ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

অতীতের গাড়িতে আধুনিক সংস্কার

অতীতের গাড়িতে আধুনিক সংস্কার

হিল্লোল চৌধুরী

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪ | ০৮:২৯

বৈদ্যুতিকশক্তিচালিত গাড়ি কার্বন নির্গমন কমাতে সাহায্য করে। তার জন্য চাই চার্জিংয়ের অবকাঠামো। কলম্বিয়ায় ভিন্টেজ বা পুরোনো মডেলের ক্ল্যাসিক গাড়িতে নতুন ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বসিয়ে কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন ঘটছে। গোটা দেশে জ্বালানির ক্ষেত্রে তা মৌলিক পরিবর্তনের জানান দিচ্ছে। 
১৯৫২ সালে তৈরি ভক্সওয়াগন কোম্পানির কোনো গাড়ি বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন না করে এখন কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটার পথে ঘুরছে। বাইরের খোলস খাঁটি হলেও ভেতরের ইঞ্জিনটি বৈদ্যুতিক শক্তিতে চলে। ভিনটেজ গাড়ির অনুরাগী ও ‘এভকো’ কোম্পানির অন্যতম কর্ণধার  কার্লোস আন্দ্রেস গার্সিয়া বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যতেও ভিন্টেজ গাড়ি দেখে আনন্দ পেতে চাই। কিন্তু পরিবেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কম্বাশন ইঞ্জিন ব্যবহার মোটেই দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় হতে পারে না। আমরা আরও ভালোভাবে বাঁচতে চাই।’ প্রায় ৭ হাজার ৭০০ ইউরোর বিনিময়ে এভকো ভিন্টেজ গাড়িতে ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বসায়।
বেশির ভাগ মালিকই তাদের পুরোনো ক্ল্যাসিক গাড়ির ভালো যত্ন নেন। সে কারণে ইলেকট্রিক ইঞ্জিনে রূপান্তরের জন্য সেগুলো খুবই উপযুক্ত। আন্দ্রেস বলেন, ‘আমরা গাড়ির ইঞ্জিন মাউন্ট, সব প্রযুক্তি ও জ্যামিতি কাজে লাগিয়েছি। তাই ইঞ্জিন বদলানোর পরও সেটির আচরণ একই রকম থাকে।’
বর্তমান কাঠামোর মধ্যেই সব ঢোকানো এবং নতুন করে ইঞ্জিন বসানোর পরও সবকিছু ঠিকমতো চালু রাখাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডানিয়েল ওনার্দো সান্ডোভাল নিজের কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত। তিনি মনে করেন, ‘প্রতিটি গাড়ি নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে। তবে সব ধরনের গাড়িতেই রূপান্তর ঘটানো সম্ভব। আমরা পাওয়ার ট্রান্সমিশন আদর্শ রাখার চেষ্টা করি। সেই সঙ্গে গাড়ির বাইরের নান্দনিক ও মৌলিক রূপ অক্ষত রেখেই কার্যক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করি।’
পুরোনো মডেলে যে নতুন প্রযুক্তি যোগ করা হয়, তার ফলে গাড়ির মালিক আধুনিক গাড়ির অনেক সুবিধা পান। আন্দ্রেস জানান, তারা যে ব্যাটারি ব্যবহার করেন, সেগুলো ৩ হাজার ৬০০ বার চার্জ করা সম্ভব। অর্থাৎ কোনো গাড়ির রেঞ্জ ২০০ কিলোমিটার হলে ব্যাটারির আয়ু হয় সাত লাখ কিলোমিটার অথবা ১২ থেকে ১৫ বছর তা টিকে থাকতে পারে।
ইলেকট্রিক ইঞ্জিন কালো ধোঁয়া নির্গমন ও বিকট শব্দ দূর করে; যা যানজট ও শব্দদূষণে জর্জরিত শহরের জন্য বিশাল উপকারী। সম্প্রতি কলম্বিয়ায় ইলেকট্রিক ও হাইব্রিড গাড়ির অনুমোদন বেড়ে চললেও দেশজুড়ে ইলেকট্রিক যান চালানোর অবকাঠামো এখনও সেভাবে গড়ে ওঠেনি। উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ ওমর ওরোস্তেগুই বলেন, ‘বিশেষ করে ব্যক্তিগত মালিকানার ইলেকট্রিক গাড়ির ক্ষেত্রে সব ভবনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নেই। ফলে এমন গাড়ি সম্পর্কে উৎসাহ জাগাতে সময় লাগছে। তবে গোটা কলম্বিয়া বা রাজধানী বোগোটা জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের পথে এগোচ্ছে। বোগোটায় তার চিহ্নও দেখা যাচ্ছে। অনেক বাস ইতোমধ্যে বিদ্যুতে চলছে। এমন উদ্যোগ বাতাসের মান উন্নতির ক্ষেত্রে অবদান রাখছে।’
বোগোটায় প্রায় ৮০ লাখ মানুষের জন্য বড়জোর ৪০টি চার্জিং স্টেশন রয়েছে। কার্লোস আন্দ্রেস বলেন, ‘একটিমাত্র ইলেকট্রিক গাড়ি তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। কিন্তু একটির বদলে ৫০০ বা এক হাজার গাড়ি রাস্তায় নামলে অবশ্যই আমাদের শহরগুলোর জীবনযাত্রার মানের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’ v

আরও পড়ুন

×