পলিথিন নিষিদ্ধকরণই যথেষ্ট নয়

.
মাহজাবিন আলমগীর
প্রকাশ: ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ০০:০১
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার দীর্ঘদিনের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কাঁচাবাজার কিংবা মুদি দোকান থেকে পলিব্যাগের যে বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে, তা আমাদের জীবনযাপনকে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে, খুব সহজেই তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় নেই।
অন্তর্বর্তী সরকার পরিবেশের ওপর ভয়াবহ দূষণ বিস্তারকারী পলিথিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এটি খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। গত ১ নভেম্বর থেকে দেশের কাঁচাবাজার ও বিভিন্ন সুপারশপে পলিথিন ব্যাগ ও পলিপ্রোপাইন দিয়ে তৈরি ব্যাগ ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে বাস্তবে সুপারশপ ছাড়া এ নিষেধাজ্ঞা অন্যত্র কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে, পলিথিন বায়ো-ডিগ্রেডেবল অর্থাৎ পচনশীল দ্রব্য নয়। পাঁচশ বছরেরও বেশি সময় ধরে পৃথিবীতে টিকে থাকতে সক্ষম, যা ভেঙে ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে মানবদেহে ঢুকে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করার ক্ষমতা রাখে। সারাবিশ্বে প্লাস্টিকের বিশাল অংশ বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হয়, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একবার পরিবেশের ওপর সবচেয়ে ক্ষতিকারক ২০টি রাসায়নিকের তালিকা তৈরি করেছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। তার মধ্যে সর্বোচ্চ ক্ষতিকর প্রথম পাঁচটি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিক তৈরির কারখানাগুলোতে। ফলে মাটি, পানিদূষণ ছাড়াও প্লাস্টিক বা পলিব্যাগে প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে ব্যাপক খাদ্যদূষণের আশঙ্কা রয়েছে। প্লাস্টিক প্যাকেটজাত খাদ্যদ্রব্যে প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত দূষণ ঘটে থাকে, মানবদেহে যার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে।
আমরা ব্যবহারের পর পলিব্যাগগুলো যত্রতত্র ফেলে দিই। এই ফেলে দেওয়া পলিব্যাগগুলো বৃষ্টির পানিতে ভেসে অনেক সময় আশপাশের নর্দমা, খাল ও জলাশয়ে পড়ে সেখানকার পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত করে। এগুলো আমাদের নদীদূষণেরও প্রত্যক্ষ অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে দিনের পর দিন। এর প্রভাব এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে, ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর নিচে তিন থেকে চার স্তরের পলিব্যাগের আস্তরণ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এ কারণে নদীতে ড্রেজিং করা যাচ্ছে না। আর ড্রেজিং করা না হলে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ আসবে না। পলিব্যাগের মতো প্লাস্টিকের বোতল আর পাউচগুলোও ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলা হয়, যা নদী-খালে পড়ে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ একইভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেখানে বসবাস করা মাছ কিংবা অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে জমে থাকা এসব বর্জ্যের কারণে।
পলিব্যাগের এই যথেচ্ছ অপব্যবহারের ফলে আমরা পরিবেশকে যে কতটা বিষিয়ে তুলছি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সংকটাপন্ন পরিবেশের মুখোমুখি হতে হবে, যদি এখন থেকেই যথেষ্ট সচেতন না হই। পলিব্যাগের যথেচ্ছ অপব্যবহার বন্ধে কেবল সরকারি নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয়; শক্ত হাতে এর বাস্তবায়নও জরুরি।
nমাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা, কলাম লেখক
মোহাম্মদপুর, ঢাকা
- বিষয় :
- পলিথিন