টেলিভিশনের বিবর্তন

.
হিল্লোল চৌধুরী
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪ | ২৩:৪০ | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১২:১৪
টেলিভিশন মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর প্রচার ও প্রসার সর্বব্যাপী। শিক্ষা, বিনোদন, সংবাদ সবকিছুতেই সারাবিশ্বকে একসূত্রে জুড়ে দিয়েছে টেলিভিশন। শিশুদের কার্টুন থেকে শুরু করে বয়স্কদের জন্য সংবাদ বা সিনেমা সব মিলিয়ে টেলিভিশন একটি পরিবারের কেন্দ্রবিন্দু।
টেলিভিশন শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘টেলি’ অর্থ দূরত্ব আর লাতিন শব্দ ‘ভিশন’ অর্থ দেখা। টেলিভিশনে একই সঙ্গে ছবি দেখা ও শব্দ শোনা যায়। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ ২১ নভেম্বরকে বিশ্ব টেলিভিশন দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ওই বছরের ২১ নভেম্বর বিশ্ব টেলিভিশন ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন থেকে দিবসটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কার করেন। ১৯২৮ সালে জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি তিন ইঞ্চি পর্দার প্রথম যান্ত্রিক টেলিভিশন জনসমক্ষে প্রদর্শন করে। এই টিভির নামকরণ হয় ‘অক্টাগন টেলিভিশন’। পরে ইংল্যান্ডে তৈরি হয় বেয়ার্ড টিভি। এই টিভি প্রথম বেতারের মাধ্যমে চলমান চিত্র প্রদর্শন করে।
টেলিভিশন আবিষ্কারের পর রুশ বংশোদ্ভূত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবার্গের কৃতিত্বে ১৯৩৬ সালে প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে বিবিসি। বাণিজ্যিকভাবে টেলিভিশন চালু হয় ১৯৪০ সালে। ১৯৩৬ সালে ‘ইমিভিসর’ নামে মাত্র ১০ সেট ফ্রেঞ্চ টিভি তৈরি হয়েছিল। আট ইঞ্চি পর্দার ওই টিভিতে ছবি দেখতে ম্যাগনিফাইং লেন্স ব্যবহার করতে হতো।
টেলিভিশনের মূল ধারণা হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। মূলত তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় টেলিভিশনের আউটপুট। টিভি ক্যামেরা– যার কাজ হচ্ছে শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করা, টিভি ট্রান্সমিটার– যার কাজ হচ্ছে এই সংকেতকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং টিভি সেট (রিসিভার)– যার কাজ হচ্ছে এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আগের ছবি ও শব্দে রূপান্তর করা।
সাধারণত ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়– স্থিরচিত্র ও চলচ্চিত্র। স্থিরচিত্রের জন্য সাধারণ ক্যামেরা ও চলচ্চিত্রের জন্য মুভি বা ভিডিও ক্যামেরার ব্যবহার হয়। প্রকৃতপক্ষে অনেক স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয় চলচ্চিত্র। ভিডিও ক্যামেরা দ্রুতগতিতে পরপর অনেক স্থিরচিত্র গ্রহণ করে। এ ছবিগুলোকে যখন একই গতিতে পরপর প্রদর্শন করা হয় তখন আমাদের চোখে এগুলো চলচ্চিত্র বলে মনে করে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশনের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সূচিত হয়। ১৯৪৮ সালে বাজারে আসে সাত ইঞ্চি পর্দার টিভি মটোরোলার ‘গোল্ডেন ভিউ’। এই টিভি ছিল তৎকালীন সময়ের সাশ্রয়ী ও সেরা টিভি। ১৯৪৯ সালে আসে নতুন বৃত্তাকার টিভি পার্থোল। এর ১২টি চ্যানেল ধরার ক্ষমতা ছিল। ১৯৫০ সালে বাজারে আসে প্রথম রিমোটযুক্ত টিভি। ১৯৫৩ সালে জাপানি কোম্পানি শার্প কাঠের ফ্রেমে ১৪ ইঞ্চির টেলিভিশন বাজারজাত করে, যা বেশ ব্যয়বহুল ছিল। পঞ্চাশের দশকে টেলিভিশন গণমাধ্যমের ভূমিকায় উঠে আসে। বাংলাদেশ টেলিভিশন আসে ১৯৬৪ সালে। ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর সাদা-কালো সম্প্রচার শুরু করে। ১৯৮০ থেকে শুরু হয় রঙিন সম্প্রচার।
প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে টিভির ছবির মান অনেক উন্নত হয়েছে, যা চোখের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় না। ২০১২ সালে প্রথম স্মার্ট টিভির সূচনা হয়। স্যামসাং এই যাত্রা শুরু করে। স্মার্টটিভিতে ইন্টারনেট ও নানা অ্যাপ সংযুক্ত করা হয়। ইন্টারনেটভিত্তিক এ টিভিগুলোকে বলা হয় ‘আইপিটিভি’। এর মাধ্যমে ঘরে বসে কেউ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে।