের ছবি আঁকে। কিন্তু কী করে বলব, কারটা সবচেয়ে সুন্দর। এটা বলা আসলে অসম্ভব। ছবির ক্ষেত্রে জাজমেন্টটা পুরোপুরি সঠিক হয় না।
ব্যক্তিজীবনে এমন কোনো সীমাবদ্ধতা আছে, যা আপনাকে কষ্ট দেয় বা ভাবায়?
সীমাবদ্ধতা আসলে আমরা নিজেরা তৈরি করি। তবে ব্যথা আছে। আমরা আর্টিস্টদের ক্ষেত্রে অনেক সময় যেটা হয়, সেটা হলো যেমন ছবি যেভাবে আঁকতে চাই কোনো কারণে তেমনটি না হলে সব থেকে বেশি হতাশায় ভুগি। কেন হচ্ছে না, এটা ভেবে বিষণ্ণতা আসে। হতাশার মতো একটা বাধা সব সময় থাকে। এটা আসলে পজিটিভ, আবার নেগেটিভও। কারণ হতাশা না এলে সফলতাও আসে না। তাই এটাকে অবশ্যই ইতিবাচকভাবে নেওয়া উচিত।
- বিষয় :
- মনিরুল ইসলাম